ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

গোধূলিতে পৌঁছে যাওয়া মেসি কি শুনছেন?

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
গোধূলিতে পৌঁছে যাওয়া মেসি কি শুনছেন?

স্মৃতির প্রহর মনের দরজায় কড়া নাড়ছে বারবার। তাতে দুঃখই জমা বেশি।

গল্প তৈরি হয় আড্ডায়, কথায়, খেলার মাঠেও। লিওনেল মেসির খণ্ডে খণ্ডে জমে আছে কেবল বিষণ্নতা। হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণায় পুড়ে ছাই হওয়ার স্মৃতি। মারাকানাই সবচেয়ে উজ্জ্বল।

ব্রাজিল ফুটবলের দেশ, মানুষ বেঁচে থাকে খেলাটায়। অথচ সেখানেই ফুটবল রাজপুত্রের হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়েছিল। অবশ্য, ট্র্যাজেডির জন্য এমন জায়গাই বোধ হয় যুৎসই হতো! শুধু দুঃখ-কষ্টে তো আর ট্র্যাজেডি হয় না। বাংলা সাহিত্যে ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা এমন, ‘দৈব শক্তি বা ভাগ্য অথবা চরিত্রের ক্রুটিতে করুণ কাহিনী। ’

লিওনেল মেসির জন্য দায়টা কীসের? ভাগ্য? চরিত্রের ক্রুটি? নাকি মারিও গোৎজের? উত্তর জানা দুষ্কর। গনসালো হিগুয়েন মিস না করলে, মেসি যদি জাদুকরী কিছু করে ফেলতে পারতেন সেদিন, রোমেরো যদি আটকে দিতেন গোৎজে অথবা দি মারিয়া থাকতেন...এমন কত আফসোসই তো জমা হয় হৃদয়ে।

অল্প বয়সের কাড়িকুড়িতে প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর দিন ফুরিয়ে গেছে আগেই। তবুও তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেছেন নতুন করে। কখনো রক্ষণ ভেদ করে দেওয়া পাসে, কখনো ‘আউট অব নোহোয়ার’ গোলে।

অর্জনগুলো সব নিজের করে নিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ঘরোয়া কোন ট্রফি জেতেননি? ব্যক্তিগত সাফল্যে কোথায় ছুয়ে ফেলেননি আকাশ? তবুও যন্ত্রণার রাত কেটেছে তার অথবা নির্ঘুম। একটা সোনালি ট্রফির আফসোসের দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙেছে কত।

‘বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে মেসি’ গুগলে সার্চ করলে হৃদয় ভাঙার ব্যথাই বোধ হয় বেশি নাড়া দেয় সমর্থকদের। বোকা বাক্সের জন্য একটা ফ্রেম জমা আছে ওখানটায়। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন লিওনেল, কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না যেন। কয়েক হাত দূরত্বে বিশ্বকাপ ট্রফি অথচ ছুঁয়ে দেখতে পারছেন না বিশ্বসেরা ফুটবলার!

মারাকানায় তিনি কাঁদেন। ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার লেন্স খুঁজে পায় একটা মুখ। চোখ ছলছল করা চেহারা। একটা ছবি বন্দি করেন তিনি। ছবিটা আটকে থাকে-ট্র্যাজেডি? তার বাস্তব উদাহরণ হয়ে। নিয়তি বোধ হয় একেই বলে।

১১৪ মিনিটে মারিও গোৎজের গোলের দুঃস্বপ্নের পরও বারবার আঘাত এসেছে। একটা সময় ছেড়ে দিতে চেয়েছেন ফুটবল। ফিরে এসেছেন, বিধাতা তার হাত তুলে দিয়েছে আন্তর্জাতিক শিরোপা। আরেকবার আশা জাগিয়েছে হৃদয়ে।

সতীর্থরা এখন অবলীলায় বলে ফেলেন, ‘মেসির জন্য যুদ্ধে যেতে পারি। ’ তাকে স্পর্শ করলে মাঠেই ঘটিয়ে ফেলেন লঙ্কাকাণ্ড। বয়স ৩৫ হয়ে গেছে। খেলতে নামবেন ‘সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ। ’ গোধুলি লগ্নে তার চাওয়া কী? নিজেই বলেন সংবাদ সম্মেলনে, ‘আমার, আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেওয়া। ’

মেসি কি পারবেন? উত্তর জমা নিয়তির কাছে। ট্র্যাজেডিই তার বেশি পছন্দ কি না! সময়ের রেলগাড়িতে চড়ে পৃথিবী বদলে যাবে, মানুষ কিংবা প্রজন্মও। কে জানে, লিওনেল মেসি সেখানে ‘সর্বকালের সেরাদের কাতারে’ থাকবেন কি না।

তবুও জাদুকরী ড্রিবলিং, রক্ষণচেরা পাস, ঘুম ভাঙানো সব গোল, সতীর্থ-দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়া অথবা উল্টোটা জমা থাকবে ইতিহাসে। অন্তত লিওনেল মেসি থাকবেন তার ভক্তদের হৃদয়ে। সঙ্গে দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সঙ্গে একটা বিশ্বকাপ থাকলে কিন্তু মন্দ হয় না...গোধূলিতে পৌঁছে যাওয়া মেসি, আপনি কি শুনছেন? রংধনু নয়, আপনি বিশ্বকাপ হাতে একটা ছবি দেখান। ভক্তদের জন্য না হলে অন্তত নিজের জন্য!

বাংলাদেশ সময় : ১১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২

এমএইচবি/এএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।