ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়দের ঘন ঘন থুতু ফেলার দৃশ্য একেবারেই সাধারণ ব্যাপার। তবে এই আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক অভ্যাসটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যার গভীরে রয়েছে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, খেলার সংস্কৃতি এবং এমনকি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও।
সম্প্রতি ‘দ্য অ্যাথলেটিক’-এর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অনেক ফুটবলারই বিব্রতবোধ করেছেন, তবে লেটন ওরিয়েন্টের উইঙ্গার জর্ডান গ্রাহাম এবং সাবেক প্রিমিয়ার লিগের মিডফিল্ডার ডেভিড প্রুটন বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
জর্ডান গ্রাহাম জানান যে তিনি প্রায়শই খেয়াল করেন না যে তিনি থুতু ফেলছেন। তার মতে, এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো ‘পরিবেশের প্রভাব’। তিনি বলেন, ‘আপনি যখন ফুটবলকে একটি পরিবারের মতো দেখেন এবং আপনার আইডলরা এটি করছেন, তখন আপনিও ফুটবল খেলতে গিয়ে একই কাজ করেন। এরপর দেখা যায় অনূর্ধ্ব-১৩ এর বাচ্চারাও এটি করছে। তাই যখন আপনি প্রতিদিন এটি দেখেন, তখন এটি খেলোয়াড়দের কাছে স্বাভাবিক বিষয়ের মতো হয়ে যায় এবং এই কারণেই এটি এত দিন ধরে ফুটবলে রয়ে গেছে। ’
ডেভিড প্রুটন, যিনি নটিংহাম ফরেস্ট, সাউদাম্পটন এবং লিডস ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের হয়ে ৪৫০টিরও বেশি পেশাদার ম্যাচ খেলেছেন, মনে করেন এটি একটি ‘ডিফল্ট’ আচরণ। তার মতে, ‘এটি অনেকটা এমন- বিরতি পেলাম, চট করে নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিই মোজা, শর্টস, জার্সি... মুখ। সেখানে এই ধরনের একটি প্রবণতা আছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘খেলার বাইরে রাস্তায় কেউ থুতু ফেললে যেমন অবাক হতে হয়, ফুটবলের ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। অনেক কিছু যা ফুটবলে গ্রহণযোগ্য, তা জীবনের অন্য ক্ষেত্রে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। ’
নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরা ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, ব্যায়াম করার ফলে লালার ঘনত্ব সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে, যা সম্ভবত ‘এমইউসিফাইভবি’ নামক এক ধরনের প্রোটিনের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে ঘটে।
লন্ডনের কিংস কলেজের ওরাল বায়োলজির অধ্যাপক গাই কার্পেন্টার এই গবেষণার সমর্থন করে বলেন, ‘ব্যায়াম করার সময় লালায় প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়, বিশেষ করে মিউসিন নামক প্রোটিন, যা লালাকে আঠালো করে তোলে। দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার কারণে মুখের ভেতরের অংশ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যার ফলে লালার ঘনত্ব পরিবর্তিত হতে পারে। ’
তবে জর্ডান গ্রাহাম অন্য একটি কারণের কথা বলেছেন। তার মতে, কখনও কখনও অতিরিক্ত ক্যাফেইন, ইলেক্ট্রোলাইট বা কার্বোহাইড্রেট জেল গ্রহণের কারণে মুখ শুষ্ক হয়ে যায়। এমনকি স্নায়ুচাপের কারণেও এমন হতে পারে। এই সময় লালারস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে গিয়ে খেলোয়াড়রা থুতু ফেলেন।
গ্রাহাম বলেন, ‘অনেক সময় মুখ শুকনো থাকে বলে থুতু ফেলি, আবার কখনও স্নায়ুচাপের কারণে এমন হয়। তবে আমার মনে হয়, এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়, কিন্তু সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরা কেন এমনটা করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, এটা আমি বুঝতে পারি। ’
সবমিলিয়ে ফুটবলাররা কেন থুতু ফেলেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। এর পেছনে জৈবিক, অভ্যাসগত এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। তবে এই আলোচনা জর্ডান গ্রাহাম এবং ডেভিড প্রুটন উভয়কেই তাদের নিজস্ব আচরণ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে।
প্রুটন জানান যে তার ১৩ বছরের ছেলে হাডার্সফিল্ড টাউনের একাডেমিতে খেলে, এবং সে এখনো থুতু ফেলা শুরু করেনি। তিনি মনে করেন, কোনো এক সময়ে এই অভ্যাস গড়ে ওঠে। তার বাবা তাকে খেলার মাঠে ‘থুতু ফেলা’ থেকে বিরত থাকতে বলতেন।
গ্রাহাম নিজেও এখন এই বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমি সচেতনভাবে থুতু ফেলা বন্ধ করার চেষ্টা করব, যদি না মনে হয় যে এটি আমাকে কোনোভাবে উপকৃত করবে। ’ তিনি স্বীকার করেন যে, মাঠে থুতু ফেলার বিষয়টি তার কাছে এতই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল যে তিনি তা খেয়ালও করতেন না।
বিতর্ক যাই হোক না কেন, এই আলোচনা ফুটবলারদের এই অভ্যাস নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে এবং খেলার পরিবেশকে আরও পরিচ্ছন্ন ও সভ্য করার দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এমএইচএম