ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

টাকায় টাকায় রাজার গল্প

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮
টাকায় টাকায় রাজার গল্প

ঢাকা: একটি দেশ বা অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার অন্যতম উৎস হচ্ছে সেখানকার মুদ্রা। একইভাবে প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে টাকা জাদুঘরে। কোন আমলে কেমন মুদ্রা ব্যবহৃত হতো, জমিদারি প্রথায় কিভাবে বিনিময় হতো, মহাজনী প্রথা কেমন ছিল বা ব্যাংকিং ধারণা এলো কিভাবে, এ সবকিছুর সমাধান পাওয়া যাবে টাকা জাদুঘরে।

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত হয়েছে এই টাকা জাদুঘর। এটি মুদ্রা সম্পর্কিত একটি বিশেষায়িত জাদুঘর।

এ জাদুঘরের মুখ্য উদ্দেশ্যে আবহমানকাল থেকে বাংলা তথা উপমহাদেশে মুদ্রার ক্রমবিকাশের ধারাকে লালন, সংরক্ষণ ও এর নান্দনিকতাকে তুলে ধরা।

দেশের ইতিহাস তুলে ধরার এই মোক্ষম সুযোগ করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল তার হাত দিয়ে শিলান্যাসের মাধ্যমে শুরু হয় এ জাদুঘরের পথ চলা। একই বছরের ৫ অক্টোবর টাকা জাদুঘরের উদ্বোধন করে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

টাকা জাদুঘর।  ছবি: বাংলানিউজ

টাকা জাদুঘরে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৮ হাজার ৭০০ নোট ও কয়েন সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে রয়েছে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত (প্রচলনকাল খ্রিস্টপূর্ব ৫ম-৪র্থ শতক থেকে খ্রিস্টাব্দ ২য় শতক), কুশাণ মুদ্রা, হরিকেল মুদ্রা, দিল্লী ও বাংলার সুলতানদের মুদ্রা, মোঘল ও ব্রিটিশ শাসকদের মুদ্রাসহ আধুনিককালের মুদ্রা সম্ভার। তাছাড়া স্মরণাতীতকাল থেকে ১৯ শতাব্দী পর্যন্ত এ অঞ্চলের ছোট ছোট লেনদেনে ব্যবহৃত কড়ির কিছু নমুনাও রয়েছে এখানে।

টাকা জাদুঘরে স্থান পেয়েছে সোনারগাঁও টাকশাল থেকে মুদ্রিত বাংলার স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ’র রৌপ্যমুদ্রা। এছাড়া সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুগলক শাহ’র স্বর্ণমুদ্রা দেখা যাবে এখানে।

এই টাকা জাদুঘরের মাধ্যমে বিভিন্ন শাসকদের সময়কাল সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যাবে। এখানে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী-পুরুষ আসতে পারেন। শনিবার থেকে বুধবার প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই জাদুঘরের প্রদর্শনী চলে। এছাড়া শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সরকারি দিনগুলোতে এ জাদুঘর বন্ধ থাকে। এখানে প্রবেশ করতে কোনো প্রবেশ মূল্য দরকার নেই।

ফটো কিয়ক্সের মাধ্যমে ছাপানো নিজের ছবি সম্বলিত এক লাখ টাকার স্যুভেনির নোট।  ছবি: বাংলানিউজ

টাকা জাদুঘরে শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা কিডস জোন। তাছাড়া সব বয়সীদের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় ফটো কিয়ক্স। এই ফটো কিয়ক্সের মাধ্যমে ৫০ টাকার বিনিময়ে নিজের ছবি সম্বলিত ‘এক লাখ টাকার’ স্যুভেনির নোট প্রিন্ট করা যাবে।

টাকা জাদুঘর সম্পর্কে ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক রাজেন্দ্র লাল তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, টাকা জাদুঘরের মাধ্যমে মানুষ একটি সভ্যতার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে। এখানে অনেক শিক্ষার্থী আসেন বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ দর্শনার্থী এখানে আসছেন। দিন দিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, টাকা জাদুঘর সম্পর্কে খুব একটা প্রচারণা না থাকায় মানুষের মাঝে একরকম বিভ্রান্তি কাজ করে। আমরা দেখেছি, ফেসবুকে কেউ টাকা জাদুঘরের কথা লিখলে অনেকে প্রশ্ন করছেন যে, এটা ‘টাকা’ নাকি ‘ঢাকা’ জাদুঘর।  

টাকা জাদুঘরে প্রদর্শীত নোট

টাকা জাদুঘরে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের ঘুরে দেখানোর জন্য রয়েছে একজন গাইড। অলিভিয়া নামের ওই গাইড সব দেশের মুদ্রা এবং কোন আমলে কিভাবে এসব মুদ্রার ব্যবহার হতো তা দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। এছাড়াও পৃথিবীর মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে এমন ৪টি দেশের মুদ্রাও প্রদর্শন করা হয়েছে এখানে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮
এসএম/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।