ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

সুন্দরগঞ্জে প্রতিবন্ধী রাশেদুলের পয়সা মহল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৮
সুন্দরগঞ্জে প্রতিবন্ধী রাশেদুলের পয়সা মহল সুন্দরগঞ্জে প্রতিবন্ধী রাশেদুলের পয়সা মহল

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের শারীরিক প্রতিবন্ধী রাশেদুল ইসলাম, পেশায় একজন নরসুন্দর (নাপিত)। এলাকার লোকজন তাকে পয়সা প্রেমিক বলে ডাকে। বিগত কয়েক বছর ধরে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে পুরনো, অচল ও দেশি-বিদেশি পয়সা সংগ্রহের মাধ্যমে তৈরি করেছেন বিলুপ্ত পয়সার বিশাল সংগ্রহশালা। যেখানে রয়েছে আদিযুগ থেকে আজ অবধি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিলুপ্ত পয়সা। তিনি তার ছেলের নামে এ সংগ্রহশালার নাম দিয়েছেন ‘বিপ্লব পয়সা মহল’। 

বিলুপ্ত পয়সা বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিচিতির মাধ্যমে অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করাই তার একমাত্র লক্ষ্য। মাটির পাতিল ও ঢাকনার ওপর থরে থরে সাজিয়ে রাখা এ বিশাল বিলুপ্ত পয়সার সম্ভার দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করে এলাকার উৎসুক জনতাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা।

তার আশা ও স্বপ্ন বিলুপ্ত পয়সার এ সংগ্রহশালাকে ভবিষ্যতে রূপ দিতে চান জাদুঘরে রুপান্তরিত করে। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

রাশেদুলের পয়সার সংগ্রহশালা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রর্দশনীর মাধ্যমে বেশ সুনামও অর্জন করেছে। তার পয়সা মহলে স্থান পেয়েছে অতীতে বিভিন্ন রাজা-বাদশার আমলে ব্যবহৃত পয়সাসহ স্বর্ণ মুদ্রাও। আদিযুগে পয়সা বা মুদ্রার প্রচলন ছিল না, তখন বিনিময় প্রথা চালু ছিল। এরপর বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মানুষ কড়ি ব্যবহার করতো, তারপর ধীরে ধীরে পয়সার প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু সেসব আদি পয়সা এখন বিলুপ্ত। রাশেদুল আদিযুগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত পয়সা সংগ্রহের মাধ্যমে আধুনিক প্রজন্মের কাছে অতীত ইতিহাস তুলে ধরতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের জামাল গ্রামে নিজ বাড়িতে গিয়ে কথা পয়সা প্রেমিক রাশেদুলের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে কয়েক বছর আগেও পাঁচ পয়সা, দশ পয়সার প্রচলন ছিল। বর্তমানে পয়সার যুগ বিলুপ্তির পথে, এ ধারণা থেকে পয়সা সংগ্রহ শুরু করি। অনেক দিনের চেষ্টায় আমার এ সংগ্রহশালায় অচল, বিলুপ্ত, দেশি-বিদেশি প্রায় দশ হাজার পয়সা রয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাঙালি তথা বিশ্বের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজারে প্রর্দশনীর ব্যবস্থা করি।  সুন্দরগঞ্জে প্রতিবন্ধী রাশেদুলের পয়সা মহলতিনি আরো বলেন, তার পয়সার এ সংগ্রহশালাকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মকে জানান দেওয়া একমাত্র লক্ষ্য।  

তিনি নির্দিষ্ট একটা জায়গা কিংবা ঘর স্থাপনের জন্য প্রশাসন বা সরকারকে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন।

তার বাড়িতে পয়সার সংগ্রহশালা দেখতে আসা মামুন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, রাজা-বাদশার সময়ের পয়সাগুলো দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছে এবং অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে একটা ধারণা হয়েছে। তিনি প্রশাসন বা সরকারকে রাশেদুলের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান।  

রাশেদুলের পয়সা মহলের ব্যাপারে কথা হয় গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরগঞ্জের রাশেদুলের পয়সা সংগ্রহশালার বিষয়ে আমি অবগত এবং নিজেও দেখেছি। নিঃসন্দেহে এটা ভালো উদ্যোগ। তিনি অতীত ও বর্তমানের সঙ্গে একটা যোগসূত্র স্থাপন করে যাচ্ছেন এবং বর্তমান প্রজন্ম অতীত ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন। তার এ ব্যতিক্রম উদ্যোগের ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবো। আপাতত একটা নিদিষ্ট জায়গার ব্যাপারে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৮
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।