ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

যন্ত্রের কাছে হেরে যাচ্ছে হাতে তৈরি মুড়ি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮
যন্ত্রের কাছে হেরে যাচ্ছে হাতে তৈরি মুড়ি হারিয়ে যাচ্ছে হাতে তৈরি মুড়ি

হবিগঞ্জ: ১৫ বছর বয়স থেকে নিজের বাড়িতে মুড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কুড়িপাড়ার শিলা রাণী কুড়ি। শুরুতে মায়ের সঙ্গে গরম বালুতে লবণ ভেজানো চাল দিয়ে মুড়ি তৈরির কাজে হাতেখড়ি হয় তার। বাবা এবং ভাইয়েরা সেই মুড়ি নিয়ে দিনের বেলা ফেরি করে বিক্রি করতে যেতেন দূর-দূরান্তে। 

বিভিন্ন উৎসব এবং রমজান মাস এলে ব্যস্ততার শেষ থাকতো না তাদের। শুধু শিলা রাণীর বাড়িতে নয়, পুরো কুড়িপাড়াজুড়েই এ ব্যস্ততা চলতো সারা শীতকাল।

এ পরিবেশেই বড় হয়েছেন শিলা রাণী এবং তার ভাই-বোনেরা। তার পূর্ব প্রজন্মের মানুষেরাও এ পেশাটিকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।  

শিলা রাণী কুড়ির বর্তমানে বয়স ৫০। সময়ের ব্যবধানে তিনি ১ ছেলে ও দুই মেয়ের মা। ১৫ বছর থেকে ৫০ বছরের ভেতরে বদলে গেছে অনেক কিছু। বদলে গেছে তাদের পেশা এবং গ্রামীণ অর্থনীতির চাল-চিত্র। এখন আর মুড়ি ভাজার ফট ফট শব্দে মুখরিত হয় না তাদের বসতবাড়ির আঙিনা। বর্তমানে তাদের ব্যস্ততা আগের তুলনায় ৪ ভাগের এক ভাগও নেই। খুব কষ্টে সৃষ্টে কিছু সংখ্যক পরিবার ধরে রেখেছে পৈত্রিক পেশা।  

শিলা রাণী কুড়ি নিজের দুঃখের কথা তুলে ধরে বাংলানিউজকে জানান, ৩৫ বছর ধরে এ পেশায় কাজ করে আসছেন তিনি। বাবার বাড়ি থেকে শুরু করে স্বামীর বাড়ি, সেখানে এসেও ছেড়ে দেননি বংশগত পেশাটি। মুড়ির ব্যবসায় লাভ না হওয়ায় বর্তমানে তার স্বামী শহরের বিভিন্ন স্থানে ফেরি করা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন অন্যের জমিতে তিনি বর্গাচাষির কাজ করেন। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে সেইসব মুড়ি শিল্পীদের স্বর্ণালী দিন।

কারণ বিগত এক যুগে হবিগঞ্জ শহরের আশপাশে বেশ কয়েকটি মুড়ির কারখানা গড়ে উঠেছে। কেমিকেল মিশ্রিত সুন্দর বর্ণের মুড়ির কারণে হাতে তৈরি মুড়ি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলায় এক বা একাধিক কুড়িপাড়া রয়েছে। এসব পাড়ার লোকজন মুড়ি ভেজেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু শহরে কলকারখানায় তৈরি প্যাকেটজাত মুড়ির কারণে আকর্ষণ হারিয়েছে তাদের এ শিল্প।

শিলা রাণী কুড়ি আরো জানান, আজমিরীগঞ্জ কুড়িপাড়ায় রয়েছে ৩৫টি পরিবার। তাদের পূর্ব পুরুষরা সবাই এ পেশায় জড়িত ছিলেন। কিন্তু হবিগঞ্জ জেলা শহর এবং ভৈরব থেকে আমদানিকৃত প্যাকেটজাত মুড়ি বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় এখন তাদের কাছ থেকে মুড়ি কিনতে চান না লোকজন।

ইন্দ্রলাল কুড়ি নামে আরেক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, বাজার থেকে ১ মণ ধান কিনতে হয় ১ হাজার ২০০ টাকায়। আর ১ মণ ধানে মুড়ি হয় ১৮ কেজি। বাজারে ৮৫ টাকা কেজি দরে মুড়ি বিক্রি করে পাওয়া যায় ১ হাজার ৫৩০ টাকা। যেটুকু লাভ আসে অন্যান্য উপকরণ কিনতে সেটুকুও খরচ হয়ে যায়। দিন শেষে দেখা যায় লাভের খাতা শূন্য। তাই তিনি এ পেশা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনীষ চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, দেশ আধুনিকায়নের দিকে এগোচ্ছে। সেক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কল-কারখানায় তৈরি হচ্ছে মুড়ি। পাশাপাশি সরকার উদ্যোগ নিয়েছে যাতে একটা মানুষও বেকার না থাকে। বিশেষ করে তাদের সন্তানদের শিক্ষামুখি করতে হবে। পাশাপাশি একটা পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তাদের অন্য কোনো পেশায় লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।