ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

পদ্মাপাড়ের পাকশী হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

আবুল কালাম আজাদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১০
পদ্মাপাড়ের পাকশী হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

পাবনার পাকশী হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। শত বছর আগে পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং সাম্প্রতিককালে নির্মিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়কসেতু লালন শাহ সেতু পদ্মার পূর্বপাড়ের পাকশীর পরিবেশকে আরো দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে।

এ দুটি স্থাপনা পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সম্ভাবনাকে আরো উজ্জ্বল করেছে। ইতোপূর্বে লালন শাহ সেতু প্রকল্প থেকেও এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়।

এদিকে পদ্মার পাড়ে পাকশীর অদূরে প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বরদী ইপিজেড, রূপপুর আণবিক শক্তিপ্রকল্প, বন্ধ হয়ে যাওয়া পাকশী পেপার মিল, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন, পশ্চিম রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়, বন্ধ হয়ে যাওয়া ঈশ্বরদী বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু স্থাপনা পাকশীকে পর্যটনের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর পাদদেশে পাকশীর মনোরম দৃশ্য দেখতে আসেন।
    
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাকশী লালন শাহ সেতু নির্মাণের সময় এখানে বেশ কিছু অত্যাধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এখানে রয়েছে আবাসিক কোয়ার্টার, সুইমিংপুল, খেলার মাঠ, গার্ডেনসহ সকাল-বিকাল ভ্রমণের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও বিনোদন কেন্দ্র। এতো কিছু থাকার পরও কোনো কিছুই কাজে লাগানো হচ্ছে না। অথচ এসব রণাবেণে প্রতি মাসে সরকারকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।  
জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা ব্রিটিশ আমল থেকে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সে সময় পদ্মা নদীর সাঁড়া ঘাটে গড়ে ওঠে নদীবন্দর। এলাকার বিশিষ্ট শিাবিদ ও সমাজসেবক এবং রাজনীতিবিদরা জানান, এই নদীবন্দরে দেশ-বিদেশ থেকে বহু জাহাজ এসে ভিড়ত। সাঁড়াঘাটে গড়ে ওঠে বিশাল বাণিজ্যকেন্দ্র এবং মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা এই নদীবন্দর হয়ে তাদের পণ্য আনা-নেওয়া করত। ১০০ বছর আগে ১৯১০ সালে এই সাঁড়াঘাটের আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দেিণ পাকশীতে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এজন্য অনেকের কাছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সাঁড়ার ব্রিজ নামেও পরিচিত। নির্মাণের পর থেকেই এটি সারা দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করে আসছে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি এ দেশের ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় একটি ব্রিজ হওয়ায় প্রতিদিন বহু মানুষের সমাগম হয় এখানে। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক দেখতে আসেন ব্রিজটি।

এই ব্রিজের ৩০০ মিটার ভাটিতে উত্তর ও দণি অঞ্চলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য ২০০৪ সালে ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘লালন শাহ’ সড়কসেতু নির্মিত হয়। এ সেতুটিও যমুনা সেতুর পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়কসেতু। দুটি সেতু পাশাপাশি নির্মিত হওয়ায় এখানকার সৌন্দর্য অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে পাকশী অঞ্চলে সেতু দুটিকে কেন্দ্র করে বহু অবকাঠামো সরকারিভাবে নির্মিত হয়েছে। লালন শাহ সেতু নির্মাণের সময় প্রয়োজনের তাগিদেই প্রকল্প অফিস, সেতু নির্মাণে নিয়োজিত বিদেশি কলসানটেন্সি অফিস, কর্মকর্তাদের থাকার জন্য আবাসিক এলাকা, বিনোদন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এখানে নির্মিত হয়েছে প্রায় ২০০ জনের থাকার মতো বেশ কয়েকটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কটেজ। একই সাথে একটি অত্যাধুনিক রেস্ট হাউসও আছে। এসব রণাবেণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এছাড়া পদ্মা নদীর বাম তীর অর্থাৎ সেতুর পূর্বপাড়ের দণি দিকে বিভিন্ন বৃরাজি দ্বারা আধুনিক পদ্ধতিতে বনায়ন করা হয়েছে, যা যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এরই পাশে রয়েছে রূপপুর আণবিক প্রকল্পের পরিত্যক্ত বিশাল সবুজ মাঠ। এসবকে কাজে লাগানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

পাকশীর যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। উত্তর ও দণিাঞ্চল তথা রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের মাঝামাঝি এর অবস্থান। এখান থেকে উত্তরাঞ্চলের পাবনা ছাড়াও নাটোর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া এবং দণিাঞ্চলের কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার সঙ্গে এর রেল ও সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে পাকশী দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে এবং এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে সরকারের প্রতি বছর রাজস্ব আয় হতে পারে কয়েক কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪১০, অক্টোবর ১১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।