ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

গুয়াতেমালার জঙ্গলে মায়া সভ্যতার অদেখা নিদর্শন

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৮
গুয়াতেমালার জঙ্গলে মায়া সভ্যতার অদেখা নিদর্শন গুয়াতেমালা রেইন ফরেস্ট, ছবি: সংগৃহিত

ঢাকা: সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিকরা গুয়াতেমালা রেইন ফরেস্টে মায়া সভ্যতার ৬০ হাজারটিরও বেশি ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার করেন। এ আবিষ্কারে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত লেজার প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে রেইন ফরেস্টের নিচে লুকানো প্রাগৈতিহাসিক স্থাপনা, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদির ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি) চিত্র পাওয়া যায়।

উত্তর গুয়াতেমালায় অবস্থিত পেটেন বিভাগের ৮১০ বর্গমাইল এলাকা স্ক্যান করেন গবেষকরা। স্ক্যানের ফলাফল মায়া সভ্যতা সম্পর্কে নতুন ধারণার জন্ম দেয়।

 

মায়া সভ্যতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণায় নিয়োজিত প্রত্নতত্ত্ববিদ স্টিফেন হুস্টন বলেন, মায়া সভ্যতা নিয়ে দেড়শ বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড় সাফল্য এটা।  

এ আবিষ্কারে গবেষকদের ব্যবহার করা প্রযুক্তিটির নাম ‘লাইডার টেকনোলোজি’। অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক এ প্রযুক্তিকে ‘ম্যাজিকে’র সঙ্গে তুলনা করেন। এতে লেজার স্ক্যানিংয়ের সাহায্যে আলো শনাক্ত ও বিন্যাস করা হয়। ফলে ভূ-পৃষ্ঠের গঠন প্রকৃতির নিখুঁত চিত্র পাওয়া যায় এতে।

প্রত্নতত্ত্ববিদ ফ্রান্সিস্কো এস্ত্রাদা ন্যাশনাল জিওগ্রাফির এক সাক্ষাৎকারে লাইডার প্রযুক্তি সম্পর্কে বলেন, হাবল টেলিস্কোপ জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য যেমন বৈপ্লবিক অগ্রগতি এনে দিয়েছে, তেমনি লাইডার প্রযুক্তি বিপ্লব এনেছে প্রত্নতত্ত্বে।  

লাইডার টেকনোলোজি ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষকরা গুয়াতেমালার ঘন রেইন ফরেস্টের নিচে লুকানো ভূ-পৃষ্ঠের থ্রি-ডি চিত্র ধারণ করেন। গবেষণালব্ধ তথ্য বলছে, মানুষ এতদিন যেরকম ধারণা করা আসছে, প্রাচীন মায়া সভ্যতা তার থেকেও অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। তাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ছিল প্রাচীন গ্রিক বা চীন সভ্যতার মতোই উন্নত।

মায়া সভ্যতা সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধি লাভ করে ১৫শ বছর আগে। মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের থেকেও দ্বিগুণ অঞ্চল জুড়ে ছিল তাদের বিচরণ। আগে ধারণা করা হতো এ সভ্যতার জনসংখ্যা ছিল ৫০ লাখের কাছাকাছি। গবেষকদের নতুন তথ্য বলছে, মায়ারা জনসংখ্যায় ছিল কমপক্ষে এক থেকে দেড় কোটি।

নতুন আবিষ্কৃত ৬০ হাজার ধ্বংসস্তূপের বেশিরভাগই পাথরের কাঠামো। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘর-বাড়ি, প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল, দুর্গ ও ধর্মীয় স্থাপনা। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো নির্মাণে মায়ারা অনেক শ্রম ব্যয় করেছিল।  

গবেষণায় একটি সাততলা পিরামিডের সন্ধান মেলে। প্রচুর গাছ-পালায় আড়ালে থাকায় এটি এতোদিন সবার নজরের বাইরে ছিল।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার মায়াদের চলাচলের পথ। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য মায়ারা জালের মতো অনেক পথ তৈরি করেছিল। এসব পথের জটিল নকশা অবাক করে গবেষকদের। তাছাড়া বর্ষাকালে সহজে চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছিল প্রশস্ত হাইওয়ে। এক শহর থেকে অন্য শহরে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ব্যবহৃত হতো এগুলো।

গুয়াতেমালার ঐতিহ্য সংরক্ষণ বিষয়ক একটি সংস্থার পরিচালিত তিন বছরব্যাপী গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।  

গবেষকরা মনে করছেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিগগিরই মায়া সভ্যতার আরও অনেক চমকপ্রদ বিষয়বস্তু উন্মোচিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।