ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

ফেরি করে পান বেচেই মহাসুখী মাহবুব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
ফেরি করে পান বেচেই মহাসুখী মাহবুব পান বিক্রি করছেন মাহবুব; ছবি: জাহিদুর রহমান

ঢাকা: নিজেকে "মহাসুখী" ভাবেন পানবিক্রেতা মাহবুব (৪৫)। সেটা ভাববার বহু কারণও আছে তার। ফেরি করে এই পান বিক্রিই বদলে দিয়েছে তার জীবন। ঢাকা আর পটুয়াখালিতে কিনেছেন দশ কড়া পরিমাণ জমি। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় করছেন শিক্ষিত।

মেয়ে পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজিতে অনার্স।

আর ছেলে দেবে এসএসসি পরীক্ষা। পথ চলতি এই মানুষগুলোই যেন বাংলাদেশের এগিয়ে যাবার গল্প। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিনই গড়ে তার আয় হয় এক হাজার থেকে ১২’শ টাকা। কখনো সেটা ছাড়িয়ে ১৫’শ টাকা হয়ে যায়। স্ত্রী সাবিনাও কর্মজীবী। তিনি কাজ করেন একটি তৈরি-পোশাক কারখানায়। সেখানে তার আয় মাসে ১২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মাসের খরচ বাদ দিয়ে অনায়াসেই কিছু সঞ্চয়ও হয়।

তবে মাহবুব একটা হিসেব মেলাতে পারেন না কিছুতেই। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই তার প্রশ্ন,দেশেই তো কতো কাজ। তবে কাজকে অবহেলা করে সামান্য অর্থের জন্যে মানুষ কেন বহু অর্থ খরচ করে বিদেশে যায়!

পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানার কালিকাপুর গ্রামের ছেলে মাহবুব। লেখাপড়ায় মেট্রিক পাশ। বাবার নাম ইয়াসিন। এক রাতেই পায়রা নদী গ্রাস করে নেই সর্বস্ব। সেটা ১৩ বছর আগের ঘটনা। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শূন্য হাতেই পাড়ি জমান ঢাকায়।

চলে আসেন সাভারে। কোমরে ব্যথা থাকায় ভারী কোনো কাজ করার সুযোগ ছিলো না তার। শেষে এর ওর কাছ থেকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে শুরু করলেন ফেরি করে পান বিক্রি।

পরিশ্রমও তেমন না। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২ টা। আবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত পান বিক্রি করেন তিনি।

এই নিয়মেই চলছে ১৩ বছর। প্রতিদিন ৫ বিড়া পান বিক্রি করেন। প্রতি বিড়ায় ৮০ টি। তবে ৪'শ পানের মধ্যে দিনে নিজেরই লাগে ৪০টি। প্রতিটি পানের খিলির দাম ৫ টাকা।

‘বলতে পারেন অভ্যেস। ক্রেতাদের জন্যে খিলি বানাই। অবসরে নিজেই মুখে পুরি, ব্যস। দিন শেষে হিসেব করে দেখি আমার নিজেরই লাগে গোটা চল্লিশেক। ’

এভাবেই হাটে মাঠে ঘাটে পান বেচা। দিন দিন কদর বাড়ে মাহবুবের পানের খিলির।

‘এক বিড়া পান ১২০ টাকা দিয়ে কিনি। মশলাপাতি দিয়ে খিলি করে বিক্রি করি ৪'শ টাকায়। যে কখনো পান মুখেও তোলেনি, সে একবার আমার পান খেলে আমাকে তার মনে রাখতেই হবে’- বেশ দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করেন মাহবুব।

নানা রকমের বাহারি জর্দা ছাড়াও মাহবুবের ডালিতে সাজানো থাকে কালিজিরা,ধনিয়া বা মিষ্টি জর্দা দিয়ে বানানো পানের খিলি।

পরনের জামাটা জোড়া তালি দেওয়া। তবে হৃদয়টা ভরপুর তৃপ্তি আর সুখে: "আমার মতো সুখী কে আছে কন!এই পান বেইচ্যা সাভারে দুই কড়া আর দ্যাশে জমি কিনছি আট কড়া। পোলাপান গো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতেছি। কয়ডা মানুষ আছে আমার মতো সুখী"- ডালিতে পান সাজাতে সাজাতে বাংলানিউজের কাছে এমনই আনন্দিত অভিব্যক্তি তার। জীবনের এই প্রাপ্তিটাই তার কাছে অনেক বেশি।

মেয়ে খাদিজা আর ছেলে জহিরুল ইসলামের প্রসঙ্গ তুলতেই গর্বে চকচক করে ওঠে মাহবুবের চোখ। আর পান খাওয়া গালভরা মুখে ছড়িয়ে পড়ে তৃপ্তির অমলিন হাসি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।