ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

সাড়ে ১২ হাজার ফুট উপরে সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বসতি

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
সাড়ে ১২ হাজার ফুট উপরে সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বসতি

ঢাকা: চীনের লারাং গার উপত্যকার উঁচু-নিচু পাহাড়ের নির্জনে রয়েছে লারাং গার বৌদ্ধ একাডেমি। পাঠদান ও পাঠগ্রহণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ লোকালয়ই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বসতি।


 
মনোরম পাহাড়ী পরিবেশের অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অংশ রূপে রয়েছে হাজারো লাল রঙের কাঠের কুটির। শহরতলী ছাড়িয়ে খানিকটা গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে উঠেছে এ ঘনবসতি।

সবুজের মাঝে লালের এ ঘনবসতি ১৯৮০ সাল থেকে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এখানে চল্লিশ হাজারেরও বেশি বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সন্নাসী রয়েছেন।

এর মধ্যে ‘সার্টার’ হলো একটি ধর্মীয় আশ্রম। এ আশ্রমের কুটিরগুলো পাহাড়ের বারো হাজার ৫শ’ ফুট উপর পর্যন্ত বিস্তৃত। ধর্মীয় ভিক্ষুরা বলতে গেলে প্রতিকূল আবহাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেই এখানে বসবাস ও অধ্যয়ন করছেন।

লাল কাঠের বাড়িগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত ও ঢালাওভাবে বিস্তৃত, দেখে মনে হবে পাহাড়ের উপর দিয়ে কোনো লাল সাগর বয়ে গেছে।

এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং সন্নাসীরা লিঙ্গ ও বয়স অনুযায়ী, পৃথক পৃথক বিদ্যাপীঠের নিকটবর্তী কুটিরে বসবাস করেন।

নারী ও পুরুষের পৃথক কুটিরগুলো আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে আলাদা করা রয়েছে। রাস্তাগুলো এঁকেবেঁকে চলে গেছে লাল কুটিরের মধ্য দিয়ে।

এসব আবাসস্থলে রয়েছে মৌলিক কিছু শর্তাবলী। রয়েছে সম্প্রদায়ভিত্তিক শৌচাগার। প্রতিটি কুটিরই আকারে এক থেকে তিনটি কক্ষের সমান।

চেংদু থেকে ৩শ’ ৭০ মাইল দূরে অবস্থিত এ বিশেষ স্থানটি ঘুরে দেখতে হলে ট্রেনে বিশ ঘণ্টার জার্নি করতে হবে। এ বৌদ্ধ বসতিতে টেলিভিশন কড়াকড়িভাবেই নিষিদ্ধ। তবে আইফোন ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। এখানকার অনেক ভিক্ষুর কাছেই সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন রয়েছে।

এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সন্ন্যাসীরা একাডেমিতে থেকে পড়াশোনা ছাড়াও, ধর্মীয় গবেষণা ও প্রার্থনা করে থাকেন।

লারাং এলাকায় ছোট ছোট দু’টি অতিথিশালাও রয়েছে। বসতির সবাই নতুন অতিথিদের আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাগতম জানান ও বরণ করে নেন। এখানে বসবাসকারী ভিক্ষুদের জীবিকা নির্বাহ হয় অনুদান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়, অতিথিশালা ও মুদি দোকানের উপর ভিত্তি করে।

মৃত্যু ও মরদেহের শ্রাদ্ধ নিয়ে এখানকার বৌদ্ধদের ভাবনা ব্যতিক্রম। তাদের স্বর্গীয় শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে মরদেহকে কেটে শবখাদক প্রাণী যেমন, শকুনকে খেতে দেওয়া হয়।

তাদের বিশ্বাস, মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা জীবদেহ ছেড়ে চলে যায়। তাই তারা দেহাবশেষ সংরক্ষণ করার প্রয়োজন মনে করেন না।

প্রথমে তারা মৃতের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন, তারপর সমাধিকার্যে নিয়োজিত একজন ধর্মগুরু মরদেহ কাটতে শুরু করেন। কাটা হয়ে গেলে হাজার হাজার শকুন মরদেহের উপর এসে খেতে শুরু করে।

তাদের বিশ্বাস, মরদেহ খেতে যদি বেশি শকুন আসে, তাহলে মৃত ব্যক্তি জীবদ্দশায় ভালো মানুষ ছিলেন। আর যদি কম শকুন আসে, তবে তিনি ছিলেন খারাপ মানুষ।

ঐতিহ্যবাহী নাইংমা পরম্পরার তিব্বতীয় লামা জিগমে পুন্টসক ১৯৮০ সালে অনন্য এ একাডেমি স্থাপন করেন। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ বৌদ্ধ একাডেমিতে চীন ছাড়াও রয়েছে তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীদের মূলত ম্যান্ডারিন ভাষায় পাঠদান করা হয়। তবে বড় ক্লাসগুলোতে পড়ানো হয় তিব্বতি ভাষায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।