ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

স্বাধীন বাংলার আকুতি

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৫
স্বাধীন বাংলার আকুতি

ঢাকা: ১৯৭১ থেকে ২০১৫ সাল। প্রিয় বাংলাদেশ, স্বাধীনতার ৪৪ বছরে পা দিলে তুমি।

তোমার হাজারো সন্তান নানাভাবে অভিবাদন জানিয়ে অস্থির।

জানি, তুমি চাও না ফুলের শুভেচ্ছা, আনুষ্ঠানিকতা আর একদিনের দেশপ্রেম। তুমি চাও ভালোবাসা, তুমি চাও আজীবন শান্তি আর চিরন্তন স্বাধীনতা। তবুও এমন একটি দিনে কিছু তো বলো!

২৬ মার্চ, ১৯৭১। হ্যাঁ, আমার মনে এখনও দাগ কেটে রয়েছে সেদিনের স্মৃতি। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের বিভৎসতা আর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক, সবই মনে রয়েছে। যেন ধরা গলায় বলে উঠলো বাংলাদেশ।

যতদূর পেছনে তাকাই, শুধু শোষণ-বঞ্চনা। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ। তারপর ৫২’র ভাষা আন্দোলন। এরপর কত ঘাত-প্রতিঘাত পাড়ি দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। আজও লড়ছি আমি।

শুরুর দিকে সয়েছি পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচার। বুকে ছিল হাজারো ক্ষত চিহ্ন। অর্থনৈতিক বৈষম্য, মানবিক নির্যাতন, হত্যা আরও কত কী। সেই ক্ষত মুছতে বাংলার মানুষ প্রাণ দিল। তিরিশ লাখ শহদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্মানের বিনিময়ে পেলাম নিজের পরিচয়। পেলাম স্বাধীনতার টকটকে লাল সূর্য। ভাবলাম, এবার বুঝি আলোর দুয়ার খুললো।

এবার খানিকটা দম নিয়েই যেন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল বাংলাদেশ। বললো, মাঝে মাঝে ভাবি- পরাধীনতা কী। অন্যের অধীনে নিজের বন্দীত্ব, নাকি নিজের কাছেই নিজেকে বন্দী করা। একাত্তরে স্বাধীনতার পর আজ আমি নিজের কাছেই নিজে বন্দী। খুব কষ্ট হয় যখন দেখি, স্বাধীনতার কৃতিত্ব নিয়ে দলের মধ্যে ভাগাভাগি আর তর্ক-বিতর্ক। রাজনৈতিক হানাহানিও চলে।

আমি শুধু ভালোবাসা চাই। মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। পারো আমায় বাঁচাতে!

কথা বলছিলাম, আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাশেদের সঙ্গে। যদি এমনি করে দেশের সাক্ষা‍ৎকার নেওয়া যেতো, তবে হয়তো এমনই ভাষ্য দিতো দেশ।

কেননা, এত এত মূল্য দিয়ে অর্জিত দেশকে নিয়ে আজ আমরা নিজেদের মধ্যেই হানাহানিতে মেতে রয়েছি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, পারস্পরিক বৈষম্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, সাম্প্রদায়িকতা- এসব যেনো নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে আমাদের। নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। যে ভাষার জন্য আমরা লড়াই করেছি, সে ভাষাকেই বা কতটা মর্যাদা দিচ্ছি আমরা!

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়েছিল বাংলার সব শ্রেণিপেশার মানুষ। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, কামার, কুমার, জেলে, কৃষক, উচ্চপদস্থ কর্মচারি সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হিংস্র থাবা থেকে ছিনিয়ে এনেছে বাংলার স্বাধীনতা।

আমরা কী পারি না, একাত্তরের সেই কাঁধে কাঁধ মেলানো চেতনা বুকে ধারণ করে সবাই একসঙ্গে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে! দেশকে স্বাধীনতার যোগ্য মর্যাদা দিতে। বিশ্বের দরবারে সম্মানের জায়গায় প্রিয় বাংলাকে পৌঁছে দিতে।

মন-প্রাণ উজাড় করে বলতে কি পারি না, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি!

বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।