ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর ৬ সাপ

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০১ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫
বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর ৬ সাপ

ঢাকা: ছোটবেলায় একটি ছড়া আমরা সবাই খুব পড়েছি। ‘বাবুরাম সাপুড়ে/ কোথা যাস বাপুরে/ আয় বাবা দেখে যা/ দুটো সাপ রেখে যা/ যে সাপের চোখ্ নেই/ শিং নেই নোখ্ নেই/ ছোটে নাকি হাঁটে না/ কাউকে যে কাটে না/ করে নাকো ফোঁস ফাঁস/ মারে নাকো ঢুঁশ্ ঢাঁশ্’।


 
সাপ কৌতুহলী প্রাণী হলেও তার বিষাক্ত ছোবলের ভয় রয়েছে সবার মনেই। তাই হয়ত সুকুমার রায় সাপুড়েকে ডাকলেও; চোখ, শিং নোখ ছাড়া শান্তশিষ্ট সাপের সন্ধানই করেছেন।

পৃথিবীতে প্রায় ৬শ’রও বেশি প্রজাতির বিষাক্ত সাপ রয়েছে। তাদের মধ্যে ২শ’ প্রজাতির সাপ মানুষের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

বাকি সাপের ছোবলে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেও এমন কিছু সাপ বিশ্বের নানা অলিগলিতে রয়েছে, যাদের এক ছোবলই হতে পারে প্রাণনাশের কারণ। তেমন ৬টি বিষধর সাপ নিয়েই এবারের আয়োজন।

স-স্কেলড ভাইপার

স-স্কেলড ভাইপারের আরেক নাম একিস ক্যারিনেটাস। ৩৫ ইঞ্চি লম্বা বাদামী রঙের এ সাপটির বসবাস ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে। ছোটখাটো এ সাপটির বিষ যদিও ততটা শক্তিশালী নয়, তারপরও প্রতিবছর অন্যান্য সাপের তুলনায় এ সাপের কামড়েই বেশিরভাগ মানুষ মারা যায়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, এ সাপ জনবহুল এলাকায় বাস করে। তাই সহজেই মানুষ এদের কবলে পড়ে।

কিং কোবরা

কোথায় বিশাল হাতি আর কোথায় মাটিতে লুটোপুটি খাওয়া সাপ! কার এত ক্ষমতা বিশাল হাতিকে টেনে মাটিতে ফেলার! হ্যাঁ, আছে! একটি শক্তপোক্ত এশিয়ান হাতিকে কব্জা করতে একফোটা কিং কোবরার বিষই যথেষ্ট। এছাড়াও সাপের কামড়ে যেসব মানুষের মৃত্যু হয়, তাদের মধ্যে পঞ্চাশ ভাগই এ সাপের কামড়ে। কিং কোবরার ছোবলের ফলে নিউরোটক্সিন প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে। ফলে বিষ ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। কিং কোবরা লম্বায় প্রায় ১৮ ফুট। এটিই বিশ্বের বিষধর সাপের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা। আর ওজন প্রায় ছয় কেজি। ভারতীয় উপমহাদেশ, ভুটান, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়াতে এদের দেখা যায়।

টাইগার স্নেক

কালো আর বাদামী ডোরাকাটা সাপটির নাম টাইগার স্নেক। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, সাপটি বেশ ভয়ঙ্কর। টাইগার সাপ বা নোটেকিস স্কুটেটাস সাপের বসবাস তাসমানিয়াসহ অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ অংশে। এদের বিষে রয়েছে নিউরোটক্সিনসহ কোয়াগুলান্টস, হেমোলাইসিনস ও মায়োটক্সিনস। এরা দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ১০ ফুট লম্বা হয়। রঙের ভিন্নতাও রয়েছে এদের। যেমন কোনোটি হয়তো জলপাইরঙা, কোনোটি কমলা আবার কোনো সাপ বাদামি বা হলুদ। আর চকচকে কালো টাইগার স্নেক তো রয়েছেই।

ইনল্যান্ড টাইপান

হিংস্র সাপ হিসেবেই বিশেষায়িত করা হয় একে। ইনল্যান্ড টাইপান ওয়েস্টার্ন টাইপান নামেও পরিচিত। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অর্ধশুষ্ক মাটিতে এরা বাস করে। সোনালি এ সাপের কামড়ে একঘণ্টারও কম সময়ে মানুষের মৃত্যু হয়। মারাত্নক এ সাপের বিষ সহজেই ধমনী ও পেশির টিস্যুকে নিস্তেজ করে ফেলে। ইনল্যান্ড টাইপান লম্বায় প্রায় সাড়ে আট ফুট হয়।
 
ফেইন্ট-ব্যান্ডেড সি স্নেক

সাদাকালো চিকন দড়ির মতো দেখতে সাপটি। সুন্দরও বলা চলে। তবে দেখতে যেমন মনোহর, তেমনি আচরণও ভীষণ হিংস্র। অনেকেই বিশ্বাস করেন, জলজ এ সাপই পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ। এর বিষ অন্যান্য সাপ যেমন ইনল্যান্ড টাইপানের তুলনায় ১শ’ গুণ বেশি বিষাক্ত বলে প্রচলিত রয়েছে। সাপটি লম্বায় ২০ থেকে ২০ ইঞ্চি। শিকার ও ঘুমের সময় এরা প্রায় আটঘণ্টার মতো শ্বাসরোধ করে রাখতে পারে। সাধারণত ভারত মহাসাগর, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া উপসাগর এবং সলোমন দ্বীপে এদের চলাচল।  

ব্ল্যাক মাম্বা

দ্রুতগামী কুচকুচে কালো এ সাপটি বিশ্বের অন্যতম বিষধর সাপ। প্রতি ঘণ্টায় ব্ল্যাক মাম্বা সাড়ে ১২ মাইল যেতে পারে। ব্ল্যাক মাম্বা যদি কাউকে ছোবল দেয়, তাহলে আধঘণ্টারও কম সময়ে তার মৃত্যু অবধারিত। এদের বসবাস দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকাতে। কঙ্গো, দক্ষিণ-পশ্চিম সুদান, ইথিওপিয়া, সোমলিয়া, উগান্ডা, নাইজেরিয়া, চাঁদ ইত্যাদি অঞ্চলের বন ও পাথুরে এলাকায় এদের দেখা যায়। আফ্রিকার লম্বা সাপগুলোর তালিকায় ব্ল্যাক মাম্বাই সবার শীর্ষে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।