ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

মূল্যস্ফীতিতে ব্যহত নাগরিক জীবন

শাহীন আফরোজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১১
মূল্যস্ফীতিতে ব্যহত নাগরিক জীবন

ঢাকা: জাকিয়া রহমান একজন ঢাকা নগরীর একজন গৃহিনী। সংসারে আয়ের দায়িত্ব ছাড়া বাকী সবকিছুরই দায়িত্ব তার ওপর।

স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে সংসার। এনজিও চাকুরে স্বামীর সীমিত আয়ে সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় তাকে। যা থেকে পারিবারিক কলহসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও সঙ্কটেরও জন্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

স্বামী মজিবুর রহমানের মাসিক বেতন ২৫ হাজার। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়ায় চলে যায় ১০ হাজার। বাকী ১৫ হাজারে সংসাসের সবার মুখে আহার তুলে দিয়ে আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে মাস শেষে নাভিশ্বাস ছোটে জাকিয়া রহমানের।

বড় মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ছোট ছেলেটি ক্লাস নাইনে পড়ে। সাধারণ একটি সরকারি স্কুলে পড়লেও  বন্ধুদের দামী মোবাইল আর দামী পোশাকের মাঝে হীনমন্যতায় ভুগতে হয় ছেলেকে। মায়ের কাছে একটি সাইকেলের আবদার তার আবদারই থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। আর মেয়ের নৈমিত্যিক খরচ মেটানোই দায়, বাড়তি চাওয়া পাওয়ার প্রশ্নই নেই।

শখের কথা নয়, মৌলিক চাহিদার পুরোটাই পূরণ করা সম্ভব হয় না। জাকিয়া রহমান কোমড়ের ব্যথায় ভুগছেন অনেকদিন ধরেই। টাকা খরচের ভয়ে ডাক্তার দেখানোর চিন্তা মাথায় আনেন না। সংবাদপত্রে বাড়তি খরচ বলে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রতি মাসেই সংসারে বাড়তি খরচ হচ্ছে। মেহমানের ঝক্কিতো লেগেই থাকে। যা টানাটানির সংসারে ধার কর্জ বাড়ানোর অন্যতম উপকরণ হিসেবে কাজ করে। এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে খেয়ে-পরে বেচে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

এসবের অনিবার্য ফল হিসেবে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি। এখন অল্পতেই রেগে যান জাকিয়া রহমান।

স্বামী মজিবুর রহমান রসিক লোক, রাগেন না বললেই চলে। স্ত্রীর রাগ ভাঙ্গাতে করেনা এমন কোন কাজ নেই। কিন্তু সংসারের আয় বাড়াতে খুব একটা সিদ্ধহস্ত নন।

এদিকে ছেলে-মেয়ের অভিযোগ, সারাক্ষণ ঝগড়াঝাটি করার ফলে তাদের পড়াশোনা ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার সময় খুব কমই থাকে বাবা মার কাছে। এতে সংসারে বিচ্ছিন্নতাই বাড়তে থাকে।

আর এ চিত্র শুধু রহমান পরিবারেরই না। বাংলাদেশের প্রতিটি নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারকেই আজ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারনে সম্মুক্ষীণ হতে হচ্ছে এরকম আরো হাজারো সমস্যার। ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। ফলে দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় চিন্তা খাদ্যমূল্য নিয়ে। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। কেননা দেশের মানুষের ক্রয়মতা এখনো প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। যেহেতু দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ নিম্নআয়ের এবং অতিদরিদ্র তাই তারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে তাদের জীবনে একটি অভিশাপ বলেই মনে করেন।

কাজের খোঁজে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসে আরেকটু ভালোভাবে জীবনযাপনের আশায়। স্বপ্ন বোনে একটি সুখী জীবনের। কিন্তু তাদের এ স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব বেশিদিন লাগে না। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে গাড়ি ভাড়া আর বাড়ি ভাড়ার ক্রমাগত বৃদ্ধি এসব মানুষের জীবন করে তোলে দুর্বিষহ। নাগরিক জীবনের এ বাস্তবতার কেউ কেউ হয়তো খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয় কিন্তু একটা উল্লেখযোগ্য মানুষের পক্ষেই তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর তাই পরিবারের অন্ন সংস্থান করতে অনেককেই পা বাড়াতে হয় অন্যায় ও অনিয়মের পথে।

বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অতীতের সব রের্কড ছাড়িয়ে গেছে। পণ্যের দাম যাতে ক্রেতা-সাধারণের ক্রয় মতার মধ্যে রাখতে সরকারের তৎপরতা অব্যাহত। কিন্তু তারপরও লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে পণ্যের দাম। কেননা এক শ্রেনীর ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করেন খাদ্যপণ্যের বাজারদর। আর মূল্যস্ফীতির সাথে সাথে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর জীবনে দুঃখ কষ্টের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দেয় অভাব নামক অভিশাপ।    

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান মনে করেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয়ের তুলনায় মানুষের আয় বেড়েছে একথা সরকার বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। পরিসংখ্যান আর বাস্তবতা এক নয়। দেশে প্রচুর অর্থ থাকলেও তা কয়েকজনের কাছেই সীমাবদ্ধ। তাই অথের্র সমবন্টন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সরকারের উচিৎ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, অতি দরিদ্রদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা এবং ওএমএস সুবিধা সম্প্রসারিত করা। ’

বাংলাদেশ সময় ১৭৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।