ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

ফিচার

আগ্রা থেকে খুররম জামান

ঝুঁকিতে তাজমহল!

খুররম জামান, ডিপ্লোম্যাটিক অ্যাফেয়ার্স এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৪
ঝুঁকিতে তাজমহল! ছবি: সংগৃহীত

আগ্রা থেকে: বিস্ময়ের তাজমহল! সপ্তদশ শতকে বিশ্ববাসীকে বিস্ময়ে ডুবিয়ে ভারতের আগ্রায় যমুনার তীর ঘেষে যে তাজমহল গড়ে ওঠে সে বিশ্ব ঐতিহ্য এখন হুমকির মুখে! খোদ যমুনাই তাজমহলের হুমকির কারণ! তবে, যমুনার কূলভাঙা উত্তাল ঢেউ নয়, মাঝেমধ্যে তার অস্তিত্বহীন হয়ে পড়াই তাজমহলকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। অর্থাৎ যমুনার পানি প্রবাহ কমতে থাকলে শঙ্কা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে তাজমহলের!

বাংলানিউজ ঘুরেছে উত্তর প্রদেশের আগ্রা, ঘুরেছে যমুনার তীর আর বিস্ময়ের তাজমহল।

জানার চেষ্টা করেছে-কেন চাঁদনীরাতের রানী তাজমহল অজানা শঙ্কায় ভুগছে।




ইতিহাসের খাতা বলছে, ১৬৩১ সাল থেকে ১৬৫৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর ধরে নির্মিত তাজমহলের ভিত্তি স্থাপন করা হয় হয় সেগুন গাছের গুড়ি দিয়ে। স্রোতস্বিনী যমুনার তীরে গড়ে তোলা হয়েছে বিধায় তাজমহলের ভিত্তি অর্থাৎ গাছের গুড়ি সবসময়ই যমুনার অমিয় সুধা পান করে মজবুত থেকেছে। ফলে কয়েক শতাব্দী পরও তাজমহল রানীর সৌন্দর্যের কপালে বয়সের ছাপ পড়েনি।

কিন্তু সাম্প্রতিককালে যমুনার প্রবাহ থেকে থেকে কমে যাওয়ায় তাজমহল ঘিরে শঙ্কা বেড়ে যায়। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (এএসআই) একজন কর্মকর্তা বলেন, গাছের ‍গুড়ি সবসময় পানি থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে তাজা থাকে। তাজমহলের ভিত্তিও সেগুন গাছের গুড়ি দিয়ে স্থাপিত হয়েছে বিধায় যমুনার পানি সবসময় তার ভিত্তিকে আর্দ্রতা সরবরাহ করে মজবুত রেখেছে।


ওই কর্মকর্তা বলেন, বর্ষা মৌসুমে তাজমহল নিয়ে ভাবনায় পড়তে হয় না। ভাবনায় পড়তে হয় শষ্ক মৌসুম আসার প্রাক্কালে। এখন বর্ষা মৌসুমের শেষ, যমুনার প্রবাহ ঠিক আছে, কিন্তু শষ্ক মৌসুম এলে এ প্রবাহ থাকবে না, বরং যমুনা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে, এ কারণে আর্দ্রতাহীনতায় ঝুঁকিতে পড়বে তাজমহলের ভিত্তি, সর্বোপরি তাজমহলও!


আগ্রায় যমুনার তীর ঘুরে দেখা গেছে, তাজমহলের প্রাণ বাঁচিয়ে রাখা এ নদীর পানিও দূষিত হয়ে চলেছে। মহিষ পালনসহ যমুনার তীর ও আশপাশের এলাকায় কারখানা গড়ে ওঠায় সেসবের বর্জ্য এই বহতা নদীতে পড়ছে। আর এতে করে স্বাভাবিক বিশেষত্ব হারাচ্ছে যমুনার পানি। যদিও তাজমহল বাঁচাতে ‍সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে দূষণের জন্য দায়ী এ অঞ্চলের ২৫৬টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তথাপি মনুষ্যসৃষ্ট কারণে দূষিত হয়ে চলেছে যমুনার পানি, আর তাজমহলকে আর্দ্রতা দেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে যমুনা।


তবে, যমুনার পানি কীভাবে প্রবহমান ও দূষণমুক্ত রাখা যায় এবং কীভাবে তাজমহল রক্ষা করা যায় এ নিয়ে নানা রকমের গবেষণা-সমীক্ষা চলছে বলে জানান প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ওই কর্মকর্তা।


এদিকে তাজমহলের দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্ব পর্যটনের অন্যতম বিস্ময় এ কেন্দ্রে সন্ধ্যার পর ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এ কারণে সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি তাজমহলের চাঁদনী রাতের মূল সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হন সুন্দরের পুজারীরা।

তাজমহলে কোনো বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও নেই বা কখনো এ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। তাছাড়া, তাজমহলকেন্দ্রিক দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পেট্রোল বা ডিজেলচালিত কোনো গাড়িও চলতে দেওয়া হয় না। কেবলই ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হয় দর্শনার্থীদের।


ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তুরস্ক, পারস্য ও এতদঅঞ্চলের শ্রেষ্ঠতম নির্মাণশিল্পী ও কর্মীদের সমন্বয়ে প্রায় ২০ হাজার লোক তাজমহল নির্মাণে ঘাম ঝরান। এ মহল নির্মাণের সময় গোটা মুঘল সাম্রাজ্যের রাজকোষে টান পড়ে যায় বলেও কথিত আছে।


এই ইতিহাস সবার জানা যে, চতুর্দশ কন্যা গৌহর বেগমের জন্ম দিতে গিয়ে সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম ওরফে মুমতাজ মহল মৃত্যুবরণ করেন। পরম প্রেয়সীর মৃত্যুতে প্রচণ্ডভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন মুঘল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী সম্রাট। প্রেয়সী স্ত্রীর স্মৃতিকে অমর করে রাখতে জগতে তাক লাগানো এ মহল নির্মাণের উদ্যোগ নেন শাহজাহান।


তাজ নামে খ্যাত তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রধান আকর্ষণীয় নিদর্শন বলে মনে করা হয়। এর নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটেছে অসাধারণভাবে। সাদা মার্বেলের গম্বুজাকৃতির রাজকীয় সমাধিটিই বেশি সমাদৃত হলেও তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। ১৯৮৩ সালে একে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো।

তাজমহলের অন্যতম আবেদন- এর মধ্যে প্রেমকে অমর করে রেখে যাওয়া সম্রাট শাহজাহান ও তার প্রেয়সী মমতাজের মাজার। দর্শনার্থীরা অবাক বিস্ময়ে তাজমহল ঘুরে দেখার পাশাপাশি শাহজাহান-মমতাজের মাজার জিয়ারত করতেও ভোলেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।