রামু (কক্সবাজার): ঈদের ছুটিতে ইতোমধ্যেই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভীড় জমিয়েছেন লক্ষাধিক ভ্রমণ পিপাষু মানুষ। কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি মন চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন পর্যটন উপজেলা রামু।
রামুতে রয়েছে নানা দর্শনীয় স্থান। হিমছড়ি ঝর্ণা ও জাতীয় উদ্যানতো আছেই। এছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ রাবার বাগান, আইসোলেটেড নারিকেল বাগান এ উপজেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
একই সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন, আধুনিক নকশা ও শৈলিতে ইট পাথুরে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহারগুলোও। তার মধ্যে অন্যতম- সম্রাট অশোক নির্মিত ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার, উত্তর মিঠাছড়ির একশ ফুট গৌতম বুদ্ধ মূর্তি, জাদিপাড়ার পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত প্রাচীন বৌদ্ধ জাদী, পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার, কেন্দ্রীয় সীমা বিহার ও হাজারীকুল বোধিরত্ন বৌদ্ধ বিহার।

নয়ানাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের রাজস্বী গ্রন্থের রম্যভূমি খ্যাত এ প্রাচীন জনপদে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। আর এসব দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ইতোমধ্যেই ভিড় জমাচ্ছেন দেশি-বিদেশী পর্যটক। পর্যটকদের যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে রম্যভূমি খ্যাত রামু।
হিমছড়ি
কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় দশ কি.মি. দক্ষিণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিমছড়ি। হিমছড়ি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা রয়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়কে সমুদ্র আর পাহাড়ের মধ্যদিয়ে প্রাণচঞ্চলতায় জিপে কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে অনায়াসে বেড়িয়ে আসুন ঝর্ণাধারার প্রবাহমান হিমছড়ি।
হিমছড়িতে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উদ্যোগে একটি পিকনিক স্পট তৈরি করা হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক সেখানে ভ্রমণ করে সাগর ও পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করেন।

প্যাগোড়া (চাতোপা জাদী)
১৭৯০ সালের দিকে বার্মিজরা আরাকান বিজয়ের পর রামু উপজেলার কাউয়ারখোপের জাদিপাড়া এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায় এটি নির্মাণ করে। তারা এটিকে স্মৃতিচিহ্ন বলে। কক্সবাজার সদর, রামু ও টেকনাফের পাহাড় বা উচু টিলায় এ ধরণের প্যাগোড়া দেখা যায়।

রাবার বাগান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে রামু রাবার বাগান ভিন্ন আমেজের অপরূপ দর্শনীয় স্থান। বিশাল জায়গা জুড়ে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন সংস্থার পরিকল্পনায় স্থাপিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাবার বাগান।

লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার
উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে লামার পাড়া গ্রামে অপূর্ব সৌন্দর্য মণ্ডিত বৌদ্ধ বিহারটি অবস্থিত। এ ক্যাং এ পিতল নির্মিত বৌদ্ধ মূর্তিটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উঁচু বৌদ্ধ মূর্তি। এত কারুকার্য খচিত বৌদ্ধ বিহার কক্সবাজার জেলায় আর কোথাও নেই।

রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার
রামু থানার রাজারকুল ইউনিয়নে পাহাড়ের চুঁড়ায় রাংকূট বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত। মন্দিরটি ২৫০০ বৎসর পূর্বে এ নির্মিত হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর সম্রাট অশোক অস্ত্র ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়ে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেন। রাংকূট বনাশ্রমে ছোট বড় আরো অনেক বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। রামু চৌমুহনী থেকে রাংকূট বনাশ্রমে রিকশায় করে যাওয়া যায়।

আইসোলেটেড নারিকেল বাগান
রামু চৌমুহনী হতে দক্ষিণে তিন কি.মি. দূরে রাজারকুলের পাহাড়ে মনোরম পরিবেশে ২৫০ একর জায়গায় এটি অবস্থিত। বাগানটি এ এবং বি ব্লকে বিভক্ত। প্রত্যেকটি ব্লকে ৪টি করে সাব ব্লক রয়েছে। বাগানে নারিকেল গাছের সংখ্যা প্রায় ৯,১১২টি।

১০০ ফুট গৌতম বুদ্ধমূর্তি
রামু চৌমুহনী হতে উত্তরে আড়াই কি.মি. দুরে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের পাহাড়ে মনোরম পরিবেশে গৌতম বুদ্ধ মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে উগ্রপন্থীরা বুদ্ধ মূর্তিটিতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে সরকার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এটিকে পনরায় নির্মাণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৪