ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

পাখির রাজ্য ডিবির হাওর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৪
পাখির রাজ্য ডিবির হাওর

সিলেট: সিলেটের ডিবির হাওর এখন অতিথি পাখির মুক্ত বিচরণভূমি। বালিহাঁস পাতিসরালি,পানকৌড়ি, সাদাবক ও জল ময়ুরীর মতো অতিথি পাখির ডানঝাপটায় অন্যরুপে সেজেছে এ হাওর।



আকাশে মুক্ত ডানায় ভর করে বাতাসে গা ভাসিয়ে দলবেঁধে হেলে-দুলে মনের সুখে উড়ে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। ঝিলে ধূসর রঙের হরেক প্রজাতির পরিযায়ী পাখি মেলে ধরেছে সীমান্তের সৌন্দর্যকে।


এ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাওরের চারপাশে জমির ওপর হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখা যায় পাখিদের। ডানা ঝাঁপটিয়ে পাখিরা স্বাগত জানায় অতিথিদের। পাখিদের মুখরতায় ডিবির হাওর ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকে পাখিময় উচ্ছল।

কিন্তু ডিবির হাওরের পরিযায়ী পাখির অবিরাম ছুটে চলা, খুনসুটি, জলখেলী আর ডুব সাতারের মনমুগ্ধকর দৃশ্য এখনও অনেকের অজানা।

শীতের এ মৌসুমে অতিথিদের বরণ করে নিতে ডিবির হাওরও যেন সেজেছে অপরুপ সাজে।


সমস্ত বিল জুড়ে ফুটেছে শত শত শাপলা। একটি ধ্বংসপ্রায় মন্দির আছে ডিবির হাওরের মাঝে। যেকেউ চাইলে মন্দিরটি ঘুরে দেখতে পারেন। জৈন্তা রাজ্যের এক রাজাকে এ হাওরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিলো। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন এ মন্দিরটি এখন জীর্ণ-শীর্ণ।

প্রাচীন রাজার মৃত্যুস্মৃতি বিজড়িত এ হাওর এখন পাখিদের রাজত্ব। সেখানে নিশ্চিন্তে বিচরণ করছে শীতের হাজার হাজার পাখি। বিশাল হাওর শুকিয়ে যেটুকু জলাশয় তার ওপরই পাখদের বিচরণ বেশি।

এদিকে ডিবির হাওরে বিজিবির বিশেষ ক্যাম্প রয়েছে। ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা বাংলানিউজকে জানান, পর্যাপ্ত খাবার থাকায় হাওরে পাখি আগমন বাড়ছে।   তাছাড়া এখানে পাখি শিকারীদের উৎপাত নেই।

ডিবির হাওর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী বাংলানিউজকে জানান, সকালের দিকে পাখিরা স্নান করে, দুপুরের সময় দলবেঁধে উড়তে থাকে। এভাবে দলবেঁধে পানির মধ্যে খেলা করতে থাকে বিকেল পর্যন্ত।

ডিবির হাওর এলাকায় একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণের কাজ করছেন নাট্যনির্মতা রব তাপাদার।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ডিবির হাওরে পাখিদের অবাধ বিচরণ পর্যটকদের  টানবে নতুন করে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পাখিদের অবাধ বিচরণে যেন বিঘ্ন না ঘটে। কেউ পাখি শিকার করতে না আসে।


পাখিদের আলোকচিত্র ক্যামেরাবন্দি করতে ছুটে এসেছেন আলোকচিত্রী আরিফুর রহমান আরিফ।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ডিবির হাওরে শীতে এতো বেশি অতিথি পাখি আসে যা এখনও অনেকের অজানা। বিজিবি ক্যাম্প ও স্থানীয়রা সতর্ক থাকায় পাখিরা অবাধে হাওরের জলাশয়ে আপন মনে ঘুরে বেড়ায়।

পাখি দেখতে প্রতিবছর দেশের বিল-ঝিল ঘুরে বেড়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয় ছাত্র যুবরাজ রায় পাভেল।

তিনি বলেন, ডিবির হাওর একটি প্রাচীন জলাশয়। সে হিসেবে এখানে প্রতিবছর অতিথি পাখির সমাগম ঘটবে। দেশের অনেক স্থানেই পাখিদের শিকার করা হয় বলে খবর পাওয়া যায়। কিন্তু এখানের স্থানীয়রা পাখিদের প্রতি যত্নশীল বলেই মনে হয়।


পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখিদের মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নিদিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় রয়েছে এমন ৬০০ প্রজাতির পাখি। এসব পাখির মধ্যে ১৫০ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে প্রতি বছর বেড়াতে আসে।

যেভাবে যাবেন ডিবির হাওর
সিলেট থেকে বাস ও লেগুনায় যাওয়া যায় জৈন্তায়। জৈন্তা থেকে সিলেট-তামাবিল সড়কে আরও দুই কিলোমিটার গেলেই ডিবির হাওর এলাকা। সেখানে ডিবির হাওর বিশেষ সীমান্ত ফাঁড়ির রাস্তা ধরে হাটলেই চোখে পড়বে একের পর এক জলশয় এবং অতিথি পাখিদের উড়াউড়ি।
 
বাংলাদেশ সময়:  ০৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।