ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

সাতের সাতসতেরো

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১০
সাতের সাতসতেরো

রূপকথার মদনকুমার স্বপ্নে দেখলেন মধুমালাকে। সে যেন স্বপ্ন নয়, সত্যি।

দুই পরীর মধুর দুষ্টুমিতে তাদের মালাবদল হলো, আংটি বদল হলো। ভালোবাসাবাসি হলো। কিন্তু ঘুম ভেঙে গেলে মদনকুমার দেখলেন মধুমালা তার পাশে নেই। হায় হায়! কী হবে? কীভাবে মদনকুমার ফিরে পাবে তার স্বপ্নের মধুমালাকে। আঙুলে তার মধুমালার আংটি, গলায় তার মধুমালার মালা। রাজকুমার পাগল হয়ে হায় মধুমালা! হায় মধুমালা! বলে ঘুরতে লাগলেন। ভাগ্যিস তার মনে ছিল মধুমালা উজানীনগরের মধুকর রাজার কন্যা। তারপর সব বাধা-নিষেধ পেছনে ফেলে মদনকুমার ছুটলেন মধুমালার খোঁজে। কিন্তু কীভাবে? সপ্তডিঙ্গা মধুকর সাজিয়ে। কিন্তু এই সপ্তডিঙ্গা কেন? পঞ্চডিঙ্গা বা অষ্টডিঙ্গাও তো হতে পারত, তাই না? এখানেই সপ্ত বা সাত সংখ্যাটির রহস্য। এ রহস্যের কোনো কূলকিনারা নেই। তাই লোকে সাত সংখ্যাটি ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মেনে নিয়েছে, যাকে আন্তর্জাতিকভাবে বলা হয় ‘লাকি সেভেন’। পৃথিবীর দেশে দেশে সাত সংখ্যাটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তেমনি আমাদের দেশেও। সংখ্যাটির ফিরিস্তি শুনলেই তা বোঝা যায়। যেমন সাত দিনে এক সপ্তাহ, পৃথিবীতে মহাদেশ সাতটি, আমাদের স্রষ্টাও থাকেন সপ্তম আসমানে, নয়নাভিরাম রঙধনুর রয়েছে সাতটি রঙ, আকাশে সাতটি তারার নামকরণ করা হয়েছে সাতজন ঋষির নামে আর এগুলোকে একত্রে বলাও হয় সপ্তর্ষিমণ্ডল এছাড়া সঙ্গীতের প্রধান শুদ্ধ স্বরও সাতটি।

ঐতিহাসিক দিক থেকেও সাত সংখ্যাটির গুরুত্ব কম নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সেই বিখ্যাত জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছিলেন ৭ মার্চ, ১৯৭১। ৭ নভেম্বরেই  প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্থান। এছাড়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ আর তাদেরসহ সব বীর শহীদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে ৭টি স্তম্ভের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দণি এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ ৭টি। আবার পৃথিবীর শিল্পোন্নোত দেশগুলো মিলে গঠন করেছে সাত জাতি গ্রুপ (তবে বর্তমানে আট)। এই যে সাতের জয়জয়কার, একে কি শুধু কাকতাল বলা যায়, নাকি আরও কিছু!

কথায় কথায় আমরা সাতের ব্যবহার করি। যেমন, কাউকে খুব সকালে কোথাও যেতে দেখলে আমরা বলি ‘কি হে এই সাত সকালে কোথায় যাও। ’ অথবা সন্তানকে আদর করে আমরা বলি ‘তুই আমার সাতরাজার ধন, মানিক রতন। ’ সাত ভাইয়ের একটি বোন নিয়েও একটি রূপকথা আছে, যার নাম ‘সাত ভাই চম্পা’। তাছাড়া বাড়িতে অনেক রান্নার আয়োজন করা হলে বলা হয়, সপ্তপদের রান্না। ‘সপ্তপদী’ নামে একটি উপন্যাস আছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের, যা নিয়ে তৈরি হয়েছে একই নামের বিখ্যাত চলচ্চিত্র। কারো বা কোনো জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ বা কাহিনীকে এক কথায় আমরা ‘সাতকাহন’ বলে থাকি। এছাড়া আমরা সবাই জানি সাত একটি মৌলিক সংখ্যা।

এই যে সাতের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, তারপরও সাত কিন্তু আমাদের অপছন্দের তেরোর সঙ্গে জোট বেঁধেছে। অবশ্য সেটা আমরাই বাঁধিয়েছি। আর সেটা হলো আমরা অনেক দূর বোঝাতে হরহামেশাই বলি ‘সাত সাগর তেরো নদীর পারে’।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১১১৫, জুলাই ০৭ ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।