কখনো কখনো জীবন হয়ে উঠে একঘেয়ে! একেবারে গতানুগতিক! কিছুতেই মন বসে না কিছুতে। ঠিক এমনি কোনো বিষণ্ন মুহূর্তে ছুটে চলা কোনো জলধ্বনি, মন ভালো করার দারুণ দৃশ্য হয়ে উঠতে পারে।
প্রকৃতি মানেই মানুষের চির ভালো লাগার আনন্দমুখর এক নির্জন স্থান। প্রকৃতির কাছাকাছি এলে মানুষের সব ক্লান্তি, সব ধরনের অবসাদ ক্ষণিকের জন্য দূর হয়ে যেতে থাকে। তখনই সর্বদেহে মনে আসতে শুরু করে সতেজতা। এমন সতেজতাটুকু কর্মক্ষেত্রে ছাপিয়ে পড়ার তীব্র আগ্রহের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। প্রকৃতির মাঝেই এমন অপূর্ব সব সতেজতার উপাদান ছড়িয়ে আছে। দু’চোখভরে শুধু দেখে নেওয়ার অপেক্ষা।
‘জলধ্বনি’ মানে প্রবাহিত পানির দারুণ শব্দ! গতিময় ছুটে চলার যে ধ্বনি হৃদয়ে ভালোলাগার ঝংকার তোলে। নির্জন একাকিটুকুকে এই শব্দ নান্দনিক ও সুরময় করে তুলে। ‘শিথিল সব শিলার পর, চরণ থুই দোদুল মন — দুপুর-ভোর ঝিঝির ডাক, ঝিমায় পথ, ঘুমায় বন’ –সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এভাবেই ‘ঝরনার গান’ কবিতায় পানির প্রবাহমান গতিকে ছন্দে বেঁধেছেন।
বহু দূরে থেকে ছুটে আসা এ জলধারা কোনো কোনো স্থানে এসে জলধ্বনিতে পরিণত হয়েছে। ডুবন্ত পাথর, মৃত গাছের ডাল বা অন্য কিছুর সাথে বাঁধা পেয়েই এই দারুণ ধ্বনি হৃদয়ে অন্যরকম ভালো লাগা ছড়ায়। এই ধ্বনিতেই মিশে রয়েছে মনসংযোগের ব্যতিক্রমী মুগ্ধতা।
পাশের প্রকৃতিতেই গাছগাছালি ঘেরা অদূরের প্রান্তর। এই পাহাড়ি ঝরনার পাশে দাঁড়ালে সেই অপূর্ব দৃশ্য চোখের সীমারেখায় জলের কলকল শব্দের সাথে সৌন্দর্য ছড়াতে থাকে। সূর্যের কিরণ ঝরনার গতিময় শরীরে পড়ে ঝিকিমিকি আলোকরশ্মিতে পূর্ণ হয়ে উঠে। অপূর্ব সেই দৃশ্যপট!
ওপরে আকাশের নীলে জীবনানন্দ দাশের ‘শঙ্খচিল’ খয়েরি ডানায় ভর করে খাদ্যসন্ধানে মুখরিত হয়ে রয়েছে কিছুক্ষণ। এই পুরো দৃশ্যপটটিকে যদি কোনো রঙের ক্যানভাসের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে ঝরনা, পাহাড়, শঙ্খচিল এগুলো প্রতিটি একেকটি বর্ণিল সৌন্দর্যের অদেখা উপকরণ।
যা আমাদের কর্মক্লান্তি, বিরামহীন অবসাদ দূর করতে পথ্যের মতোই মহা গুরুত্ববহ।
বিবিবি/এএটি