ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

গোবিন্দগঞ্জে ‘বিরাট রাজার ঢিবি’ খনন, মিলছে বড় বড় অবকাঠামো

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ‘বিরাট রাজার ঢিবি’ খনন, মিলছে বড় বড় অবকাঠামো

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে রাজাহার ইউনিয়নে ঐতিহাসিক ‘বিরাট রাজার ঢিবি’তে খনন করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।  

প্রথমবারেরর মতো এ খনন অভিযানে মিলছে ধারণার চেয়ে বড় বড় ইটের তৈরি প্রাচীন অবকাঠামো।

সেই সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

যেগুলো প্রাচীন ও মধ্যযুগের হতে পারে বলে ধারণা করছে খনন কাজে নিয়োজিত রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক দল।

দীর্ঘদিন ঢিবিটির আকার ৫০ মিটার, প্রস্থ ৩৫ মিটার এবং উচ্চতা চার মিটার। এছাড়া এর আশপাশে রয়েছে আরও চারটি ঢিবি।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খননকারী দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা এসব তথ্য জানান।

দলের আট সদস্যের অপর সাতজন হলেন- ড. আহমেদ আবদুল্লাহ, রাজিয়া সুলতানা, হাবিবুর রহমান, এস এম হাসানাত বিন ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, তারিকুল ইসলাম ও উম্মে সালমা ইসা। এছাড়া ২০ জন শ্রমিক খনন কজে নিয়োজিত আছেন।

ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, খনন করে ধারণার চেয়ে বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এখানে পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট (সাধারণত ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হতো), ভিত্তিপ্রস্তর পিলার পাওয়া গেছে, যা প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে। তবে নিদর্শনগুলো ঠিক কোন সময়ের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল, খনন কাজ সম্পন্ন না হলে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়।

জনশ্রুতি আছে, এখানে প্রাচীন একটি দুর্গ নগর ছিল। এর নিরাপত্তার জন্য ছিল সুউচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও গভীর পরিখা। তবে খননকারী দল এখনো প্রাচীন দুর্গ নগরের কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মূল অবকাঠামোর সঙ্গে আরও দুই-তিনটি মন্দিরের সংযোগ সড়ক ছিল, যা ধ্বংসপ্রাপ্ত।

এর আগে খাজা এম এ কাইয়ুম নামে স্থানীয় এক গবেষক দীর্ঘ ৪০ বছর বিরাট রাজার ঢিবি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার নোটবুকের তথ্যানুসারে, বিরাট রাজা পুরো ভারতবর্ষে ‘মৎস্যরাজ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ অঞ্চলে মাছ চাষের জন্য তিনি ৯৯৯টি পুকুর খনন করেন।  

এছাড়া রাখাল রাজ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২৫-২৬ সালে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ১৯০৫ সালের দিকেও এ স্থানটি জঙ্গলে ঘেরা ছিল। কয়েক বছর আগে সাঁওতালরা জায়গাটি পরিষ্কার করে ঘরবাড়ি তৈরি করেন।  

নাহিদ সুলতানা আরও বলেন, প্রত্নতত্ত্বস্থলটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। তবে বড় পরিসরে খনন কাজ করে জায়গাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিরাট রাজার ঢিবি খনন কাজ শুরু করে গত বছর। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি খনন দল এ কাজটি করছে।

আনুষ্ঠানিক খনন কাজ শুরুর আগে এখানে ১৯৭৮ সালে পাওয়া যায়, সংস্কৃত অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘নম: নম: বিরাট’। নয় ইঞ্চি দীর্ঘ এ শিলালিপিটি মহাস্থান জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

এছাড়া কৃষ্ণ রঙের শিলা পাথরে তৈরি হাতির মাথাটি রাজশাহী জাদুঘরে ও সিংহদ্বারের একটি পাথরের খুঁটি মহাস্থান জাদুঘরে রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।