ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

‘ভাইরাল বাপ্পি’ বেচেন পাঙাশের কাঁটা, ফুরিয়ে যায় নিমেষেই

ডিএইচ বাদল, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
‘ভাইরাল বাপ্পি’ বেচেন পাঙাশের কাঁটা, ফুরিয়ে যায় নিমেষেই বাপ্পির কাছ থেকে পাঙাশের মাথা ও কাঁটা কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: নাম বাপ্পি, বয়স ১৮ বছরের বেশি নয়। গ্রামের বাড়ি বরিশাল হলেও থাকেন যাত্রাবাড়ির কুতুবখালীতে।

ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন মাছের আড়তে কাজ করতেন তিনি। এখন তিনি নিজেই মাছ বিক্রি করেন।  ‘ভাইরাল বাপ্পি’ বলেও সবাই তাকে চেনে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী থানা পাড় হয়ে একটু সামনে গেলেই দেখা পাওয়া যাবে বাপ্পিকে। তিনি এখন মাংসবিহীন পাঙাশ মাছের কাঁটাসহ মাথা বিক্রি করে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

কাঁটাসহ মাছের মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ থাকলেও মাছ বলতে তেমন কিছুই থাকে না।

মাংসবিহীন পাঙাশের কাঁটা বিক্রি করছে বাপ্পি।  ছবি: ডিএইচ বাদল

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজারে মাছের দাম আকাশছোঁয়া। পাঙাশ মাছের দাম এমনিতেই কেজিতে ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেরই এই মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব হয়ে পড়ে না।  

তাই তারা এই সময় মাংস ছাড়া মাথাসহ কাটা কিনে নিয়ে দুধের সাধ ঘোলে মেটান। ছোট এই টুকরোগুলোর প্রতিটির দাম জোড়া ৭০ ও একপিসের দাম ৪০ টাকা বিক্রি করেন বাপ্পি।

সকাল ৯ টায় যাত্রাবাড়ী পাঙাশের আড়তের সামনে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকজন ক্রেতা কাঁটা কিনতে অপেক্ষা করছে। ১০টার পর বাপ্পি মাথায় করে কাঁটা আনতেই হুমড়ি খেয়ে পড়লেন ক্রেতারা। কার আগে কে নেবে! 

জানা গেছে, রাজধানীর রেস্তোরাঁগুলোতে কাঁটাবিহীন পাঙাশ বিক্রি হয় ৪০০ টাকা কেজি দরে। এসব মাছের বেঁচে যাওয়া কাঁটাগুলোই চলে আসে যাত্রাবাড়ী বাজারে।

আজ ৭০ পিস মাথাসহ কাঁটা এনেছিলেন বাপ্পি। ১৫ মিনিটের মধ্যে বিক্রি শেষ।  

বাপ্পি বলেন, আগে এগুলো ফেলে দিতাম। পরে দেখি এগুলো গরিব-অসহায়রা নেয়। আমার খুব ভালো লাগে যে, যাদের আস্ত পাঙাশ মাছ কিনে খাওয়ার সক্ষমতা নাই তারা আমার থেকে এই মাথাসহ কাঁটা কেনেন। তারা পরিবারসহ মুড়িঘণ্ট অথবা ডাল দিয়ে রান্না করে খায়। এগুলো প্রতিপিস সাইজ বুঝে ৫০ টাকা ৪০ টাকায় বিক্রি করি। বেশি গরিব দেখলে ২০ টাকায় ও দিয়ে দিই।

বাপ্পি প্রতিদিন সকাল ১০টায় যাত্রাবাড়ী রাজীব ফিস সাপ্লাই দোকান থেকে এই কাঁটা কিনে এনে মাছের আড়তের সামনের রাস্তায় বিক্রি করেন। তার দেখাদেখি অনেকে এই কাঁটা বিক্রির পেশায় নেমেছেন।

ছবি: ডিএইচ বাদল

সানারপাড় থেকে এই মাথাসহ কাঁটা কিনতে আসা মুনসুর আলী বলেন, ভ্যানগাড়িতে করে শত শত মাছের ডালা এই আড়তে নিয়ে আসি। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে মাছ খেতে পারি না। তাই বাধ্য হয়েই এই মাথাসহ কাঁটা কিনে নিয়ে যাই। মাছের মাংসগুলো কেটে নেওয়ার পর খুবই সামান্যই অংশ যায় কাঁটার গায়ে লেগে থাকে। এর সঙ্গে ডাল দিয়ে মুড়িঘণ্ট রান্না করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দুইবেলা তো খেতে পারি। এটাই তৃপ্তি লাগে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।