ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

‘লোক দেখেই বুঝতে পারি, কতটুকু খেতে পারবে’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২২
‘লোক দেখেই বুঝতে পারি, কতটুকু খেতে পারবে’  অতিথিদের খাবার পরিবেশন করছেন রায়হান। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মানুষের জীবনের মূল্যবান একটি পর্ব ‘বিয়ে’। একাকীত্ব জীবনের ইতি টেনে এ পর্বটি মানুষের জীবনের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়।

‘যুগল’ শব্দটি ধারন করে জীবন। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ দ্বৈত হয়ে বসবাস শুরু করে। পৃথিবীতে পরবর্তী বংশধর রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই মানুষ বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়। বেছে নেয় পছন্দের মানব কিংবা মানবীকে।  

বিয়ের অন্যতম পর্বটির প্রীতিভোজ অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়া। নিজের জীবনের এই পরম আনন্দঘর মুহূর্তের সঙ্গী হতে নিমন্ত্রণ বা দাওয়ার করা বিশেষ মানুষদের তো খাওয়াতেই হবে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল পরিস্থিতি আর পরম আন্তরিকতার সঙ্গে বিয়ের এই বিশেষ পর্বটি সম্পন্ন হয়।

এই পর্বটি সুসম্পন্ন করতে পরিবারের লোকদের দিয়ে হয় না। বাড়তি লোকের প্রয়োজন পড়ে। এই বাড়তি লোকদের সংগঠিত নাম ‘বয় সার্ভিস’। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে ভোজনপর্বে আমন্ত্রিত অতিথিদের এসব তরুণরাই যত্নের সঙ্গে খাইয়ে থাকে। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার বা বিলাসবহুল বিয়ের পর্বের উৎসবে এসব বালকরাই শেষ ভরসা। এদের মাধ্যমেই মানসম্মান রক্ষা হয়। এদের পরিশ্রম আর আন্তরিকতা ব্যবহার প্রতিটি অতিথির সন্তুষ্টি লাভের পূর্বশর্ত। এমন সম্মিলিত রসনাবিলাসে তাই এসব বয়সীদের এত কদর। এত মূল্যায়ন। কেননা এদের মাধ্যমেই অতিথিকূলে ফিরে আসে তৃপ্তি, সুখ, স্বস্তি।

সম্প্রতি কথা হয় শ্রীমঙ্গল বয় সার্ভিস গ্রুপের অন্যতম সদস্য রায়হানের সঙ্গে। কমিউনিটি সেন্টারের প্রীতিভোজ বিষয়ের বিভিন্ন দিক উঠে আসে ওই আলোচনায়।  

রায়হান বলেন, আমাদের এই কাজটিকে ‘বয় সার্ভিস’ বলে। পুরো শ্রীমঙ্গলে আমার মতো বয় প্রায় ৪শ হবে। আমরা এখানে পার্টটাইম কাজ করি। যদি মুসলিম ধর্মীয় বিয়ে হয় তবে সর্বোচ্চ ৩/৪ ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায়। ধরেন, দুপুর ১টার দিকে খানাপিনা শুরু হয়ে ৩ বা ৪টার দিকে সব শেষ হয়ে যায়।  আর সনাতন ধর্মীয় বিয়ে হলে অনেক দেরি হয়। কারণ, এই বিয়ে লগ্নর ওপর নির্ভরশীল। গভীর রাতে লগ্ন হলে স্বাভাবিকভাবেই বিয়ে দেরি হয়। আমরা সন্ধ্যায় যাই আর বিয়ে শেষ করে আসতে আসতে রাত ২টা/৩টা বাজে। সনাতন ধর্মীয় বিয়েতে আমাদের তুলনামূলক কষ্ট বেশি হয়।

রায়হান আরও বলেন, পরিবেশের নির্দেশনা একেক বিয়েতে একেক রকম থাকে। যেমন, কোনো বিয়েতে আমাদেরকে আগে থেকেই বলা হয় যে, যারা মাছ বা মাংস পুনরায় নিয়ে খেতে চাইবে তাদেরকে মাছ-মাংস দিতে পারবে। কোনো অসুবিধা নেই। আবার কোনো কোনো বিয়েতে আগে থেকেই বলা থাকে ১ পিস বা ২ পিসের বেশি কোনো অবস্থাতেই কাউকে দেওয়া যাবে না। বেশি দিলে পার্টির শট পড়বে (কম পড়ে যাবে)। আমরা বিয়ের আয়োজকদের সেই নির্দেশ মতো পরিবেশন করি থাকি।  

‘তবে আমরা মানুষ দেখেই বুঝতে পারি, কোনো লোকটি কতটুকু খেতে পারবে’ বলে যোগ করেন রায়হান।  

তাদের পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এই কাজের জন্য জনপ্রতি ২শ টাকা নিয়ে থাকি। প্রতিটি বিয়েতে ৭ জন, ১০ জন, ১২ জন বা ১৫ জনও নেওয়া হয়ে থাকে। কম সংখ্যক অতিথির দাওয়াত হলে অল্প কয়েকজন সার্ভিস বয় লাগবে। যেমন ধরেন, ৩শ মানুষের খাবারের আয়োজন হলে কম করে হলেও ৫ জন সার্ভিস বয় লাগবে। আমাদের কাছেই পার্টির মানসম্মান, ইজ্জত সবকিছুই নির্ভর করে। আমরা যদি সুন্দর মতো যত্ন করে খাওয়াতে পারি, তবে এটা পার্টির সুনাম।
 
আমি দুই বছরের বেশি সময় ধরে এই পার্টটাইমে কাজ আছি। এমনিতে আমাদের ডেকোরেটার্সের দোকান আছে। এই পর্যন্ত হিন্দু-মুসলিম বিয়ে নিয়ে প্রায় ৫শ বিয়েতে আমি বয় হিসেবে খাবার পরিবেশন করেছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুপুর এবং রাতেও দুই বেলা ডাবল সার্ভিস দিতে হয়েছে।
 
‘গ্রামের এক মুসলিম বিয়েতে এক জামাই তার শাশুড়িকে সালাম করতে গিয়ে শাশুড়ির পায়ে নতুন বুটজুতা দিয়ে জোরে পারা দিয়ে বসে। জুতার চাপা খেয়ে শাশুড়ি চিৎকার দিয়ে উঠেন এবং তাকে ধরতে শ্বশুর এগিয়ে এলে ভিড়ের মাঝে মাথায় আঘাত পেয়ে পড়ে যান’ বলে খাবার পরিবেশপর্বে মজার ঘটনা সম্পর্কে জানান রায়হান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২২ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।