ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ফেলে যাওয়া নীড়ে ফিরছে শামুক খোল পাখিরা, কিন্তু?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:৫৪, জুন ১৮, ২০২০
ফেলে যাওয়া নীড়ে ফিরছে শামুক খোল পাখিরা, কিন্তু?

রাজশাহী: রাজশাহীর খোর্দ্দ বাউসার আমবাগানের সেই পাখিগুলোর জন্য স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা না হলেও আবারও পুরোনো নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে শামুক খোল পাখিরা। প্রজননের জন্য প্রতিবছর উড়াল দিয়ে এখানে আসে পাখিগুলো।

এবারও ব্যত্যয় ঘটেনি। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম বাগানে ফিরছে অতিথি পাখিগুলো।

তবে স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় আবারও বেকায়দায় পড়েছেন এ এলাকার বাগান মালিকরা। আমের ভরা মৌসুমে গাছে পাখি বাসা বাঁধলে এবার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বাগান মালিকরা।

এখন তারা অতিথি পাখিগুলোকে তাড়িয়ে দেবেন, নাকি বাগানে থাকতে দেবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। পাখির বাসা বাঁধতে দিলে আমের ক্ষতি হবে। এরই মধ্যে পাখি আসতে শুরু করায় উৎসুক পাখিপ্রেমীরা আবারও তাদের দেখতে ভিড় করছেন।  

এর আগে গত বছর খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম বাগানে অথিতি পাখিরা বাসা বাঁধে। গত বছরের ২৯ অক্টোবর বাগান মালিক একটি গাছের কয়েকটি বাসা ভেঙে দেন। স্থানীয় পাখিপ্রেমীদের অনুরোধে তিনি পাখিদের বাসা ছাড়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন।  
 
পরে এ নিয়ে খবর প্রকাশ হলে সারাদেশে হৈ চৈ পড়ে যায়। বিষয়টি শেষমেষ গড়ায় উচ্চ আদালত পর্যন্ত। পরে গত বছরের ৩০ অক্টোবর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে আমবাগানে থাকা পাখির বাসাগুলো না ভাঙতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, দুই মাস পাখির বাসাগুলো ভাঙা যাবে না।  

একই সঙ্গে ওই এলাকা কেন পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। এছাড়া এলাকাটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে বাগান মালিক ও বাগানের ইজারাদারের ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত চার বছর থেকে পাখিগুলো এ বাগানে বাচ্চা ফোটায়। বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে তারা আবার চলে যায়।

এর পর কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে পাখিদের স্থায়ী আবাস গড়ে তোলার জন্য নির্দেশনা পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাখির বাসার জন্য বছরে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।  

এ অবস্থায় সেই অতিথি পাখিরা আবারও বর্ষার শুরুতেই আসছে। এরই মধ্যে খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের দু’টি আমগাছ দখল নিয়েছে। ধীরে ধীরে তারা বাকি গাছগুলোতে বাসা বাঁধতে শুরু করবে এমন আশঙ্কাই ভর করেছে বাগান মালিকদের মনে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের নির্দেশের পর গত বছর রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিনি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন রেজা বাগানে গিয়ে সার্বিক বিষয়ে জরিপ করেন।  

তারা যৌথভাবে নিরূপণ করেন যে, বাগানের মোট ৩৮টি আমগাছে পাখিরা বাসা বেঁধেছিল। ওই সময় এ গাছগুলোতে থাকা আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার খরচ নিরূপণ করেন। সব মিলিয়ে পাখির বাসাগুলো স্থায়ী করতে বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হবে বলে প্রতিবেদন তৈরি করেন। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তা কৃষি মন্ত্রলালয়ে পাঠানো হয়। কিন্ত পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে এখন সরকার অর্থ বরাদ্দ দিলে তারা সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করতে পারবেন।

কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান আরও বলেন, পাখিদের অভয়ারণ্য করতে সেখানকার অন্তত ১০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এজন্য ৩৮টি আমগাছের মূল্যসহ আরও কমপক্ষে দুই কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন। সেই টাকাও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। দুই প্রস্তাবই মন্ত্রণালয়ে আছে। এখন সিদ্ধান্ত এলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
এসএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।