ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ঝুড়িঠোঁটের পেলিক্যান

পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৩
ঝুড়িঠোঁটের পেলিক্যান

আজব পাখি পেলিক্যান। শিকার ধরার পদ্ধতি যেমন তাদের ভিন্নতা, তেমন স্বতন্ত্র বাচ্চা ফোটানোর ক্ষেত্রেও।

দেখতে দারুণ সুন্দর। তবে অদ্ভুত তাদের ঠোঁটের নিচের অংশ। বাংলাদেশে এর পরিচিতি গগনবেড় নামে।


পেলিক্যান গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও নাতিশীতোষজ্ঞ অঞ্চলের পাখি হলেও ইউরোপ, আমেরিকায়ও রয়েছে অনেক প্রজাতির পেলিক্যান। পর্যাপ্ত পরিমাণে পেলিক্যান এদেশে কখনোই দেখা যায়নি, তবে আগে মাঝে মাঝে বিশেষ করে শীতের মৌসুমে প্রায়ই কিছু কিছু চোখে পড়তো। এখন কদাচিৎ চোখে পড়ে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং চট্টগ্রাম জেলার দূরবর্তী দ্বীপ অঞ্চলের মোহনায়।


লম্বা নিচে ঝুলে থাকা নরম প্রসারিত ঝুড়িরে মতো অংশ এদের অন্য পাখি থেকে করেছে আলাদা। প্রজাতিভেদে হালকা গোলাপি বা বেগুনি রঙের থলেটি এরা সংকুচিত ও প্রসারিত করতে পারে। পা হাঁসের পায়ের মতো হওয়ায় এরা সাঁতারে খুব পটু। খাদ্য হিসেবে পেলিক্যান শুধু মাছই খায়।

এদের মাছ ধরার কায়দাটি বড় মজার। দলবেঁধে কয়েকটি পাখি তাদের ঠোঁটের তলার থলেটি যথাসম্ভব প্রসারিত করে ঠেলাজালের মতো করে ঠেলতে ঠেলতে অর্ধচন্দ্রাকারভাবে চলে আসে গভীর পানি থেকে ডাঙার দিকে। তখন মাছ দিশেহারা হয়ে ঢুকে পড়ে ঠোঁটের তলার জালের মতো করে পেতে রাখা থলিতে। থলিটি কিন্তু লম্বা হয় প্রায় এক ফুট। তখন এতে পানি ধরে প্রায় পাঁচ লিটার সমান।


এছাড়া এককভাবেও এরা দারুণ সুযোগ সন্ধানী। যখন কোনো ফিশিং ঈগল (কোড়া) মাছ শিকার করে তখন আর একটি ঈগল উড়ন্ত অবস্থায় এসে সেটা ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে। এই কাড়াকাড়ি যখন চলতে থাকে তখন প্রায়শই শিকারটি নিচে পড়ে যায়। মাটিতে পড়ার আগেই ওত পেতে থাকা পেলিক্যান তার থলি দিয়ে সেটি লুফে নিয়ে পালিয়ে যায়।

দুই থেকে চার বছর বয়সে একটি পেলিক্যান প্রাপ্তবয়স্ক হয়। বাসা করে শকুনের মতো ডালপালা দিয়ে। ডিম পাড়ে দুই থেকে চারটি। স্ত্রী-পুরুষ মিলে তা দেয় এক মাস। তারপর ডিমের ভেতর বাচ্চারা চিঁ চিঁ শুরু করলে মা নজর দেয় ডিমের দিকে। তারপর আস্তে আস্তে ভেঙে দেয় ঠুকরে ঠুকরে। বাচ্চগুলো ডিম থেকে বের হয়ে খুব দুর্বল থাকে। তিনমাস পর বাচ্চা নিজে খাবার খেতে শেখে।


পূর্ণ বয়স্ক পেলিক্যানের পাখা প্রসারিত অবস্থায় ছয় থেকে দশ ফুট পর্যন্ত হয়। এদের পাখা খুব শক্তিশালী। ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪০ মাইল বেগে উড়তে পারে এরা। আকাশে ভেসে থাকতে পারে কয়েক ঘণ্টা।

কোনো কোনো পেলিক্যান সাগরের ২৫ থেকে ৫০ ফুট উপর থেকে মাছ দেখে হঠাৎ করে পানির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠোঁট দিয়ে সেই মাছ তুলে আনে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।