২৯ ফেব্রুয়ারি, নিঃসন্দেহে এক দুর্লভ ও ব্যতিক্রমী দিন। প্রতি বছর তো আর তারিখটি আসে না।
সম্প্রতি একুশে পদক পাওয়া খ্যাতিমান অভিনেতা ও নাট্য-ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ জন্মদিন হলো ২৯ ফেব্রুয়ারি। দিনটি তার কাছে নিশ্চয়ই ভীষণ আকাক্সিক্ষত। মামুনুর রশীদের কাছের মানুষ ও শুভানুধ্যায়ীদের জন্যও নিশ্চয়ই এটি বহুল প্রতিক্ষীত, কারণ প্রিয়জনকে তো প্রতিবছর তারা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে পারেন না। এই বিশেষ দিনটি নিয়ে মামুনুর রশীদের অনুভূতি জানতে বাংলানিউজ তার মুখোমুখি হয়?
বাংলানিউজ : আমাদের দেশের অনেকেরই জন্মদিন দুইটি। একটি হলো পৃথিবীর আলো দেখার দিনে, অন্যটি স্কুলে ভর্তি হওয়া সূত্রে। আপনার জন্মদিন কয়টা?
মামুনুর রশীদ : আমার এই একটাই জন্মদিন ২৯ ফেব্রুয়ারি। তবে বাবা আর মাকে আমার জন্মতারিখটা নিয়ে দ্বিধান্বিত হতে দেখেছি। আমার দাদা তার বংশধরদের সবার জন্মের খুঁটিনাটি নিয়ে লিখে রাখতেন ডায়েরিতে। সেই ডায়েরিটা হারিয়ে যাওয়ার কারণে এই দ্বিধার জন্ম হয়। তবে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে ২৯ ফেব্রুয়ারি তারিখটাই জন্মদিন হিসেবে চুড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়।
বাংলানিউজ : চার বছর পরপর জন্মদিন, বিষয়টা কেমন লাগে?
মামুনুর রশীদ : ভালোই লাগে। ব্যতিক্রমী একটা ব্যাপার। মনে হয় বিষয়টা একদিক দিয়ে ঠিকই আছে, প্রতিবছর হলে সবার ঝামেলা হয়ে যেত। কারণ কাছের মানুষরা আমার জন্মদিনটি ইদানিং পালন করতে চায় । প্রতিবছর জন্মদিন পালনের জন্য সময় বের করা আমার জন্য কঠিন হয়ে যেত। চার বছর পর পর জন্মদিনের জন্য একটি দিন ছেড়ে দেওয়া যেতেই পারে।
বাংলানিউজ : ছোটবেলায় চার বছর পর পর জন্মদিন আসার ব্যাপারটি কখনো কী মনখারাপের কারণ হয়েছে?
মামুনুর রশীদ : মোটেও না। আসলে আমাদের সময় জন্মদিন পালনের এই ধারণাটাই তো ছিল না। সেজন্য এই দিনটা যে স্পেশাল কিছু, সেটা ভাববার কোন সুযোগই হয়নি। এমনকি ১২ বছর আগেও এই দিনটি কোন দিক দিয়ে চলে যেত টের পেতাম না। বুড়ো হওয়ার কারণেই বোধ হয় এখন আমার পরিবার দিনটি পালন করে আমাকে বয়সটা মনে করিয়ে দেয়।
বাংলানিউজ : আপনার দূর্লভ এই জন্মদিনটি পরিবারের সদস্যরা কিভাবে পালন করেন ?
মামুনুর রশীদ : পরিবার এখন আর আমার সংসারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। দীর্ঘদিনের কাজের সহকর্মী এবং আমার নাট্যদল আরণ্যক আমার বৃহৎ পরিবার। তারাই এখন ঘটা করে জন্মদিন পালন করে। সবাই মিলে মজা করে।
বাংলানিউজ : জন্মদিন উপলক্ষে যদি আপনাকে বর দেওয়া হয় ‘প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি’ পদের মধ্যে যে কোন একটিকে বেছে নিতে হবে। কোনটি নেবেন?
মামুনুর রশীদ : আমি প্রধানমন্ত্রীর পদটিই নেব। কারণ সমস্ত নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আমার সমস্ত কর্মদক্ষতা দেখানোর সুযোগ সেখানে পাব।
বাংলানিউজ : প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পেলে সংবিধানের কোন আইন সংশোধন করবেন কিংবা সংযোজন করবেন?
মামুনুর রশীদ : আমি ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে চাইব। আর পরিবর্তন করতে চাইব রাষ্ট্রধর্ম বিল। বাংলাদেশকে মানব ধর্ম প্রধান অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসাবে দেখতে চাই। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদ যখন এই বিলটি পাশ করেন তখন অধ্যাপক আহমেদ শরীফ এই বিলটির বিরোধীতা করে তার নিজের সংগঠন ‘মুক্তচিন্তা’ থেকে একটি সভা আয়োজন করেছিল। আমি নিজেও এর বিরোধীতা করে সেখানে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলাম।
বাংলানিউজ : জীবনের এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর মানব মানবীর প্রেমকে কিভাবে দেখেন। প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে বেশি বয়স কি প্রতিবন্ধকতা?
মামুনুর রশীদ : প্রেম মানসিক আর শারীরিক এই দুইয়ের সমন্বয়ে তৈরি অনন্য এক অনুভূতি। প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে মোটেও বিবেচ্য নয়, কার প্রেমে পড়ছি কিংবা তার সাথে আমার বয়সের ব্যবধান কত। সময়ের সাথে শরীরের খোলসটা পরিবর্তন হয়ে যায় কিন্ত মনটা আজন্ম সজীব সেই কৈশোরেই আটকে থাকে।
বাংলানিউজ : প্রেমে পড়েছেন কয়বার? প্রথম প্রেম সম্মন্ধে জানতে চাই?
মামুনুর রশীদ : কত যে প্রেমে পড়েছি তার কোন হিসাব নেই। এখনো তো প্রেমে পড়ে যাই। প্রথম প্রেমে পড়েছি ক্লাস নাইনে পড়ার সময়। সে আমার থেকে দু ক্লাস নিচে পড়ত। তার নাম বলব না। সেসময় ছিল চোখে চোখে প্রেম। একটু চাওয়া, একটু মুচকি হাসা এতেই শিহরিত হত মন। পড়ালেখার জন্য একসময় ঢাকায় চলে এলাম। তারপর থেকেই দুরত্ব বাড়তে লাগল। এভাবেই গোপনের প্রেম গোপনে চলে গেছে। আর যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি। অনেকদিন আগে তার সাথে দেখা হয়েছিল তখন টের পেয়েছিলাম পুরনো আবেগ। এখনো মনে পড়ে প্রথম প্রেমের কথা।
বাংলানিউজ : এমন একজনের নাম বলেন যার সাথে ভীষন প্রেম করতে ইচ্ছা করত?
মামুনুর রশীদ : এই তালিকায় অনেকে আছে। সেসব নাম দিয়ে তালিকা করা যাবে। তবে একজনের নাম বলতে হলে বলব সোফিয়া লোরেনের নাম। ভীষন পছন্দের সে আমার।
বাংলানিউজ : মনে পড়লেই হাসি পায় এমন কোন ঘটনা আছে?
মামুনুর রশীদ : যৌবনের দিনগুলিতে কত যে অসম্ভব চিন্তা করতাম সেগুলি মনে পড়লেই হাসি পায়। যেমন জাতীয় দলের ক্রিকেটার হতে চাইতাম। আবার জেলা স্কুলের বিএসসি শিক্ষক হতে চাইতাম। আমাদের সময়ে বি.এ.সি শিক্ষকের খুব সম্মান ছিল। এখন ভাবলেই হাসি পায়।
বাংলানিউজ : চোখ বন্ধ করে কৈশোরে ফিরে গেলে সেসময়ের কোন অপ্রাপ্তি এখনো কষ্ট দেয়?
মামুনুর রশীদ : সেরকম কোন অপ্রাপ্তি আমার নাই। ছোটবেলায় ভীষনরকম স্নেহ মায়া মমতায় আমি মানুষ হয়েছি। যৌথ পরিবার ছিল আমাদের। খুব আদরের ছিলাম আমি। তবে গ্রামের স্কুলে পড়ার সময় খুব মনে হত যদি শহরের স্কুলে গিয়ে পড়তে পারতাম! কিন্তু এখন আমার মনে সেই ধারণাটা আর নেই। আমি আমার নিজের স্কুলকে খুব ভালবাসি এবং তাকে নিয়ে গর্ব করি।
বাংলানিউজ : দূর্লভ এই জন্মদিনে নিজের জন্য কি প্রত্যাশা করেন?
মামুনুর রশীদ : যেন ভাল ভাল নাটক লিখতে পারি, আরো পরিপক্ক অভিনয় করতে পারি, অনেক ভাল মানুষ হতে পারি - নিজের মধ্যে এই ক্ষমতাগুলো খুব করে প্রত্যাশা করি।
বাংলাদেশ সময় ১৫৩০, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১২