ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

বিনোদন

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৬

সুরের মূর্ছনায় হেমন্তে মুক্ত হাওয়া

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৬
সুরের মূর্ছনায় হেমন্তে মুক্ত হাওয়া আরুশি মুডগাল ও বিদুষী মাধবী মুডগাল, ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শুদ্ধ সুরের মূর্ছনায় আত্মনিমগ্ন শহরের শ্রোতারা। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এসব সুর যেন হেমন্তে এনে দিলো ডানা মেলে ওড়া মুক্ত হাওয়া! কখনও তা শান্ত নদী। কখনওবা চঞ্চলা।

শুদ্ধ সুরের মূর্ছনায় আত্মনিমগ্ন শহরের শ্রোতারা। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এসব সুর যেন হেমন্তে এনে দিলো ডানা মেলে ওড়া মুক্ত হাওয়া! কখনও তা শান্ত নদী।

কখনওবা চঞ্চলা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের পরিবেশনা উপভোগের এই আনন্দে শামিল তরুণ-তরুণী থেকে প্রবীণরা।

ঢাকার বনানীতে আর্মি স্টেডিয়ামে গত ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিলো গতকাল শুক্রবার। এদিনের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে সন্তুরের ঝঙ্কারে রাতকে মুখর করে তোলেন ভারতের রাহুল শর্মা। তিনি শুরু করেন রাগ গাবতিতে আলাপ জোড় ঝালা দিয়ে। রূপক তাল, মধ্যালয় এবং দ্রুত তিনতালে তার তিনটি পরিবেশনা ছিলো মন্ত্রমুগ্ধ হওয়ার মতো।

রাহুলের পরিবেশনার সময় তার পেছনে মঞ্চের পর্দায় দেখানো হচ্ছিলো নদীতে ভেসে যাওয়ার দৃশ্য। তার ওপর দিয়ে মনের সুখে উড়ছে পাখি। এসব চিত্রের সঙ্গে সন্তুরের সুরের সাদৃশ্য খুঁজে কান পেতে সার্থকই মনে হলো শ্রোতাদের।

পন্ডিত শিবকুমার শর্মার সুযোগ্য পুত্র রাহুল শর্মা বলিউডের ছবির সংগীত পরিচালনাও করেছেন। হৃতিক রোশন, রানী মুখার্জি ও কারিনা কাপুর অভিনীত ‘মুঝসে দোস্তি কারোগি’র গানগুলোর সুরস্রষ্টা তিনিই। প্রয়াত যশ চোপড়া আর তার পুত্র আদিত্য চোপড়ার যোগসাজশেই রাহুল মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির জন্য গান বেঁধেছেন তা বলাবাহুল্য।

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে গতবারও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিলেন রাহুল শর্মা। এবারও মন কেড়েছেন তিনি। শুক্রবার তার সঙ্গে তবলায় তাল দেন সত্যজিৎ তালওয়ালকার। বাজনা পর্ব শেষে এ দু’জনের হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শামা রহমান।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় শুরুতেই ওডিশি নৃত্য নিয়ে পৃথকভাবে মঞ্চে আসেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও আরুশি মুডগাল। মাধবী পরিবেশন করেন নটরাজ ও অষ্টপদী। রাগ সাহানায় আরুশির পরিবেশনা ছিলো আহলাদ। এ ছাড়া কবিগুরুর ‘হেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী’ গানে নেচেছেন তিনি। সবশেষে দু’জনে মিলে পরিবেশন করেন ভৈরবী পল্লবী।

মাধবী ও আরুশির সঙ্গে কণ্ঠ সহযোগিতায় মনিকুন্তলা ভৌমিক ও ক্ষীতি প্রকাশ মহাপাত্র, পাখওয়াজে জিতেন্দ্র কুমার সাইন, সেতারে ইয়ার মোহো ও বাঁশিতে ছিলেন শ্রীনিবাস সত্যপঠী। পরিবেশনা শেষে তাদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

এরপর ছিলো বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের দলীয় তবলা পরিবেশনা। ফাহমিদা নাজনীন, সুপান্থ মজুমদার, এম জে জে ভুবন, পঞ্চম স্যানাল, প্রশান্ত ভৌমিক, চিন্ময় ভৌমিক ও নুশরাত ই জাহান দলীয়ভাবে তবলা বাজিয়ে শোনান। তারা পরিবেশন করেন তিনতাল। হারমোনিয়ামে ছিলেন মিলিন্দ কুলকার্নি।

বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষক সুরেশ তালওয়ালকার মঞ্চে উঠে চমৎকার পরিবেশনার জন্য শিক্ষার্থীদের শুভকামনা জানান। উদীয়মান এই শিল্পীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

এরপর খেয়াল নিয়ে মঞ্চে আসেন প্রিয়াঙ্কা গোপ। রাগ বাগেশ্রীতে খেয়াল ও কৌশিকধ্বনিতে ঠুমরি পরিবেশন করেন তিনি। তবলায় ছিলেন ইফতেখার আলম প্রধান। হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন উদয় মালাকার ও সারেঙ্গিতে ছিলেন মুরাদ আলী খান। তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ শোয়েব ও তার দল এদিন পরিবেশন করে রাগ দরবারি। তাদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভি।

সেতারের সুরে রাগ হেম ললিতে আলাপ জোড় ঝালা এবং গৎ পরিবেশনার মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়া লোক সুরে ধুন বাজিয়ে শোনান তিনি। তার সঙ্গে তবলায় অনুব্রত চ্যাটার্জী ও তানপুরায় ছিলেন মুশফিকুল ইসলাম। পরিবেশনা শেষে পূর্বায়নের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

পরবর্তী পরিবেশনায় খেয়াল গেয়েছেন পন্ডিত উল্লাস কশলকার। প্রথমে ছিলো রাগ বসন্ত বাহার। তারপর রাগ সোহনি এবং রাগ খাম্বাজে ঠুমরি ও তারানা পরিবেশন করেন তিনি। তাকে তবলায় পন্ডিত সুরেশ তালওয়ালকার, হারমোনিয়ামে মিলিন্দ কুলকার্নি এবং তানপুরায় সঙ্গত করেন অভিজিৎ কুণ্ডু ও উজ্জ্বল কুমার মালাকার। তাদের হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

দ্বিতীয় দিন সবশেষে মঞ্চে আসেন বংশীবাদক পন্ডিত রনু মজুমদার ও ম্যান্ডোলিন শিল্পী ইউ. রাজেশ। বাঁশিতে মঙ্গল ভৈরব ও ম্যান্ডোলিনে রাগ অমৃত বর্ষিণী শুনেছেন শ্রোতারা। দু’জনে একসঙ্গে পরিবেশন করেন রাগ নট ভৈরব। দর্শকদের অনুরোধে ভাওয়াইয়া পরিবেশনের মাধ্যমে পরিবেশনা শেষ করেন তারা। শিল্পীদের মৃদঙ্গে সহায়তা করেন এস ভি রামানি এবং তবলায় ছিলেন পন্ডিত অভিজিৎ ব্যানার্জি। তাদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।