ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

ভোটে ছয়বার হেরে সপ্তমবারে জিতলেন ময়মনসিংহের শীতল সরকার

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৯
ভোটে ছয়বার হেরে সপ্তমবারে জিতলেন ময়মনসিংহের শীতল সরকার

ময়মনসিংহ: ভোটে তার জয় যেন ‘অধরা’। প্রায় তিন যুগ যাবত ভোট করছেন। একবার জিততে জিততেও শেষতক পারেননি। ভোটই তার কপাল পুড়িয়েছে! করেছে ‘চাল-চুলোহীন’! মান-অভিমানে বাড়ি ছেড়েছেন প্রিয়তমা জীবনসঙ্গীও। তবুও পিছপা হননি একজন শীতল সরকার।

শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন, আস্থা কুড়িয়েছেন ভোটারের। ময়মনসিংহ পৌরসভায় টানা ছয়বার হারের ‘ডাবল হ্যাটট্রিকে’র পর সপ্তমবারের পদক্ষেপে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ধরা দিয়েছে তার হাতে।

ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ছয়বার হেরে সপ্তমবারে জয় পাওয়া স্কটিশ রাজা রবার্ট ব্রুসের সেই গল্প যেন সামনে নিয়ে এলেন শীতল সরকার।  

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনের প্রথম ভোটে ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে অবশেষে কাউন্সিলর হওয়ার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছেন ষাটোর্ধ্ব শীতল সরকার। ভোট ভাগ্যকে জয় করা এ বৃদ্ধ এখন হয়ে উঠেছেন নগরীর ‘হিরো’। অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন। আশেপাশের ওয়ার্ডের লোকজনও ভিড় করছেন একনজর তাকে দেখার জন্য।  

সোমবার (৬ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে হাসিমুখে শীতল সরকার জানালেন সুসংবাদ। ১৮ বছর পর নগরীর কালিবাড়ী রোডের সেই ‘ছাদনাতলায়’ ফিরছেন তার স্ত্রী লক্ষী সরকার। ফিরছেন একমাত্র সন্তান হিমেল সরকারও।  

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচন শেষে এখন নগরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন শীতল সরকার। তাকে নিয়ে জল্পনার যেন শেষ নেই। পুরো বিষয়টি উপভোগ করছেন। হাসিমুখে জবাব দিচ্ছেন। আর হবেই বা না কেন? ১৮ বছর পর সুখ নামের ‘সোনার হরিণ’ আবার ধরা দিয়েছে তার আপন ভুবনে।  

ভোটসংগ্রামী শীতল সরকারের জীবনের গল্প শুনতে কথা বলে বাংলানিউজ। ‘১৯৮১ সাল থেকে কমিশনার পদে ভোট শুরু করেছিলাম। তখন আমার বয়স ২৬ কী ২৭ বছর। ভরা যৌবন থেকেই কাউন্সিলর হতে সংগ্রাম করছি। ৬ বার পৌরসভায় এ পদে প্রার্থী হয়েছি। একবার ২ হাজার ৯’শ ভোট পেয়েও অল্পের জন্য হেরে গেছি। মন খারাপ করিনি। কারণ আমার বিশ্বাস ছিলো আমার ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটাররা একদিন আমাকে মূল্যায়ন করবেন। আজ আমি মূল্যায়িত হয়েছি। ’

৪৬ বছর ‘দ্বার পরিগ্রহ’ করেননি ভোট পাগল শীতল সরকার। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে ‘সাতপাকে’ বাঁধা পড়েন জামালপুরের সরিষাবাড়ী শিমলার বাসিন্দা লক্ষী সরকারের সঙ্গে। কিন্তু স্বামীর পুরো হৃদয়-মন অধিকার করে আছে ভোট। ভোটের জন্য সহায় সম্বল সব হারিয়েছেন। তবু লক্ষ্যচ্যুত হননি।  

মান-অভিমানের জেরে এক পর্যায়ে স্ত্রী লক্ষী ২০০১ সালের দিকে স্বামীকে ছেড়ে পাড়ি জমান বাপের বাড়িতে। যাওয়ার বেলায় নাকি বলে যান, ‘কোনো দিন নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে আমাকে আনতে যেও’।  

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করতেই শীতল সরকারের সোজাসাপ্টা জবাব, ‘আসলে আমার ধ্যানজ্ঞান ছিলো ভোট। স্ত্রী অভিমান করেছে। এখন তার অভিমানও ভেঙেছে। আমার একমাত্র সন্তান জামালপুরে একটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। সিটি কাউন্সিলর পদে শপথের পরপরই স্ত্রীকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। আমার জয়ে স্ত্রী-সন্তান মহাখুশি। ’ 

স্বামী-স্ত্রী আলাদা হলেও নিয়মিতই যোগাযোগ ছিলো তাদের। ছেলে হিমেল সরকারেরও নিয়মিত দেখভাল করেছেন। শ্বশুরালয়ে যাওয়া-আসাও ছিলো। তবে এবার স্ত্রীর পুরোপুরি মান ভেঙেছে। ভোটের আগে প্রতিনিয়তই তার উৎসাহ পেয়েছেন শীতল সরকার।  

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামা মতে, শীতল সরকার মাধ্যমিক পাস। পেশায় ব্যবসায়ী। এ খাত থেকে তার বছরে আয় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। হাতে নগদ আছে ৬০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ বলতে নেই কিছু।  

প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) ৯ নম্বর ওয়ার্ডে শীতল সরকার বিজয়ী হয়েছেন মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে ২ হাজার ২৬১ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ী আল মাসুদ পান ১ হাজার ৬৫৯ ভোট।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৯ 
এমএএএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।