ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

সিলেটে ২৪ দলের ভরাডুবি, জামানত হারিয়েছেন ৭১ জন প্রার্থী

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৪
সিলেটে ২৪ দলের ভরাডুবি, জামানত হারিয়েছেন ৭১ জন প্রার্থী

সিলেট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ১৯টি আসনে অংশ নেয় ২৫টি নিবন্ধিত দল। এসব দলের ৯১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এরমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৫টি আসনে জয়ী হয়েছে।  

আর তিনটি আসনে নিকটতমপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। আর জাতীয় পার্টিসহ অন্য ২৪টি দলের ৭৩ জন প্রার্থীর কেউই জয়ের দেখা পাননি। এরমধ্যে ৭১ জন প্রার্থীই খুইয়েছেন জামানতের অর্থও। ভোটপ্রাপ্তির হিসেবে তারা দলীয় প্রতীকের মান পর্যন্ত খুঁইয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ১৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮টি আসনে প্রার্থী দেয় আওয়ামী লীগ। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৫টি আসনে।

এছাড়া ৯টি করে আসনে তৃণমূল বিএনপি ও ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে) প্রার্থী দেয়। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি (আম) ৭টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট-মুক্তিজোট (ছড়ি) ৫টি, চারটি করে আসনে প্রার্থী ছিল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে-বিএনএম’র (নোঙ্গর), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) প্রার্থী ছিল ৩টি আসনে, বাংলাদেশ সুপ্রিমপার্টি-বিএসপি (একতারা) ও গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) দুটি করে আসনে প্রার্থী দেয়।

একটি করে আসনে প্রার্থী ছিল গণফ্রন্ট (মাছ), গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল), জাতীয়পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ (টেলিভিশন), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা), জাকেরপার্টি (গোলাপ ফুল), বিকল্পধারা (কুলা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (মশাল) ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি)।

চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেছে, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা লাঙ্গল প্রতীকে ১৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এদের চারজন বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যও ছিলেন। কিন্তু জয়ের দেখা পাননি কেউই। দুটি আসনে জামানতের টাকা ফেরত পাওয়ার মতো ভোট পেলেও অন্য ১৩টিতে চরম ভরাডুবি হয়েছে, জামানতের অর্থও খুঁইয়েছেন এই দলের প্রার্থীরা।

শুধু জাতীয় পার্টির নয়, অন্য ২৩টি দলের ৫৮জন প্রার্থীর কেউই জামানত পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি। জামানতের অর্থ, দল ও প্রতীকের সম্মানটুকুই খুঁইয়েছেন তারা। ভোটের চূড়ান্ত ফলাফলের পরিসংখ্যানের দেখা গেছে এমন লজ্জাজনক চিত্র। এ তালিকায় আছেন একাদশ সংসদের নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যও।

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুসারে, মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হবে। একটি নির্বাচনী এলাকায় যত ভোট পড়ে তার শতকরা সাড়ে ১২ শতাংশ কোনো প্রার্থী না পেলে জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। সে হিসেবে এই ২৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ৯১জন প্রার্থীর মধ্যে কেবল আওয়ামী লীগের ১৮ জন প্রার্থীর জামানত রক্ষা হচ্ছে। এরমধ্যে ১৫জন নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন। তিনজন বিজয়ীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে দল-প্রতীকের সম্মান বাঁচিয়েছেন।

অন্য ২৪টি দলের ৭৩জন প্রার্থীর মধ্যে দুটি আসনে সম্মানজনক ভোট পেয়েছেন জাতীয়পার্টির প্রার্থীরা।

ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, সিলেট-১ আসনে  জামানতের অর্থ খুঁইয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা ফয়জুল হক (মিনার) ২ হাজার ১৯৩ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ইউসূফ আহমদ (আম) ৯৬৩ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আবদুল বাছিত (ছড়ি) ৯০৭ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের সোহেল আহমদ চৌধুরী (ডাব) ৪৫০ ভোট।

সিলেট-২ আসনে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য) ১ হাজার ৯২২ ভোট,  জাতীয় পার্টিরপ্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী (লাঙ্গল) ৬ হাজার ৮৭৪ ভোট, তৃণমূল বিএনপির মো. আবদুর রব (সোনালী আঁশ) ৯৪৪ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. মনোয়ার হোসাইন (আম) ২৫৩ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জহির (ডাব) ১৮৫ ভোট।

সিলেট-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল) ৪ হাজার ২৬৯ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. ময়নুল ইসলাম (মিনার) ২০৩ ভোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম (মোমবাতি) ৫৬০ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনোয়ার হোসেন আফরোজ (আম) ২২০ ভোট।

সিলেট-৪ আসনে তৃণমূল বিএনপির আবুল হোসেন (সোনালী আঁশ) ৪ হাজার ১১ ভোট ও ইসলামী ঐক্যজোটের নাজিম উদ্দিন কামরান (মিনার) ৩ হাজার ৫২ ভোট।

সিলেট-৫ আসনে তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দিন সিকদার (সোনালী আঁশ) ২ হাজার ২০৭ ভোট, জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ (লাঙ্গল) ১২৪ ভোট ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. বদরুল আলম (ডাব) ১৫৯ ভোট।

সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মুবিন চৌধুরী (সোনালী আঁশ) ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট, জাতীয় পার্টির মো. সেলিম উদ্দিন (লাঙ্গল) ৫ হাজার ৫৭৯ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান (ছড়ি) ১৬৯ ভোট ও ইসলামী ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান (মিনার) ৬২২ ভোট।

সুনামগঞ্জ-১ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেস’র নবাব সালেহ আহমেদ (ডাব) ১৪৬, জাতীয় পার্টির আব্দুল মান্নান (লাঙ্গল) ৩১২, তৃণমূল বিএনপির মো. আশরাফ আলী (সোনালী আঁশ) ৩৭৯, গণফ্রন্টের মো. জাহানুর রশীদ (মাছ) ৮১, বাংলাদেশ সুপ্রিমপার্টির হারিছ মিয়া (একতারা) ৭৩২ ভোট।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে গণতন্ত্রী পার্টির মিহির রঞ্জন দাস (কবুতর) ২৪৯ ভোট।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে তৃণমূল বিএনপির মাওলানা মোহাম্মদ শাহীনুর পাশা চৌধুরী (সোনালী আঁশ) ৪ হাজার ৯৫ ভোট, জাতীয় পার্টির তৌফিক আলী (লাঙ্গল) ২ হাজার ৪৫ ভোট ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির তালুকদার মো. মকবুল হোসেন (কাঁঠাল) ৫১৪ ভোট।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের-বিএন্এম দেওয়ান শামছুল আবেদীন (নোঙ্গর) ১৮৭,  ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. দিলোয়ার (আম) ৪০০ ভোট।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে  গণফোরামের আইয়ুব করম আলী (উদীয়মান সূর্য) ৫৬৯, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) আবু সালেহ (একতারা) ৩০৭, জাতীয়পার্টি-জেপি'র অ্যাডভোকেট মনির উদ্দিন (বাইসাইকেল) ২০৪, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আজিজুল হক (আম) ৩৬১, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. আশরাফ হোসেন (টেলিভিশন) ৫৯ ভোট, জাতীয় পার্টির নাজমুল হুদা (লাঙ্গল) ৮২২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাজী আব্দুল জলিল (গাছমা) ১৬৪ ভোট।

হবিগঞ্জ-১ আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের মোস্তাক আহমেদ ফারহানী (মিনার) ৩১৭, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. নুরুল হক (গামছা) ২১৩ ভোট।

হবিগঞ্জ-২ আসনে জাতীয় পার্টির শংকর পাল (লাঙ্গল) ২৫৩, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অ্যাডভোকেট মনমোহন দেবনাথ (গামছা) ৫৪, ইসলামী ঐক্যজোটের শেখ হিফজুর রহমান (মিনার) ৪২১, তৃণমূল বিএনপির খাইরুল আলম (সোনালী আঁশ) ৩০৯, বিএনএম’র এসএ এম সোহাগ (নোঙ্গর) ২৭২, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ (চেয়ার) ১৪১ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জিয়াউর রশিদ (ডাব) ১৭০ ভোট।

হবিগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী আব্দুল মুমিন চৌধুরী (লাঙ্গল) ৪ হাজার ৭৬, বিএনএম'র মো. বদরুল আলম সিদ্দিকী (নোঙ্গর) ৩৫২, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো. আদম আলী (ফুলের মালা) ২৮৪, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আব্দুল কাদির (আম) ২৮৫, জাকের পার্টির আনসারুল হক (গোলাপ ফুল) ৮৮৫, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. আবদুল ওয়াহেদ (চেয়ার) ৪৪৪, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. নোমান হাসান (ডাব) ২১২, মুক্তিজোটের (জেডিপি) মো. শাহিনুর রহমান (ছড়ি) ১৫১ ভোট।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী আহাদ উদ্দিন চৌধুরী (লাঙ্গল) ৪১৭ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আল আমিন (ডাব) ৫৪০ ভোট, ইসলামি ঐক্যজোট বাংলাদেশের আবু ছালেহ (মিনার) ১৭৩ ভোট, বিএনএম'র মো. মুখলেছুর রহমান (নোঙ্গর) ৩৯৩, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ আব্দুল মুমিন (চেয়ার) ৩৩৭ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ঐকজোটের মো. রাশেদুল ইসলাম খোকন (ছড়ি) ১৬৭ ভোট।

মৌলভীবাজার-১ আসনে জাতীয়পার্টির প্রার্থী আহমেদ রিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল) ৩ হাজার ৯৮ ও তৃণমূল বিএনপির আনোয়ার হোসেন (সোনালী আঁশ) ১ হাজার ৫৩৭ ভোট।

মৌলভীবাজার-২ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন (সোনালী আঁশ) ১১ হাজার ৪৪৯, জাতীয় পার্টির আব্দুল মালিক (লাঙ্গল) ৫৬৫, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা আসলাম হোসাইন রহমানী (মিনার) ৩৬৬, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এনামুল হক মাহতাব (মোমবাতি) ৩০৫ ও বিকল্পধারার মো. কামরুজ্জামান সিমু (কুলা) ১৬১ ভোট।

মৌলভীবাজার-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মো. আলতাফুর রহমান (লাঙ্গল) ২ হাজার ৬৯৮, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) আব্দুল মোসাব্বির (মশাল) ২ হাজার ২৪৬, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির তাপস কুমার ঘোষ (হাতুড়ি) ১ হাজার ২৭৮, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. ফাহাদ আলম (ছড়ি) ৯৪০, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আব্দুর রউফ (মোমবাতি) ৭৯৫ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবু বকর (আম) ৭০৪ ভোট।

মৌলভীবাজার-৪ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী আবদুল মুহিত হাসানী (মোমবাতি) ৫৩৯০ ও ইসলামী ঐক্যজোটের মো. আনোয়ার হোসাইন (মিনার) ৫হাজার ৬৮ ভোট।

 বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘন্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
এনইউ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।