ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

৪২ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২০
৪২ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইবি: ২২ নভেম্বর। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত আবেগের দিন।

প্রতিবছর এ দিনটাকে ঘিরেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে জন্ম নেয় আগামীর স্বপ্ন। কারণ আজ থেকে ৪১ বছর আগে এ দিনেই পথচলা শুরু হয় তাদের প্রাণের বিদ্যাপিঠের।

ফেলে আসা দিনগুলোর ব্যর্থতা-গ্লানি মুছে এবং অতীতের সুখস্মৃতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদিত হয় নবসূর্যের। পুরনো-নতুনের মিশ্রনে আগামীর প্রত্যাশা নিয়েই কাটে বাকি দিনগুলো।

কৈশোর কাটিয়ে পূর্ণ যৌবনে আসার পথে অসংখ্য ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এসব ঘাত প্রতিঘাতের ভেতর দিয়েও গত ৪১টি বছরে শিক্ষার্থীদের হাজারো স্বপ্ন দেখিয়েছে ইবি। শিক্ষার্থীদের লালিত স্বপ্ন ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে।
 
গবেষণা, একাডেমিকসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে যেমন সাফল্য কুড়িয়েছে। তেমনি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, শিক্ষকদের নারী কেলেঙ্কারি, টেন্ডার বাণিজ্য, ভর্তি পরীক্ষায় অসঙ্গতি, শিক্ষকদের বিভক্ত রাজনীতি, সহিংস ছাত্র রাজনীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে কখনো নাম লিখিয়েছে ব্যর্থতার খাতায়। সাফল্য ও ব্যর্থতার দায় নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়কে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন চালকের আসনে থাকা নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম থেকে ১৩তম কর্তা ব্যক্তি।

১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার চার বছরেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তার জন্মস্থান ত্যাগ করতে হয়। ১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাই এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গাজীপুর বোর্ড বাজারে স্থানান্তর করে তৎকালীন সরকার। অনেক চড়াই উতড়াই পেরিয়ে ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অপর এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়টি আবার তার জন্মস্থান কুষ্টিয়ায় ফিরে আসে।

১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে দু’টি অনুষদের অধীন চারটি বিভাগে আটজন শিক্ষক ও তিনশ’ ছাত্র ভর্তির মাধ্যমে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। শৈশবে জন্মভূমি হারানো-ফিরে পাওয়ার যুদ্ধের ক্লান্তিকে সঙ্গে নিয়েই ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরের সবুজ চত্বরে মাটির সড়ক আর সবুজ গাছপালার মধ্যে গড়ে ওঠে দু’টি ভবন। ভবন দু’টি নিয়েই শুরু হয় মূল ক্যাম্পাসের কার্যক্রম।  

শৈশব পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ যৌবন পার করছে। শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত নিয়ে আসতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনা করেছেন ১৩ জন কর্তা ব্যক্তি। স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয় নিয়ে গড়ে ওঠার কথা থাকলেও তার কতটুকু হয়েছে, তা আজ দৃশ্যমান।

প্রতিষ্ঠাকালে সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কথা থাকলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে অনুষদ ও বিভাগ সংখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২৪ শতাংশ আবাসন সুবিধা পাচ্ছে। অথচ হওয়ার কথা ছিল সম্পূর্ণ আবাসিক।

প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরে এসেও শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেছেন নানা অপ্রাপ্তির কথা। চলমান শিক্ষাবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি বাড়ানো, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠান, মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনা, প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল দিতে কার্যকর পদক্ষেপ, শিক্ষাত্তোর সার্টিফিকেট উত্তোলন পদ্ধতি সহজ ও আধুনিকায়ন করা, ইকসু গঠন ও নির্বাচন দিতে কার্যকর উদ্যোগ, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ও হলের ডাইনিংগুলোতে খাবার ও পরিবেশের মান বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের ব্যবহার্য প্রত্যেক ভবনের টয়লেট সংস্করণ, সব ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা ও ধর্মীয় কার্যাদি পালনের জন্য আলাদা আলাদা উপাসনালয় নির্মাণ, সব ধরনের বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান তারা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ সিংহভাগই সম্পন্ন হয় পুরনো নিয়মে। যেখানে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিংহভাগ কার্যক্রম হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তিতে, সেখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমনটা হচ্ছে না। যা বড্ড বেমানান। তাদের দাবি, কৈশোরে কষ্ট নিয়ে বেড়ে ওঠা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লান্তি আজও মোছেনি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শের স্মরক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একরের প্রতি ইঞ্চিতে দৃশ্যমান।  

প্রধান ফটক থেকে কয়েক গজ সামনে নির্মিত 'মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব' ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু হল ফটকের সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘মুক্তির আহ্বান’ ও ‘শাশ্বত মুজিব’, প্রধান ফটকের উত্তরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ‘মুক্তবাংলা’, দক্ষিণে শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নারসহ বেশ কিছু স্থাপনা শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।

এত বাধা বিপত্তি, সংকট কাটিয়েও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এবং গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা সাফল্য রেখে যাচ্ছেন। ৪২তম জন্মদিবসে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঠিক দায়িত্বপালনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নবদিগন্তের আবির্ভাব হবে।

গত ২৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালামও একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ঐতিহ্য শুধু সমুন্নত রাখাই নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদা বাড়াতে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আরও বেশি করে মনোনিবেশ করবেন বলে আশাবাদী তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২০
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।