ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

জুবায়ের হত্যার নির্দেশদাতারা এখনও সবুজ ক্যাম্পাসে

সানাউল্লাহ সাকিব তনু, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংবাদকর্মী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১২
জুবায়ের হত্যার নির্দেশদাতারা এখনও সবুজ ক্যাম্পাসে

জুবায়ের কে ছিল। তাকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে এটা সবাই জানে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের অনেক বাংলাভাষী মানুষও বাংলানিউজের মাধ্যমে এটা জানতে পেরেছে। পাঠকদের কাছে তাকে আর নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য সে স্নাতক শেষ বর্ষের সব পরীক্ষাই দিয়েছে। শুধু মৌখিক পরীক্ষাটাই তার দেওয়া হয়নি। শেষ পরীক্ষার পরই তার কথিত বন্ধুরা তাকে হত্যা করেছে। কথিক বন্ধু বলছি কারণ যারা তাকে হত্যার সাথে জড়িত ছিল বলে এখন পর্যন্ত ফাঁস হয়েছে সবাই তার ব্যাচমেট। অর্থাৎ সবাই তার মতোই ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। তার মুত্যর পর শির্ক্ষাথীরা তার হত্যার বিচার দাবিতে কিছু দাবি দাওয়া দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কিছু মেনে নিয়েছে। সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়েছে। প্রক্টরকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। একারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শির্ক্ষাথীরা নাকি মিষ্টিও বিতরণ করেছে।
 
সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে কিন্তু অব্যাহতি দেওয়া হয়নি দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। সে আগে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এখন তাকে পদোন্নতি দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের কর্মকর্তা হিসেবে। অর্থাৎ আগে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের চোর, আনসারদের নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন তার দায়িত্ব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের যত সম্পদ আছে তার দেখভাল করার। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে চোর জোচ্চর আর আনসারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ দেখভাল করবে এটাই  বিস্ময়। সে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক, গাছ বিক্রির কাজ করবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বা কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো হয়তবা দেখা যাবে সেই নিরাপত্তা কর্মকর্তাই আমাদের রিসিভ করছে। আহ কিজে মজা লাগবে তখন। এভাবেই আমার সুবজ ক্যাম্পাসে থেকে যাবে অশুভদের পদচারণা।
 
জুবায়ের হত্যার সাথে জড়িত তিন সোনার ছাত্রকে বহিস্কার করা হয়েছে। সামনে আরো হবে। পুলিশ আটক করেছে কয়েকজনকে। আরো করবে। হয়তবা আদালত তাদের কঠিন শাস্তি মানে ফাঁসিও দেবে। কিন্তু তার হত্যায় যারা নির্দেশ দিয়েছিল তারা কি ধোরাছোঁয়ার বাইরেই থাকবে। তারা তাদের নির্দেশ দিয়েছিল, যারা কিলিং মিশনে জড়িত ছিল তারা কাদের সাথে ফোন যোগাযোগ রেখেছিল এটা বের করলেও তো কারা নির্দেশদাতা ছিল তা পরিস্কার হয়ে যায়।
 
আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়েই সমকাল, ভোরের কাগজ, আমাদের সময় এর মতো পত্রিকায় কাজ করেছি। ৪ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রনেতা, শির্ক্ষাথী, ও প্রশাসকদের খুব কাছে থেকে কাজ করতে গিয়ে যা শিখেছি তাতে মনে হয়, এই হত্যার নির্দেশদাতারা এখনও এই সবুজ ক্যাম্পাসেই চা পান করছে, সিগারেট ধরিয়ে হয়তবা কাউকে হুমকি দিচ্ছে।
 
যতদুর মনে পড়ে, সমকাল পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় একটা নতুন নিয়ম জারি করেছিল। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শির্ক্ষাথী নয়, তারা হলে থাকতে পারবে না। ¯œাতকোত্তর শ্রেনীর মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার ৭ বা ১০ দিনের মধ্যেই হল ত্যাগ করতে হবে। এছাড়া দুবারের বেশি ¯œাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে না। শোনা যায়, কয়েক ছাত্রলীগ নেতাকে হল ছাড়া করতেই এ নিয়ম জারি করা হয়েছিল। আমরাও এনিয়মকে স্বাগত জানিয়েছিলাম।

তবে যখন জুবায়ের হত্যার সময়টির দিকে তাকাই। কতজন অছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে অবস্থান করছে। চিত্রটা ভয়ঙ্কর। কেউ এমফিল আবার কেউ বছরের পর বছর পরীক্ষা না দিয়ে হলে অবস্থান করছে। ওরা কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য়ের অনেক আস্থাভাজন হিসেবেও পরিচিত।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে দেখা গেল সন্দেহভাজন অনেক নির্দেশদাতাকে। জুবায়ের যেখানে বসে চা খেতো, ঠিক সেখানেই তারা চা পান করতে করতে আড্ডা দিচ্ছে। আর খুশি মনে হাসছে। যেন ওরা আজ অনেক স্বাধীন। মনে একটি খুন করে ওরা বিভিন্ন মহল থেকে অভিনন্দন পেয়েছে। সেই সবুজ ক্যাম্পাসে হত্যার নির্দেশদাতা অছাত্ররা যেদিন সবুজ ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিবে সেদিনই জুবায়েরের আত্মা শান্তি পাবে।

আর প্রশ্ন প্রশাসনের কাছে নির্দেশদাতারা কি আইনের বাইরে। তাদের কি কোন দোষ নেই?
 
[email protected]
বাংলাদেশ সময় ১০৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।