ঢাকা, রবিবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিক্ষা

রাকসু নির্বাচন: সেল গঠন করেও থামানো যাচ্ছে না সাইবার বুলিং

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৪, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫
রাকসু নির্বাচন: সেল গঠন করেও থামানো যাচ্ছে না সাইবার বুলিং

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ খুব কম। প্রার্থিতা ঘোষণার আগে ছাত্রীরা অভিযোগ করেছিলেন, প্রার্থী হিসেবে কারও নাম আলোচনায় এলেই সামাজিক মাধ্যমে বিদ্রুপ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং চরিত্র হনন করে পোস্ট করা হচ্ছে।

এ রকম অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ আগস্ট পাঁচ সদস্যের অ্যান্টি সাইবার বুলিং সেল গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এতেও থামছে না হয়রানি। বিশেষ করে নারী প্রার্থীরা বেশি শিকার হচ্ছেন। তাদের দাবি, সাইবার বুলিং ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ।

রাকসু ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৩০৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন পদে ছাত্র ২৭২ ও ছাত্রী ৩৪ জন। মোট প্রার্থীর ১১ দশমিক ১১ শতাংশ নারী। কেন্দ্রীয় সংসদের ২০ পদের মধ্যে ১১ পদে কোনো ছাত্রী প্রার্থী হননি। অথচ এ নির্বাচনে ৩৯ দশমিক ১১ শতাংশ ভোটারই ছাত্রী। তাদের অভিযোগ, সাইবার বুলিংয়ের কারণে সম্মানহানির ভয়ে অনেকেই প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ হারিয়েছেন।

সাইবার বুলিং এক ধরনের মানসিক নির্যাতন, যা ইন্টারনেট, মোবাইল বা সামাজিক মাধ্যমে সংঘটিত হয়। কারও ছবির নিচে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করা, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া, ভুয়া আইডি খুলে অপমান করা কিংবা অনলাইন গ্রুপ থেকে কাউকে বাদ দেওয়া– সবই এর অন্তর্ভুক্ত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট দুটি ফেসবুক গ্রুপ এবং অর্ধশতাধিক ফেসবুক পেজ রয়েছে। এসব পেজ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা মানুষকে নিয়ে বিরূপ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়। মানুষের চরিত্র হনন করে পোস্ট করা হয়। এসব পোস্ট সাধারণত ভুয়া আইডি দিয়ে করা হয়ে থাকে। এই পোস্ট ও মন্তব্যের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। রাকসু নির্বাচন ঘিরে এসব গ্রুপে নারী প্রার্থীদের প্রচারণামূলক পোস্টে নানান সময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়। এ ছাড়া প্রার্থীদের ব্যক্তিগত আইডির মন্তব্যের ঘরে, ইনবক্স ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা নিয়মিত সাইবার বুলিং, ব্যক্তিগত আক্রমণ ও সম্মানহানির শিকার হচ্ছেন। প্রশাসনকে এই বিষয়ে একাধিকবার জানানো হলেও তারা এখনও কোনো প্রতিকার পাননি। তারা মনে করছেন, অনলাইনে আক্রমণ ঠেকানো গেলে নির্বাচনের পরিবেশ আরও ভালো হতো।

ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, ‘আমি নিয়মিত বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি। প্রশাসনকে বলার পরও প্রতিকার পাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নামমাত্র একটা সেল গঠন করেছে। এই সেল কাজ করছে না। সেলের দৃশ্যমান কাজ আমরা দেখছি না। এ কারণে সাইবার বুলিং দিন দিন বাড়ছে। প্রশাসন যদি কোন অপরাধের জন্য কী শাস্তি দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করে কোনো নীতিমালা তৈরি করত, তাহলে বুলিং কমানো সম্ভব হতো। ’

ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী নার্গিস খাতুন বলেন, ‘আমি জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং সাধারণ শিক্ষার্থী। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। তবুও সামাজিক মাধ্যমে আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে। প্রশাসনকে জানানোর পরও প্রতিকার মিলছে না। ’

রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান। তার নেতৃত্বে লড়ছে ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল।  

তাসিন বলেন, ভিপি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করার পর আমার ছবি ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ আইডি খুলে মানুষের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। আমার মতো অনেক নারী প্রার্থীকে বুলিং করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কমিটি গঠন করেই কাজ শেষ করেছে। এই কমিটি ব্যর্থ। তারা বুলিং থামাতে পারেনি।

ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী সাইদ হাসান ইবনে রুহুল বলেন, আমি সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। তারপরও সদস্য পদে লড়ছি। আমি জুনিয়র হিসেবে দাঁড়িয়েছি। তাই হয়তো সিনিয়ররা আমাকে সহ্য করতে পারেন না। তারা আমার পিছু লেগেছেন। ফেসবুকে আমি কিছু পোস্ট করলেই হাজারো হা হা রিয়েক্ট দেওয়া হয়। বাজে মন্তব্য করে অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যুক্ত যেসব পেজ, গ্রুপ আছে, সেগুলোর অ্যাডমিন ও মডারেটরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা গেলে বুলিং অনেকাংশে কমে যেত বলে মনে করেন প্রার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আজাদ সিয়াম বলেন, সামাজিক মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য দেখে অনেক বেশি হতাশা কাজ করে। ছোট ছোট বিষয়ের কারণে মানুষের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। নিজের পক্ষে মত না গেলেই, বাজেভাবে আক্রমণ করা হয়। গ্রুপ ও পেজগুলো মনিটর করলেই বুলিং কমিয়ে আনা সম্ভব।

জানতে চাইলে অ্যান্টি সাইবার বুলিং সেলের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, সাইবার বুলিং শতভাগ কমানো সম্ভব নয়, বিশেষ করে রাকসু নির্বাচনের আগে তা বাস্তবসম্মতও নয়। পুরোপুরি বন্ধ করতে যেসব প্রযুক্তি প্রয়োজন, সেগুলো আমাদের কাছে নেই। রাবি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কি-ওয়ার্ডভিত্তিক গ্রুপগুলোর অ্যাডমিন ও মডারেটরদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। ইতোমধ্যে কয়েক দিনে সাইবার বুলিং তুলনামূলক কমেছে। কোন বুলিংয়ের জন্য কেমন শাস্তি দেওয়া হবে, তা নিয়ে আমরা নীতিমালা তৈরি করছি।

তিনি আরও বলেন, রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অ্যান্টি সাইবার বুলিং সেল গঠন করা হয়েছে, সেগুলো শুধু রাকসু নির্বাচনেই সীমিত থাকবে না, পরেও কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। স্থায়ী সাইবার প্রতিরোধ সেলে জনপ্রিয় গ্রুপের অ্যাডমিন, মডারেটর, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সাংবাদিকরাও থাকবেন।

এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ