ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিলেটে ভোজ্যতেল নিয়ে তেলেসমাতি

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২২
সিলেটে ভোজ্যতেল নিয়ে তেলেসমাতি ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: এক টাকার পানখিলি এখনো বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা। পানের দাম তলানীতে নামলেও খিলির দাম নামেনি কখনো।

একইভাবে নিত্যপণ্য ডাল থেকে চালের দাম কেবল বেড়েই চলেছে। এবার দাম বাড়ল তেলের। তাও বছর ব্যবধানে ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম দ্বিগুণ হয়েছে সিলেটের বাজারে।

ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের মতে, ভোজ্য তেল সয়াবিনের বাজার একদিনে অনিয়ন্ত্রিত হয়নি। সিলেটে বছরের ব্যবধানে অন্তত লিটার প্রতি দাম বেড়েছে ১২ বার।  ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিনে দাম বাড়ানো হয়েছে অন্তত ২২ বার এবং লুজ সয়াবিন ও পলিপ্যাকে দাম বেড়েছে অন্তত ১৬ বার। ফলে বছর ব্যবধানে তেলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

করোনার প্রদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা থাকলেও তখন অনেকটা স্থিতিশীল ছিল বাজার। কিন্তু তেলের বর্তমান বাজার করোনার সময়কেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তারা।

সিলেটের বাজারে যেখানে ৯০-৯৫ টাকা ছিল বোতলজাত সয়াবিনের লিটার। সেই সয়াবিনের লিটার এখন ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকায়। আর ৫ লিটারের বোতল ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমান মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৯৫ টাকায়।  ভোজ্য তেলের বাজার সংশ্লিষ্টদের পর্যবেক্ষণে থাকলে আজ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না বলে মনে করছেন ক্ষুদে বিক্রেতা ও ভোক্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট কালিঘাট। সেখানে ৫-১০ টাকা কমে কিনে এনে এই নিত্যপণ্য খুচরা বাজারে ৫-১০ টাকা লাভে বিক্রি করতে হয়। ফলে এর নিয়ন্ত্রণ খুচরা বাজারে নেই। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়াতে গিয়ে তারা কোটি কোটি টাকার সয়াবিন তেল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন।

সিলেটের বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন কোম্পানী ভেদে লিটার প্রতি ১৬৮-১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। করোনাকালে লিটার ছিল ৯০-৯৫ টাকা। এরপর লিটার প্রতি ৫-১০ টাকা করে বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ ১৬৮ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। আর ৫ লিটার বোতল ৪৫০ টাকা ছিল ২০২০ সালে। এরপর ক্রমশ দাম বেড়ে ৭৯৫ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে পলিপ্যাক সয়াবিন লিটারে দাম বেড়েছে ১৬ বার। বর্তমানে পলিপ্যাক সয়াবিন সিলেটের খুচরা বাজারে লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়।

সিলেটের মিরাবাজার সৌরভ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মঞ্জু তালুকদার বলেন, আমরাতো ক্রেতার কাছ থেকে বেশি রাখতে পারিনা। কোম্পানী আমাদের যে দামে দেয়, তার চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করি। বছর অন্তে দফায় দফায় সয়াবিন তেলের দাম এখন দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে করে ভোক্তা সাধারণের নাভিশ্বাস ওঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা নির্ধারিত ছিল। বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের দাম ৭৬০ ও পাম তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১১৮ টাকা। বর্ধিত দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮ টাকা বেড়ে ১৬৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বেড়ে ১৪৩ টাকা, বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের দাম ৩৫ টাকা বেড়ে ৭৯৫ ও পাম তেলের দাম ১৫ টাকা বেড়ে ১৩৩ টাকা হয়েছে।

১ মার্চ থেকে খুচরা বাজারে গ্রাহকদের বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতি লিটার কিনতে হচ্ছে ১৮০ টাকায়। এক লিটার লুজ সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৩ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিক্রেতা বলেন, ভোজ্য তেলের বাজার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অধিক মুনাফা লোভী কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সিলেটের বাজারেও তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সিলেটের মুদি দোকানিদের অনেকে বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ইস্যুতে সিলেটেও তেলের বাজারে দাম বাড়িয়েছেন ডিলার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সিলেট নগরের কালিঘাটে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। অভিযানে সয়াবিন তেল সংকট দেখিয়ে গুদাম ভর্তি করে রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। এমন অপরাধে কালিঘাটের একাধিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সংরক্ষণ, অধিক মূল্যে তেল বিক্রি এবং টেম্পারিং করার অপরাধে মোট দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

ভোক্তা অধিকার সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রমতে, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিন্দ বাজারে ৩ প্রতিষ্ঠানকে ২৮ হাজার, হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার চৌধুরী বাজারে ৩ প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ১৫ হাজার ও মৌলভীবাজার জেলা সদরে ৫ প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২২
এনইউ/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।