ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি

নামে ব্র্যান্ড, দেয় ভ্যাট ফাঁকি

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
নামে ব্র্যান্ড, দেয় ভ্যাট ফাঁকি ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ষাটের দশক থেকে বাংলাদেশে রন্ধন-কলাকে শিল্পের সীমায় উত্তীর্ণ করেছে ফখরুদ্দিন ফুড অ্যান্ড বিরিয়ানি। খাবারে এনেছে আভিজাত্য।


 
মুখরোচক সব খাবারের ব্র্যান্ড ফখরুদ্দিন। তাই তো বিয়ে, বৌ-ভাত, পাটি, ঘরোয়া আয়োজন বা যেকোনো বড় অনুষ্ঠানে ফখরুদ্দিনের খাবার না হলেই যেন নয়।
 
পোলাও, বিরিয়ানি, কাচ্চি, রোস্ট, রেজালা, জালি কাবাব, টিক্কা, শামি কাবাব, জর্দা, বোরহানি, ফিরনি সব অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন খাবার সরবরাহ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
 
নামে ব্র্যান্ড হলেও দৈনিক প্রায় আড়াই লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি মূসক গোয়েন্দাদের অভিযানে ভ্যাট ফাঁকির অভিনব চিত্র উঠে এসেছে।
 
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে বহু বছর ধরে খাবার সরবরাহ করে আসছে। একসঙ্গে কয়েক হাজার মানুষের খাবার সরবরাহ করতে পারে।
 
খাবার থেকে নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাট নেয় প্রতিষ্ঠানটি, কিন্তু দেয় না মূসক চালান। ইসিআর ব্যবহার করে, জমা দেয় না ভ্যাট। এ নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ পড়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
 
সূত্র আরো জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বেইলি রোডের (অর্ডার অফিসে) অফিসে অভিযান পরিচালনা করে মূসক গোয়েন্দার একটি দল।
 
অভিযানের সময় গোয়েন্দাদের হুমকি দেন কর্মচারীরা। অর্ডারশিট, খাতা, চেক বই ও রেজিস্ট্রার লুকিয়ে ফেলেন ফ্রিজের ভেতরে। দিতে রাজি হননি কাগজপত্র।
 
সূত্র জানায়, পরে গোয়েন্দারা কাগজপত্র, কম্পিউটার সিপিও, ইসিআর জব্দ করেন। তথ্য যাচাইয়ে বের হয়ে আসে ভ্যাট ফাঁকির চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিষ্ঠানটির সব শাখাই একইভাবে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
 
গোয়েন্দারা দেখেন, দৈনিক প্রায় ৩০ লাখ টাকার খাবার সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। সঙ্গে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করে। কিন্তু মূসক চালান দেয় না।
 
প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ টাকা ভ্যাট এলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। তবে প্রতি মাসে ৪৮ হাজার টাকা ফিক্সড ভ্যাট (ফিক্সড ভ্যাট বলতে কোনো ভ্যাট নেই) দেয়।
 
অভিযানে কয়েক লাখ টাকার খাবারের অগ্রিম অর্ডারশিট পাওয়া যায়। পাওয়া যায় অর্ডারের চিরকুট। তাতেও ভ্যাট নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, কিন্তু চালান দেয়নি।
 
অভিযানে প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট ফাঁকি দেয় না বলে দাবি জানালেও এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি বলেও জানিয়েছে সূত্র।
 
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, সেবার বিপরীতে মূসক চালান দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি দিচ্ছে না, যদিও ভ্যাট নিচ্ছে।
 
তিনি বলেন, ফিক্সড ভ্যাট বলতে কোনো ভ্যাট নেই, যা প্রতিষ্ঠানটি দিচ্ছে। ভ্যাট হলো যতো বিক্রি করবেন তার ওপর। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আমরা কাগজপত্র জব্দ করেছি। প্রতিষ্ঠানটি অনেক বছর ধরে এভাবে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। আমাদের দেখে স্টোররুমে কাগজপত্র লুকিয়ে ফেলে।

প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।
 
মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, অভিজাত প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ফাঁকি কল্পনা করা যায় না।
 
তিনি বলেন, অভিযানে প্রচণ্ড বাধা এসেছে। কাগজপত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। জব্দ করা কাগজপত্র যাচাই করে ভ্যাট ফাঁকির ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে।
 
জব্দ করা কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। মামলা করা হবে। এ প্রতিষ্ঠানের মতো বড় আরো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। শিগগিরই অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
আরইউ/এএসআর

** ‘ফিক্সড’ ভ্যাটের নামে প্রতারণা!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।