ঢাকা, রবিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

কেউ কেউ পছন্দ করেন ‘তীব্র ঝালযুক্ত’ নাগা

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:১৭, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
কেউ কেউ পছন্দ করেন ‘তীব্র ঝালযুক্ত’ নাগা লাল-সবুজ রঙের নাগা মরিচ/ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মরিচ কোনো সাধারণ খাদ্য উপাদান নয়। ঝালযুক্ত একটি খাদ্য উপাদান।

তবে এর থেকেও তীব্র ঝালযুক্ত আরেকটি বিশেষ মরিচ রয়েছে – যা ‘নাগা’ নামে পরিচিত। এ বিশেষ মরিচটি সাধারণ মানুষের পক্ষে খাওয়া প্রায় অসম্ভব।  

আমাদের জিহ্বায় এই মরিচের একটি ছোটকণা লাগা মাত্রই ঝাল-তীব্রতার কার্যক্রম পুরো মুখগহ্বরে ছড়িয়ে পড়ে। মারাত্মক রকম ঝালপ্রেমী না হলে এই মরিচ খাওয়া মাত্রই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে নাগা মরিচের চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। কৃষকেরা সাথী ফসল হিসেবে এ অঞ্চলের চাষিরা নাগা মরিচ চাষে ঝুঁকছেন। তুলনামূলক কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় ছোট-বড় অনেক চাষী এখন নাগা মরিচ চাষেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন পথ খুঁজে পাচ্ছেন।  

জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাটি নাগা মরিচ চাষের উপযুক্ত হওয়ায় চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সুগন্ধি আর ঝাঁঝে ভরপুর নাগামরিচ ঝাল প্রিয় মানুষের প্রিয় খাদ্য ছাড়াও নাগা মরিচের তৈরি আচারের চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ইউরোপে বসবাসকারী  বাংলদেশী ও বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে নাগা মরিচের আচার বেশি জনপ্রিয়।

প্রতি বছরই শ্রীমঙ্গলের নাগা মরিচ রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ঝালপ্রিয় মানুষের কাছে এই নাগা মরিচের কদর আলাদা। ঝালের জন্য বিখ্যাত সিলেটের নাগা মরিচ অঞ্চল ভেদে বোম্বাই মরিচ, ফোটকা মরিচ বা কামরাঙা মরিচ নামেও পরিচিত। ২০০৭ সালে গিনেস বুকে নাগা মরিচকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর ইংরেজি নাম ‘কোবরা চিলি’ আর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্যাপসিকাম চিনেনসি’। কাঁচা সবুজ পুষ্ট নাগা মরিচ ঝালের জন্য খাবারের সাথে খাওয়া হয়। নানা ধরনের ঝাল খাবার যেমন মুড়ি ও ফুসকা ইত্যাদি  তৈরি করতে এবং পরিবেশন করতে কুচি কুচি করে কেটে ব্যবহার করা হয়। আচার তৈরিতেও এ মরিচ ব্যবহার করা হয়। নাগা মরিচের আচারের বিশেষ চাহিদা রয়েছে সিলেট অঞ্চলে।  

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড় টিলা নাগা মরিচ চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী। দিলবরনগর, মোহাজেরাবাদ, বিষামনি, রাধানগর, ডলুছড়া, ডেঙ্গারবন, টিকরিয়া, পারেটং, হুসনাবাদ ও শিশিলবাড়ি এলাকার চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে নাগা মরিচের চাষ হয়েছে। শীত ও গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে এ ফসল চাষ করা যায়। চারা লাগানোর দুই মাস পর থেকেই ফুল আসে। ফুল আসার এক মাসের মধ্যে খাবার উপযোগী হয়। জেলায় আরও অধিক পরিমাণে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাগা মরিচ বা বোম্বাই মরিচ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।  

রাধানগর এলাকার কৃষক কাজী সামছুল হক বলেন, এবার ১ হাজার ২০০ শতক জমিতে নাগামরিচ চাষ করেছেন। প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে প্রায় তিন-চারগুণ টাকার বিক্রির লাভ নাগা মরিচে আশা করছেন তিনি। অপর কৃষক ইউনুছ মিয়া বলেন, নাগা মরিচ সঠিকভাবে চাষ করতে পারলে অনেক লাভবান হওয়া যায়। তিনি গত বছর ৭২ হাজার টাকা খরচ করে ১ হাজার নাগা মরিচের চারা রোপণ করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। অপর আরেকজন কৃষক রাকিবুল বলেন, ‘১৫০ নাগা মরিচের চারা লাগিয়ে ছিলাম। যা থেকে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো মরিচ বিক্রি করেছি। লাভজনক হওয়ায় এবারও চাষ করেছি। ’ 

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান বলেন, শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ি এলাকার চাষিরা লেবু-আনারসের সাথী ফসল হিসেবে নাগা মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এছাড়া নাগা মরিচ চাষে খরচও কম। তেমন পরিচর্যারও দরকার পড়ে না। নাগা মরিচ চাষে আগ্রহী কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৮০ হেক্টর জমিতে সাথী ফসল হিসেবে নাগা মরিচ আবাদ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের মাটি নাগা মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। শীত ও গ্রীষ্মকাল উভয় মৌসুমেই নাগা মরিচের চাষ হয়। হেক্টর প্রতি নাগা মরিচের গড় উৎপাদন ৩ টন।  

তিনি আরও বলেন, নাগা মরিচ এককভাবে জমিতে চাষ করা হয় না। এটি অন্য ফসলের সঙ্গে অবশিষ্ট জায়গায় চাষ করা হয় বলে এ ফসলটির নাম ‘সাথী ফসল’। লাগানোর তিন মাসের মধ্যে ফলন ধরে। বিশেষ করে লেবু গাছের নিচে এ ফসলের চাষ বেশি করা হয়। উচ্চমূল্যের ফসল নাগা মরিচ দিয়ে আচার তৈরি করা হয় এবং ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত বাংলাদেশীদের জন্য নাগা মরিচ বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।