ঢাকা, বুধবার, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৪ জুন ২০২৫, ০৭ জিলহজ ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না!

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:১০, জুন ৩, ২০২৫
বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না!

ব্যাংকনির্ভরতা নেতিবাচক বলছেন ব্যবসায়ীরা
 
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্বর্তী সরকার ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট মেটাতে চলতি বছরের চেয়ে বেশি মাত্রায় ব্যাংকনির্ভর হওয়া একটি নেতিবাচক দিক বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এতে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না। ঋণপ্রবাহ কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে।

জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকার চেয়ে কম। ঢাকা চেম্বার মনে করছে, ঘাটতি বাজেট মেটাতে চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরে বেশি মাত্রায় ব্যাংকনির্ভর হওয়া একটি নেতিবাচক দিক। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে করজালের আওতা বাড়িয়ে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও মূল্যস্ফীতি কমাতে বাজেটে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করেনি ডিসিসিআই।

জানা গেছে, জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকেও ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাত থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের ১৪ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশ কম।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, বাজেট ঘাটতির ৪৭ শতাংশ বা ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা পূরণ করা হবে ঋণের মাধ্যমে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ হার রয়েছে ৪৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি (অপেক্ষমাণ) মাহমুদ হাসান খান বাবু গতকাল বলেন, ব্যাংকগুলো সব সময় চায় নিরাপদ বিনিয়োগ করতে। সরকার ঋণ নিলে সেটা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। এতে বেসরকারি খাতে পুঁজির টান পড়বে। নতুন বিনিয়োগে ভাটা পড়বে। কর্মসংস্থান হবে না। উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। সরকারের উচিত হবে ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বিকল্প উপায়ে তহবিল সংগ্রহ করে বাজেট ঘাটতি পূরণ করা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১২ মে পর্যন্ত সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ প্রবণতা চলমান থাকলে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) শেষে নিট ঋণ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ার অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমছেই। টানা সাত মাস ধরে কমে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের প্রবৃদ্ধি ফেব্রুয়ারিতে ৬.৮২ শতাংশে নেমে এসেছে।

এই প্রবৃদ্ধি ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারির পর আর কখনো এতটা কম হয়নি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি। তবে চলতি বছরের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৫৭ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমেছে। গত নভেম্বর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৬৬ শতাংশ।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের খরচ ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। এ ছাড়াও আর্থিক খাত থেকে সরকারের অধিক হারে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি হ্রাসে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির গতিকে মন্থর করতে পারে।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ডিসিসিআই সভাপতি: প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসা ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ততটা সহায়ক নয় বলে মন্ত্রব্য করেছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের অনুপস্থিতি ব্যবসায়িক কার্যক্রম বেশ চাপের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। এ সময় ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ন্যূনতম করের সমন্বয়, করজাল সম্প্রসারণ এবং অটোমেটেড রিটার্নব্যবস্থা চালুর মতো ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, ব্যবসা পরিচালনার উন্নয়ন, ব্যাংকিং খাত সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় সার্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ততটা সহায়ক নয়।

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বেশ বড়। অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। ব্যক্তি পর্যায়ের করের সীমা অপরিবর্তিত রাখা এবং স্ল্যাব উঠিয়ে নেওয়ায় মধ্যবিত্ত ও বিশেষ করে চাকরিজীবীদের করের বোঝা আগামী অর্থবছর হতে আরও বেশি বহন করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, অটোমোবাইল খাতে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করায় এ খাতের স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে।  

এ ছাড়াও টার্নওভার কর ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনার দাবি করেন ডিসিসিআই সভাপতি। ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ কমলেও স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানোয় এ শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি হ্রাসে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালন ব্যয় বাড়বে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির গতিকে মন্থর করবে। ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের খরচ ৬-৭ শতাংশ নামিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। এ ছাড়াও আর্থিক খাত থেকে সরকারের অধিক হারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধার্য করা হয়েছে, যার মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এসএমই খাতের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ এ বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি বলে ডিসিসিআই সভাপতি মত প্রকাশ করেন।

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।