ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

'বেসরকারি খাত না এগোলে দেশ কখনও এগোতে পারবে না'

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
'বেসরকারি খাত না এগোলে দেশ কখনও এগোতে পারবে না'

ঢাকা: এসএমই সেক্টরের টেকনোলজি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে টেকনোলজি ব্যবহারের চেষ্টা করছে সরকার। এরই মধ্যে সরকারি সেক্টরে টেকনোলজি ব্যবহারের বিষয়ে অনেক ধরনের কাজ হচ্ছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে বেসরকারি খাত না এগোলে দেশ কখনও এগোতে পারবে না।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলের ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ভবনে ‘টেকনোলজি ফর স্মার্ট এসএমইএস’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিন এসব কথা বলেন।

সেমিনারে মো. শামসুল আরেফিন বলেন, টেকনোলজি মূলত দুইটি ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। একটি হচ্ছে সরকার কতটুকু এবং কীভাবে ব্যবহার করবে। আর অন্যটি হচ্ছে বেসরকারি খাতে কীভাবে ব্যবহার হবে। পাশাপাশি টেকনোলজিস ব্যবহারের বিষয়ে দুই বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা হচ্ছে স্মার্ট গভর্নমেন্ট বা গভর্নেন্স। যারা শুধাত্র সেবা দানকারী হিসেবে থাকবে। আরেকটা হচ্ছে স্মার্ট ইকোনোমি।

তিনি বলেন, স্মার্ট গভর্মেন্ট কেন হতে হবে এর কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন, সরকারের অনেক কর্মকাণ্ডের কারণে বা পোর্টের অনেক বিষয়ের কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এখানে সরকার যদি টেকনোলজির ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে অনেক কিছুর সমাধান সহজভাবে হবে। আমরা চাই সরকারের কর্মকাণ্ড হবে ডাটা নির্ভর। আর সঠিক ডাটা নির্ভর ছাড়া কোনো কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব না। আর ডাটা সঠিক থাকলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সহজ হয়। আর এসএমই সেক্টরে লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের ডাটার অনেক প্রয়োজন আছে। এসব বিষয়কে যদি আমরা সঠিকভাবে এড্রেস না করতে পারি তাহলে কোনোভাবেই আমরা স্মার্ট গভর্নমেন্ট বা গভর্নেন্স নিশ্চিত করতে পারবো না।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এ সচিব আরও বলেন, এসএমই বা সিএসএমইর যাই বলা হোক না কেন তারা কিন্তু আমাদের মূল অর্থনীতির বিষয় আছে। আমাদের জিডিপি থেকে শুরু করে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সবকিছুতেই তাদের অবদান আছে। ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে আজকের এ বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য যদি একটা প্লাটফর্ম করা যেত, যেখানে সবার সব ধরনের ডাটা থাকত। তাহলে এটা ডাটা নিয়ে উদ্যোক্তারা সহজে ব্যাংকে যেতে পারতেন, যেটা তাদের জন্য খুবই সহজ হতো।

সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিবিএল ফিনটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআই'র সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় ছিলেন সেবা প্লাটফর্ম লিমিটেডের সিও এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলমুল হক সজিব, বডি জবস ডট কমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহ- প্রতিষ্ঠাতা এ কে এম ফাহিম মাশরুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক।

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, কিছুদিন আগে শুনতে পেরেছি একটি গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য ট্রাকে করে টাকা নিয়ে যাচ্ছিল। তখন সেই টাকা চুরি হয়ে যায়। তবে সরকার কিন্তু সেলারি দেওয়ার জন্য ব্যাংকিং এর ব্যবস্থা করেছে। এই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সেলারির বিষয়ে কখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে এই টেকনলোজি ব্যবহারে কেন সবাই আগ্রহী হচ্ছে না? তবে আমি মনে করি আমাদের এখন পর্যন্ত যেসব টেকনোলজি আছে সেগুলো পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে হবে। নতুন টেকনোলজির দিকে ঝোঁকার আগে।

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এসএমই সেক্টরে যে কেউ চাইলে পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে অনলাইনে প্রডাক্ট আমদানি করে গ্রাহকের দরজায় পৌঁছে দেয়। এ ক্ষেত্রে টেকনোলজি অনেক অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো এসএমই কোম্পানি হয়নি যেখানে অনলাইনে আমাদের দেশের প্রোডাক্ট পৃথিবীর অন্য সব দেশে বিক্রি করা যায়। অর্থাৎ ক্রসবর্ডার ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসার সুযোগ বাড়ছে না। শুধুমাত্র আমরা প্রোডাক্ট বাইরে থেকে আনতে পারি কিন্তু আমাদের পণ্য বাহিরে পাঠাতে পারছি না। তাই এ বিষয়ে আমাদেরও কাজ করার অনেক কিছু আছে।

সেমিনারে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, এসএমই এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা খুব একটা ভালো নেই। এসব বিষয় আমাদের নজরে আছে। করোনার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এত ভালো উদ্যোগ নিলেও ব্যাংকগুলোর সীমাবদ্ধতার কারণে সে সেবা আমরা সঠিক ভাবে দিতে পারিনি।

বিসিক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য একটা সুখবর আছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য স্পেসের (যায়গার) ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের গড়ার লক্ষে বিসিক সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও এসডিজি'র সাবেক প্রধান সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ।  

তিনি বলেন, প্রাইভেট সেক্টর হচ্ছে ইকনোমি গ্রোথের কাজ করে। আর এসএমই এবং এমএসএমই ব্যবসায়ীদের কারণেই মূলত দেশ এতটা অগ্রসর হয়েছে। আর যারা টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসা করেন তারাই খুব দ্রুত উন্নতি করে। স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে টেকনোলজির বিকল্প কিছু হতে পারে না। টেকনলোজির বিষয়ে আমাদের অভ্যস্ত হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
ইএসএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।