ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের নজর এড়ানোর জন্য কমান্ড পোস্ট স্থাপন করা হয়। সাধারণ মানুষ তা কখনো সরাসরি দেখবে তা কল্পনা করেননি।

কিন্তু এবার সেই কমান্ড পোস্ট দেখার সুযোগ পেয়েছেন চট্টগ্রামের মানুষ।

বৃহস্পতিবার(১৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণজয়ন্তী মেলায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (তৎকালীন ইবিআর) কর্তৃক ব্যবহৃত অস্ত্র, বোম্ব ডিসপোজাল পোশাক, নোরা বি৫২ কামান ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিক সজ্জিত পোশাক প্রদর্শিত হয় এ মেলায়। গহিন পাহাড়ি জঙ্গলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, দুর্গম পাহাড়ে রাস্তা তৈরির কার্যক্রমও এ স্টলে প্রদর্শিত হয়। সব স্টল মাটির উপরে হলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ স্টলটি মাটির নিচে করা হয়েছে। মাত্র কয়েকদিনের পরিকল্পনায় এটি তৈরি করেছেন তারা।  

মেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, সিভিল সার্জন কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর, কেন্দ্রীয় কারাগার, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, খাদ্য বিভাগ, বন বিভাগ,  বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম দফতর, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসসহ ১২৮টি স্টল রয়েছে।  

সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ভিশন কী ছিল, সে অনুযায়ী এখন কী হয়েছে সেটি, এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করাই মেলায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য। পার্বত্য চট্টগ্রামে পোস্ট কাউন্টার ইনচার্জেন্সি অপারেশন, বিভিন্ন জাতীয় প্রকল্প যেগুলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে সেগুলোই প্রদর্শিত হচ্ছে।

জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনী

দেশগঠনমূলক কাজে সেনাবাহিনীর অবদান অপরিসীম। বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যেমন পদ্মাসেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্প, মহিপাল ফ্লাইওভার, কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, সীমান্ত সড়ক প্রকল্প, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশের উন্নয়নে উল্লেখযাগ্যে ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী।

এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণে সেনাবাহিনী প্রচুর পরিমাণ রাস্তা এবং কালভার্ট নির্মাণ করেছে, যা উক্ত অঞ্চলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের পর্যটন শিল্পে ব্যাপক অবদান রেখেছে।

জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান

বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভারস গ্রুপে (ইউএনআইএমওজি) একদল কর্মকর্তাকে প্রেরণের মাধ্যমে দেশটি শান্তিরক্ষার যাত্রা শুরু করে। ১৯৪৮ সাল থেকে মোট ৬৯টি শান্তি মিশনের মধ্যে বাংলাদেশ সফলভাবে ৫৪টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯৭ শান্তিরক্ষী ৪০টি দেশে জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে ৬ হাজার ৫৮২ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে বাংলাদেশ একটি শীর্ষস্থানীয় সৈন্য প্রদানকারী দেশ। বর্তমানে জাতিসংঘের ২২টি মিশনের মধ্যে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৮টি দেশে ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা বরাবরই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।


পার্বত্য চট্টগ্রামে অবদান সেনাবাহিনীর অবদান

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহের প্রাদুর্ভাবের সময়, বাংলাদেশ সরকার সিআইও-এর জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় অনেক অফিসার এবং সদস্যবৃন্দ তাদের দেশপ্রেমের জন্য মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করেছিলেন যা দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক কাউন্টার ইনসার্জেন্সি সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছিল।

পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অসামান্য অবদানের কারণে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুই দশকেরও বেশি দীর্ঘ দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। বর্তমানে সেনাবাহিনী সরকারকে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পোস্ট সিআইওর ভূমিকা পালন করছে।


আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনের অব্যাহত প্রচেষ্টা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক সাজোয়া যান এবং গোলন্দাজ কোরে মাঝারি ও দূরপাল্লার এমএলআরএস রেজিমেন্ট। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২০১১ সালে চীন থেকে ৪৪টি এমবিটি-২০০০ ট্যাংক ক্রয় করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীগণ চীনের তৈরি টাইপ-৬৯ ট্যাংককে আপগ্রেড করে টাইপ-৬৯ টুজি নামে উন্নীত করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভারি ওয়ার্কশপে ১৭৪টি টাইপ-৫৯ ট্যাংককে আপগ্রেড করে টাইপ-৫৯ বিডি দুর্জয় মানে উন্নীত করা হচ্ছে। পদাতিক সৈন্যদের গতিশীলতা বাড়ানারে জন্য ৩০০টি বিভিন্ন ধরনের আর্মার্ড যান কেনা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি এভিয়েশন ফরওয়ার্ড বেস, চট্টগ্রাম এর উদ্বোধন এবং ২টি বেল ৪০৭ জিএক্সআই হেলিকপ্টার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০১৬ সালে আর্মি এভিয়েশনের উন্নয়নে এই বাহিনীতে যুক্ত হয় ৬টি এমআই-১৭১ এস এইচ হেলিকপ্টার। ২০১৭ সালে একটি কাসা সি-২৯৫ পরিবহন বিমান সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে নজরদারি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০১৭ সালে স্লোভেনিয়া থেকে ৩৬টি ব্রামারে সি ৪ আই মনুষ্যবিহীন আকাশযান যুক্ত করা হয়েছে।

>> মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণজয়ন্তী মেলার উদ্বোধন

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ১৭ মার্চ, ২০২২
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।