চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও এ নিয়ে যেন সাধারণ মানুষের মধ্যে মাথাব্যথা নেই। রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি।
মাস্ক ছাড়াই অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহড়জুড়ে।
চট্টগ্রামকে এখনো করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় হটস্পট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এ অঞ্চলে সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকেই প্রতিদিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সাথে মৃত্যুও। চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সিংহভাগই তরুণ, যুবক ও মধ্যবয়সী। যাদের বয়স ২০ থেকে ৪০ এর মধ্যে। মোট আক্রান্তের প্রায় ৭০ শতাংশ এ বয়সীরা।
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন। বুধবার (২১ জুলাই) সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৩২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার ৫৬১ জন এবং উপজেলায় ২২৯ জন।
এদিকে চট্টগ্রামে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে নগরের ৫৫ হাজার ৬৪৩ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৭ হাজার ৭৩৯ জন। চট্টগ্রাম করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৬০ জনের। এরমধ্যে নগরের ৫২৯ জন ও বিভিন্ন উপজেলার ৩৩১ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন উদাসীনতায় সামনের দিনগুলোতে করোনা আরও বেশি ভয়ংকর হতে পারে। আড্ডা কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারিভাবে নিদের্শনা থাকলেও তা মানার বালাই নেই। মাস্ক পরিধান না করার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা থাকলেও এ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়াতেও প্রশাসনের ঢিলেঢালা মনোভাব।
সংক্রমণ শুরুর দিকে সবার মাঝে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার যে প্রবণতা ছিল, বর্তমানে সেই প্রবণতা হ্রাসই পাচ্ছে। তাই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে আরও বেশি কঠোর হওয়ার পরামর্শ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। মানুষের চলাচল ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না গেলে সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে বলেও অভিমত তাদের।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে কারোনা পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো নয়। নগরের সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে। গত কয়েকদিন সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের ওপরে উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হবে কিনা তা ঈদুল আজহার ওপর নির্ভর করবে। ঈদের পর সংক্রমণ নিম্নমুখী রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে সিংহভাগই সংক্রমিত হচ্ছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, যদি নিজ থেকেই আমরা সচেতন না হই, তাহলে এ সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। আর বাইরে আসতে হলে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। মাস্কের বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে। তা না হলে সামনের দিনগুলো আরও খারাপের দিতে যেতে পারে। নিজেদের মধ্যে সচেতনতা না থাকলে সরকারের শত উদ্যোগও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, মাস্ক না পরলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৬ মাসের কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু তা কার্যকরে প্রশাসন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। কেউ আক্রান্ত হলে তার পরিবারও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। রাস্তায় বের হলেই মানুষের ঢল। পাড়ায়, দোকানে, রাস্তার পাশে যুবকদের আড্ডা। এসব ঠেকাতে হবে। অন্যথায় সামনের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২১
এমএম/এসি/টিসি