ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বৈসাবি: ফুল-নিমপাতায় সাজবে ঘর

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২১
বৈসাবি: ফুল-নিমপাতায় সাজবে ঘর ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: করোনাকাল, তার সঙ্গে লকডাউনের খড়গ। এ অবস্থায় ফিকে হয়ে গেছে বৈসাবি উৎসবের আনন্দ।

তবুও বিউ ফুল আর নিমপাতায় সাজবে চট্টগ্রামের সনাতন সম্প্রদায় ও শহরে বসবাসরত পার্বত্যাঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘর। একইসঙ্গে চলবে নাড়ু ও পাচন খাওয়া।

নবযুগ পঞ্জিকা মতে, মঙলবার (১৩ এপ্রিল) ফুলবিউ, বুধবার (১৪ এপ্রিল) মুলবিউ এবং বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেবেন সনাতনীরা। ৫৫০ খ্রিষ্টাব্দে বরাহমিহির রচিত ‘পঞ্চসিদ্ধিকা’ নামের জ্যোতির্বিজ্ঞান গ্রন্থে উল্লেখিত সূর্যসিদ্ধান্ত অনুসারে আকাশলোকের বিশাখা নক্ষত্র অনুসারে বৈশাখই বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। সে হিসেবে পহেলা বৈশাখকে নববর্ষের দিন ধরা হয়।  

বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের রীতি অনুযায়ী, ফুল বিউতে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করে দরজায় ঝোলানো হয় ফুলের মালা আর নিমপাতা। নিমপাতা রোগবালাই তাড়াবে, আর ফুল জানাবে-স্বাগতম। চৈত্র সংক্রান্তি বা মূল বিউতে ভাতের সঙ্গে ১৮টি বা আরো বেশি সবজি দিয়ে রান্না করা পাচন খাওয়া হয় ঘরে ঘরে। পহেলা বৈশাখে ভোর হতেই স্নান সেরে নতুন কাপড় পরিধান করে ব্যবসায়ী ও দোকানিরা ব্যস্ত থাকেন হালখাতা খোলার কাজে। লক্ষ্মী ও গণেশের পূজার্চনা শেষে হলুদ আর সিঁদুরমাখা মুদ্রার ছাপ দেওয়া হয় লাল শালুতে মুড়িয়ে রাখা নতুন হালখাতার প্রথম পৃষ্ঠায়। ‘ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ’ কিংবা স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা এই হিসেবের খাতাটাই নতুন বছরের আয় ও সমৃদ্ধির প্রতিভূ। ফুল, কলাগাছ, আম্রপল্লব দেওয়া মঙ্গল ঘট দিয়ে সাজানো দোকানগুলোয় পরিচিত ও বাঁধা গ্রাহকদের জন্য মিষ্টিমুখের আয়োজনও চলে এদিন।  

করোনাকালের এই সময়ে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকা সাপেক্ষে নগরের হাজারী লেইন ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সীমিত পরিসরে হালখাতা খোলার অনুষ্ঠান করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে রাখছে তাদের যাবতীয় হিসাব। পাশাপাশি বাইন্ডিং হাউসগুলোতে ক্রেতাদের দেখা নেই।

এদিকে নগরের বকশিরহাটে নাড়ুর দোকানগুলোতে চলছে বিকিকিনি। বাকলিয়া ও বলুয়ার দিঘীর পাড় এলাকার কারখানায় তৈরি মোয়া-নাড়ু এখানকার দোকানগুলোতে মজুদ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- খইয়ের নাড়ু, নারকেলের নাড়ু, জিরার নাড়ু, বরই নাড়ু, মুড়ি ও চিড়ার মোয়া, গুড় মেশানো খই, মুড়ি, চিড়া, তিলের নাড়ু, ঘস্যার টপি, বাদামের টফি, চানাচুর, মটর ভাজা, ছাতু (খইয়ের গুঁড়ো), বাতাসা ও আটকরই। আটকরইয়ে আছে মুড়ি, বুট, বাদাম, মিষ্টি জিরা, মিষ্টি কুমড়োর বিচি, শিম বিচি, মুগ বা খেসারি ডাল ও ভুট্টা। একসময় গ্রামে ঢেঁকিতে বানানো এসব নাড়ু এখন রেডিমেইড পাচ্ছেন নগরবাসী।

এছাড়া নগরের হাজারী লেইন, বকশিরহাট, হেমসেন লেইন সহ কাঁচাবাজারগুলোতে নিমপাতা ও বিউ ফুলের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে পাচন রান্নার উপকরণ। নিমপাতা দুই আঁটি ১০-১৫ টাকা এবং বিউ ফুল প্রতিকেজি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। স্থানীয়ভাবে পরিচিত কাট্টইস, কাঁচা কাঠাল, তারা, ডুমুর, পুঁতি বেগুন, কলা গাছের অলি, গিমাশাক, চালকুমড়া, কাঁচা আম, কাঁচা কলা, সজনে ডাটা, মূলা, পটল, গাজর, লাউ, তিত করলা, টমেটো, কাঁকরোল, বরবটি, ঢেঁড়স, কচুর ছড়া, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, শালবন, শসা, আলু, কচুর লতিসহ শাক বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা ও তদুর্ধ্ব দামে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২১
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।