ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সবুজ পাহাড়ে রঙিন সিঁড়ির ঝলক চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২১
সবুজ পাহাড়ে রঙিন সিঁড়ির ঝলক চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: ফয়’স লেকের সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা ‘স্বর্গের সিঁড়ি’। লাল, সবুজ, হলুদ, নীল রঙের ঝলকানি সেই সিঁড়িতে।

কখনো মনে হবে রঙিন ফোয়ারার ঝরনাধারা যেন বয়ে চলছে, তপ্ত দুপুরে আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছে। ময়ূরের পেখম তোলা নাচ দেখতে দেখতে সিঁড়িতে ওঠা।
স্বচ্ছ নীল জলরাশির হ্রদ, সবুজের হাতছানি আর দূরের সমুদ্র, নীলাকাশ দেখতে দেখতে সিঁড়ি ভাঙা।  

ক্লান্তি ভুলতে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম, রঙিন ছাতায় ছবি তোলা। সিঁড়ির পাশের দেয়ালে ‘ঘুরে বেড়াচ্ছে’ শিল্পীর আঁকা শিশুদের প্রিয়সব বন্যপ্রাণী। কেউ যাতে সিঁড়ির পাশ দিয়ে পড়ে না যায় সে জন্য দেওয়া হয়েছে স্টিলের বেড়া। সিঁড়ি যেখানে শেষ সেখানে শিশু-কিশোরদের কচিকাঁচার কোলাহল। দোলনায় দোল খাচ্ছে শিশুরা, মজার মজার রাইডে চড়ে উল্লাসে মেতেছে তারা। কেউবা ব্যস্ত বাঘ, সিংহের সঙ্গে সেলফি বা ছবি তুলতে।  

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, সিঁড়িটা আগেই উদ্বোধন করা হয়েছিল। করোনার কারণে রং করা বাকি ছিল। শুক্রবার (৫ মার্চ) চিড়িয়াখানার দর্শকদের জন্য এ সিঁড়িটি উন্মুক্ত করা দেওয়া হবে। এ চিড়িয়াখানাকে শিশুদের কাছে শিক্ষণীয়, আকর্ষণীয় করতে নতুন নতুন পরিকল্পনা ও পশুপাখি সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।  

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নতুন আকর্ষণ চার একর পাহাড়জুড়ে নৈসর্গিক সিঁড়িটি। এখানেই শেষ নয়, সাদা বাঘের জন্য বিখ্যাত এ চিড়িয়াখানায় চলতি বছর নতুন অতিথি হিসেবে আসছে শিশুদের প্রধান আকর্ষণ লম্বা গলার জিরাফ, ক্যাঙারু, জলহস্তী, উট, দুম্বা, ওয়াইল্ড বিস্ট ইত্যাদি।  

সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৬ একর পাহাড়ি জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। বর্তমানে এ চিড়িয়াখানার জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২ একরে। একসময় বাঘশূন্য হয়ে পড়া এ চিড়িয়াখানায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা হয় একজোড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সেগুলো বংশ বৃদ্ধি করে এখন মোট বাঘের সংখ্যা ৬টিতে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে একটি সাদা বাঘ। একটি চার মাসের শাবকও আছে। তাই বাঘের জন্য দ্বিগুণ বড়, সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুটের একটি খাঁচা তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রসারিত এলাকায় নতুন করে পশু-পাখির জন্য খাঁচা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যেখানে স্থান দেওয়া হবে নতুন আমদানি করা পশু-পাখিকে।  

এ চিড়িয়াখানায় ঢুকতে জনপ্রতি টিকিট করতে হয় ৫০ টাকার। ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকিট বিক্রির অর্থে মোট ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৭ টাকার উন্নয়নকাজ করেছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।  

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বাংলানিউজকে বলেন, কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও প্রবেশ টিকিট বিক্রির অর্থ থেকে এ চিড়িয়াখানায় আশাতীত উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পশুপাখি সংগ্রহের পাশাপাশি প্রাণীদের বংশ বিস্তারে বেশকিছু ইতিবাচক সাফল্য রয়েছে আমাদের। দেশে প্রথমবারের মতো নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ইনকিউবেটরে অজগরের ২৬টি বাচ্চা ফুটিয়েছি আমরা। এখানে আছে সাদা বাঘ। রয়েছে বিশাল পক্ষীশালা আর বিলুপ্ত প্রজাতির বেশ কিছু পশুপাখি।  

তিনি জানান, বর্তমানে বাঘ, সিংহ, জেব্রা, ময়ূর, কুমির, গয়াল, বানর, উল্লুক, ভালুক, চিত্রা ও সাম্বার হরিণ, চিল, শকুন, শজারু, উটপাখি, ইমু, শেয়াল, মেছোবাঘ, অজগর, গন্ধগোকুল, পায়রা, টার্কি, তিতিরসহ ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২১
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।