ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সৌরবিদ্যুতের আলোয় বদলে যাওয়া এক জনপদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
সৌরবিদ্যুতের আলোয় বদলে যাওয়া এক জনপদ আলীখালী এলাকার প্রতিষ্ঠিত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

চট্টগ্রাম: বছর দুয়েক আগেও রাতে হারিকেন আর চেরাগের আলোয় চলতো পড়ালেখা। অল্প সংখ্যক পরিবারে পল্লি বিদ্যুৎ থাকলেও এ বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু এখন সবখানে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। বিদ্যুৎ আর যায় না। এটি যেন এখানে ‘স্থায়ী বাসিন্দা’।

১১৬ একর জায়গায় ৮৭ হাজার সৌর প্যানেল নিয়ে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বদৌলতে এর সুফল পাচ্ছেন কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দারা। হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালী এলাকার প্রতিষ্ঠিত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

পিডিবি কক্সবাজার বিতরণ বিভাগের তথ্যমতে, টেকনাফের ৪০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ চাহিদা ১৭ মেগাওয়াট। আরও ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

টেকনাফের কুলাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা জাবেদ ইকবাল চৌধুরী। তার মেয়ে তানজিম আফরোজ চৌধুরী টেকনাফ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সৌরবিদ্যুতের আলোয় পড়তে বসে বাবাকে ‘আমার বর্ণ পরিচয়’ অধ্যায় থেকে পড়া মুখস্ত বলছিল তানজিম আফরোজ। ‘প-তে পাতা নড়ে, ফ-তে ফল পড়ে। ব-​তে বক উঠেছে গাছে’। সৌরবিদ্যুতের আলোয় পড়ালেখা। জাবেদ ইকবাল মেয়েকে বললেন, ব-দিয়ে আরও একটি শব্দ ও বাক্য গঠন করা যায়। যেমন: ব-তে বিদ্যুৎ। মেয়েকে ওপরের দিকে দেখিয়ে বললেন, সৌরবিদ্যুতে বাতি জ্বলে।

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বছর দুয়েক আগে পল্লি বিদ্যুৎ ছিলো। কিন্তু এ বিদ্যুৎ আসতো আর যেতো। এখন সৌরবিদ্যুৎ আসায় বিদ্যুৎ আর যায় না। এতে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাই হচ্ছে। তারা নিজের ইচ্ছায় পড়তে বসে। নির্বিঘ্নে তাদের পড়ালেখা সহ সব কাজ চলছে বিদ্যুতের আলোয়। ’

টেকনাফ উপজেলার পাশেই নাফ নদী। নদীর তীরে গড়ে ওঠা দোকানদাররা কখনও ভাবেননি- তারা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবেন। চেরাগ আর হারিকেনই ছিলো তাদের অন্ধকার তাড়ানোর মাধ্যম। ওই সময়ে সন্ধ্যা ৭টার ভেতর দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যেতে হতো। কিন্তু এখন উজ্জ্বল আলোতে তাদের ব্যবসা চাঙ্গা। রাত ১২টার আগে কেউ দোকান বন্ধ করেন না।

স্থানীয় চায়ের দোকানদার আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকটি দোকানে পল্লি বিদ্যুৎ ছিলো। বাকি সব দোকানে আলো বলতে চেরাগ আর হারিকেন। সৌরবিদ্যুতে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। লোডশেডিং  আর নেই।

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, টেকনাফ পর্যটন এলাকা হওয়ায় দেশ-বিদেশ থেকে এই উপজেলার সীমান্ত হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। এছাড়া টেকনাফ বন্দর, নাফ নদী-বঙ্গোপসাগর থেকে মূল্যবান মাছ আহরণ, খনিজ লবণ, পান সুপারী ইত্যাদি অর্থ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। সৌরবিদ্যুৎ আসায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখন মাছগুলো হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সেখানে আমাদের কোনও জীবাশ্ম জ্বালানি লাগছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য  বাড়তি খরচও হচ্ছে না। এছাড়া এটি পরিবেশ দূষণমুক্ত। একসময় লো-ভোল্টেজে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হতো। সোলারটেক এনার্জি প্রকল্প চালু হওয়ার পর এ সমস্যা এখন আর নেই। ’

তিনি বলেন, টেকনাফে গ্রাহক ৪০ হাজার। বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ মেগাওয়াট। পার্ক থেকে বিদ্যুৎ যায় জাতীয় গ্রিডে। সেখান থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পায় টেকনাফ।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তত্ত্বাবধানে ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। গত বছরের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। যুক্তরাজ্যের প্রোইনসোর নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জুলস পাওয়ার লিমিটেড (জেপিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগিতা করেছে টেকনাফ সোলারটেক এনার্জি লিমিটেড (টিএসইএল)।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
জেইউ/এসবি/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।