ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ২০০ শ্রমিক ও ৮টি পে লোডারের সাহায্যে ৩২টি ট্রাকে ৯০ ট্রিপে এক লাখ পচা চামড়া অপসারণ করা হয়।
নগরের কাঁচা চামড়ার প্রধান বাজার হামজারবাগ, আতুরার ডিপোসহ বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পচা চামড়াগুলো সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের প্রধান শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী যিশু।
তিনি বলেন, এটি একেবারে অপ্রত্যাশিত কাজ। চাকরিজীবনে এমনটি আর দেখিনি।
৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বাংলানিউজকে জানান, চার বছর সফলতার সঙ্গে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছি। এতদিন আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিলো-আড়তদারেরা চামড়ায় লবণ দেওয়ার পর সড়কে ফেলা পশুর কান, লেজ, পচা মাংস এসব বর্জ্য দ্রুত অপসারণ। এবার নতুন সমস্যা পচা চামড়া অপসারণ। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশনায় এ সমস্যাও দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়ত হামজারবাগ-আতুরার ডিপো। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এখানে ট্রাকে ট্রাকে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসেন মৌসুমি বেপারি আর বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজন। কিন্তু এবার চামড়ার দামে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে।
প্রথমে ৩০০ টাকায় বড় চামড়া কিনছিলেন। এরপর ২০০-১০০ টাকায় নেমে আসে। তারপর ক্রেতার দেখা মেলেনি বাজারে। চামড়া নিয়ে যেসব ট্রাক এসেছিল অনেকে ভাড়াটাও তুলতে পারেনি চামড়া বেচে। পরে একপর্যায়ে চামড়ার স্তূপ, ট্রাকভর্তি চামড়া ফেলেই পালিয়ে যান তারা।
‘খোঁজ নিয়ে জানলাম, চট্টগ্রামের আড়তদারেরা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে গত বছরের যে টাকা পাবে তার সিকি ভাগও দেয়নি। এর ফলে তারা পর্যাপ্ত লবণ, শ্রমিক জোগাড় করতে পারেনি। দাম কম থাকায় ধার-দেনা করে কিছু চামড়া সংগ্রহ করে তারা বাজার থেকে সরে পড়ে। যদি পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকতো তবে বাকিতে হলেও চামড়া নিতে পারতো। ’ যোগ করেন কাউন্সিলর মোবারক আলী।
পচা চামড়া সরানো দুঃখজনক ঘটনা: মেয়র নাছির
চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ কোরবানির পরদিন থেকে বুধবার (১৪ আগস্ট) পর্যন্ত আতুরার ডিপো-হামজারবাগ এলাকা থেকে এক লাখ, বহদ্দারহাট থেকে ৯ হাজার ও আগ্রাবাদ থেকে ১২ হাজারের বেশি পচা চামড়া নগরের দুইটি আবর্জনার ভাগাড়ে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এ ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, চামড়ার সরকার নির্ধারিত দামও না পাওয়ার পেছনে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠিত চক্রের দূরভিসন্ধি আছে কি না খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ঘটনায় কোরবানিদাতারা হতাশ, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব, দেশ বঞ্চিত হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে।
তিনি বলেন, চামড়া পচবে, সেই চামড়া চসিককে অপসারণ করতে হবে এ ধরনের কোনো ভাবনাই আমাদের কোনো কালে ছিলো না। আমরা কোরবানির দিন পশুর নাড়ি-ভুঁড়ি, বর্জ্য, রক্ত, উচ্ছিষ্টাংশ দ্রুত অপসারণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সেই লক্ষ্য আমরা অর্জনও করেছি। কিন্তু পচা চামড়া অপসারণের কাজটি ছিল নতুন একটি চ্যালেঞ্জের। গভীর রাত পর্যন্ত এ কাজটিও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আমরা সম্পন্ন করেছি।
আরও খবর>> ৭৫ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ, চলছে সংরক্ষণের কাজ
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি