ঢাকা, বুধবার, ৯ আশ্বিন ১৪৩২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:৪৪, জুলাই ১৭, ২০১৯
পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা এবার রেকর্ড সংখ্যক জিপিএ-৫ পেয়েছে। বোর্ডের গত পাঁচ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় ৯৯ হাজার ৭৯৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষায় অংশ নেয় ৯৮ হাজার ৯২৬ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৮৬০ জন পরীক্ষার্থী।

জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ২ হাজার ২৫৮ জন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে, ৪৭৩ জন ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এবং ১২৯ জন মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

২০১৮ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৯৬ হাজার ৮৫৮ জন পরীক্ষার্থী।

এর মধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করে ১ হাজার ৬১৩ জন পরীক্ষার্থী।

২০১৭ সালে জিপিএ-৫ পাওয়ার এ সংখ্যা ছিলো আরও কম। ওই বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮২ হাজার ৪১৪ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পায় ১ হাজার ৩৯১ জন পরীক্ষার্থী।

২০১৬ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ২৫৩ জন পরীক্ষার্থী। যদিও পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮৬ হাজার ৭১৬ জন পরীক্ষার্থী। এ ছাড়াও ২০১৫ সালে ৮০ হাজার ৭০৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ১২৯ জন।

পাসের হারে গ্রামীণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধাক্কা​

উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার কিছুটা কমেছে। গত বছর পাসের হার ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ থাকলেও এবার তা দশমিক ৫৪ শতাংশ কমে ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ এসে দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলা এবং তিন পার্বত্য অঞ্চলের গ্রামীণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাসের হার গতবারের চেয়ে কম হওয়ায় এবার পাসের হারে ধাক্কা এসেছে। পরিসংখ্যানও বলছে তাই।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ২৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৮ হাজার ৯২৬ জন পরীক্ষার্থী ১৯৩টি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে গড় পাসের হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ হলেও চট্টগ্রাম নগরে পাশের হার ৭৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। যা গড় পাসের হারের চেয়ে ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে নগরে বাদে চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার ৬৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ, কক্সবাজার জেলার পাসের হার ৫৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, রাঙামাটি জেলার পাসের হার ৪৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, খাগড়াছড়ি জেলার পাসের হার ৪৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং বান্দরবান জেলার পাসের হার ৫৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার গড় পাসের হারের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও তিন পার্বত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার জেলার পাসের হার গড় পাসের হারের চেয়ে ১৬ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত কম। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গড় পাসের হারে।

মান বাঁচিয়েছে বিজ্ঞান বিভাগ

উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা বরাবরাই ভালো ফলাফল অর্জন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও পাসের হারে এগিয়ে আছে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা।

গত বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ থাকলেও এবার তা ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৮২ দশমিক ৫২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।

তবে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা গত বারের চেয়ে তুলনামূলক ভালো ফল করলেও খারাপ ফল করেছে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা। গত বছর মানবিকে পাসের হার ৫৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ হলেও এবার তা ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমে ৫২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা গত বছর ৭৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ পাস করলেও এবার এ বিভাগ থেকে পাস করেছে ৭১ দশমিক ৮৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার এ বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

অক্সফোর্ডে পাস করেনি কেউ!

নগরের হালিশহরে অবস্থিত বেসরকারি কলেজ অক্সফোর্ড মডার্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় একজন পরীক্ষার্থী। তবে ওই পরীক্ষার্থী পাস করতে না পারায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে একমাত্র কলেজ হিসেবে শূন্য পাসের কলেজের খাতায় নাম লেখায় প্রতিষ্ঠানটি।

শতভাগ পাস তিন কলেজে

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার মোট ২৬০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোয়ান্টাম কসমো কলেজ এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে এতে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। কারণ পাসের হার কমেছে।

তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলসহ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহরের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা কম। দক্ষ শিক্ষকের অভাবও রয়েছে সেখানে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে পাসের হার কিছুটা কমেছে।

‘সামগ্রিক ফলাফল নিয়ে আমরা বসবো। কোথাও ত্রুটি থাকলে তা খুঁজে বের করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। আমরা চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডকে সব দিক দিয়ে দেশ সেরা শিক্ষাবোর্ডে পরিণত করতে চাই। ’ যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।