তারা জানিয়েছেন, সাগরের পাশে কাজ করার সময় বিবেচনায় রাখতে হয় মাটি সরে যাবে। সেটি বিবেচনায় না রেখে এ ধরনের কাজ করা মানে অর্থ অপচয়।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সী সাইডে কাজ সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। দূরদর্শী চিন্তাভাবনা করে এ ধরনের কাজ করতে হয়।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, মাটির কমপ্রেশন সঠিকভাবে না হলে যেকোনো স্থাপনা মুহুর্তে ধসে পড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘সিডিএর বক্তব্য রিটেইনিং ওয়ালের নিচে ছিদ্র হয়ে মাটি সরে ওয়াকওয়ে ধসে গেছে। অথচ মাটি সরে যাবে সেটি সাধারণ বিষয়। উচিৎ ছিল আগে প্রোটেকশন দিয়ে কাজ করা অথবা কাজ শেষে দ্রুত প্রোটেকশন দেওয়া। ’
প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, কিন্তু তারা সেটি করেনি। উল্টো ধসে পড়ার পর বলছে রিটেইনিং ওয়ালের নিচে ছিদ্র হয়ে গেছে। এগুলো অজ্ঞতা বা অদূরদর্শীতার ফসল। এতে সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই হয়নি।
অন্যদিকে সিডিএ বলছে, রিটেইনিং ওয়ালের নিচে ছিদ্র হয়ে অতি বর্ষণে পানির সঙ্গে বালি সরে ওয়াকওয়েটি ধসে পড়েছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস বাংলানিউজকে বলেন, ওয়াকওয়ে পরবর্তী রিটেইনিং ওয়ালের পাশে জিও টেক্স বিছিয়ে সিসি ব্লক স্থাপন করতে হবে। ওয়াকওয়ের উপরের অংশে সড়কে পাশ ঘেঁষে শ্লপ রয়েছে। সেখানেও সিসি ব্লক দেওয়া হবে। কিন্তু কাজটি চলমান। কিছুদিন আগে ওয়াকওয়েটি ঢালাই হয়েছে। এখনো অন্য কাজ শেষ হয়নি।
ছিদ্র হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, যেহেতু ব্লক স্থাপন করা হয়নি, সেজন্য সড়কের পানি শ্লপ দিয়ে ওয়াকওয়ে হয়ে সাগরে পড়ছে। এ ছাড়া শ্লপে পানি জমে ওয়াকওয়ের নিচের দিকে দিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো রিটেইনিং ওয়ালের পাশে জিও টেক্স ও সিসি ব্লক স্থাপন করা হয়নি। এজন্য রিটেইনিং ওয়ালের নিচে ছিদ্র হয়ে ওয়াকওয়ের তলার মাটি সরে গেছে।
‘এটি ১৮ ইঞ্চি সিসি ঢালাই। মাটি সরার পর সেল্প ওয়েট ধরে রাখতে না পেরে ওয়াকওয়েটি ধসে গেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হলে এমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, প্রকল্পের কাজ মূল্যায়ন শেষে সমাপ্ত করা হচ্ছে। ’
>>>>>উদ্বোধনের আগেই চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধে ধস
এর আগে শনিবার (১৩ জুলাই) চট্টগ্রাম শহর রক্ষায় নির্মিতব্য উপকূলীয় বাঁধ কাম পতেঙ্গায় আউটার রিং রোডের ওয়াকওয়ের কয়েকটি অংশ ধসে পড়ে।
উল্লেখ্য, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ২০০৫ সাল থেকে পতেঙ্গা হতে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। যাচাই শেষে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে জাইকা।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে চার লেনের এ সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ নামে এ প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার মূল ও ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে।
শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দুই বার সংশোধনের পর বর্তমানে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৭২০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার ও জাইকার সহায়তা ৭০৬ কোটি টাকা।
ইতোমধ্যে প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
এসইউ/টিসি