ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হারানো স্মৃতি ফিরলো আজকের চট্টগ্রামে

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
হারানো স্মৃতি ফিরলো আজকের চট্টগ্রামে প্রবাসী সাংবাদিক তাপস বড়ুয়ার আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: চৌত্রিশ বছর আগে কেমন ছিল চট্টগ্রাম? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই অজানা। ক্যামেরায় ধারণ করা সেসময়কার হারানো স্মৃতি ফিরিয়ে এনে প্রদর্শন করেছেন আমেরিকা প্রবাসী আলোকচিত্র সাংবাদিক তাপস বড়ুয়া।

মঙ্গলবার (১৪ মে) ‘ফিরে দেখা তাপসের সেই ছবি’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে এসে তাই অনেকটা অবাকই হয়েছেন দর্শনার্থীরা, স্মৃতি হাতড়ে বেড়িয়েছেন প্রবীণরা।

চেরাগী পাহাড় এলাকার আজাদী চত্বরে সকাল ১১টায় প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন লায়ন্স জেলার নবনির্বাচিত গভর্নর কামরুন মালেক।

এসময় উপস্থিত ছিলেন কবি অরুন দাশগুপ্ত, বুলবুল আহমেদ, শিল্পী মইনুল আলম, ফটোব্যাংক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শোয়েব ফারুকী সহ বিশিষ্টজনরা।

১৯৯৪ সালের ১৭ মে চট্টগ্রাম টেক্সটাইল মিলের ১০জন শ্রমিক আত্মাহুতি দিতে পাহাড়তলীতে নিজেদের কবর খুঁড়ছিলেন নিজেরাই।

এই ছবি ছাপিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ ফেলে দেন তাপস বড়ুয়া। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফি সোসাইটি আয়োজিত আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় তার তোলা ছবি ‘স্নেহ বৈরিতা মানে না’ জিতে নেয় ১ম পুরস্কার। এ ছবিতে দেখা মেলে কুকুরের সঙ্গে বিড়ালের জড়াজড়ি।

প্রবাসী সাংবাদিক তাপস বড়ুয়ার আলোকচিত্র প্রদর্শনী।  ছবি: সোহেল সরওয়ারএছাড়া ১৯৯৮ সালের ভয়াল ২৯ এপ্রিল কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মগনামায় প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে নিহত মানুষ আর গবাদি পশুর মরদেহ একসঙ্গে ভেসে থাকার দৃশ্য, কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুকে আঁকড়ে ধরে রাখা নিথর মায়ের অসহায়ত্ব, সাগর পাড়ে পচা ইলিশের স্তূপ, ফাঁকা সড়কে শুইয়ে দেয়া টোকাইয়ের চারপাশে দাগ কেটে প্রতিকৃতি আঁকার চেষ্টারত আরেক টোকাইয়ের ছবি, জব্বারের বলীখেলায় হাটু গেড়ে বসে অপেক্ষায় থাকা বলীদের ছবি, কর্ণফুলী সেতুতে ভাঙ্গন, নৌকার দাঁড় বেয়ে চলা শিশু নির্মল, জন্মের আগেই বাবাকে হারানো কল্পিতা বিশ্বাসের জীবন কাহিনী, আবদুল আলীর শহর দর্শন, চট্টগ্রামে আসা আকাশচারী জার্মান পর্যটক, খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে শান্তিচুক্তি উপলক্ষে অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠান, পটিয়া-আনোয়ারা সংযোগ সড়কে গোয়ালাদের দুধে পানি মেশানোর উৎসবের মতো নানান দৃশ্য তুলে এনেছিলেন তাপস বড়ুয়া। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৫৫টি ছবি।

প্রবাসী সাংবাদিক তাপস বড়ুয়ার আলোকচিত্র প্রদর্শনী।  ছবি: সোহেল সরওয়ারচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া প্রদর্শনী দেখে জানান তাঁর প্রতিক্রিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আজকের চট্টগ্রাম অনেক পাল্টে গেছে। আমাদের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা আবারও মনে করিয়ে দিলেন তাপস।

আবৃত্তিশিল্পী কাবেরী আইচ বাংলানিউজকে বলেন, আজাদীতে প্রকাশিত তাপস বড়ুয়ার একেকটি ছবি কথা বলতো। অনেকদিন পর সেই ছবিগুলো দেখলাম। খুবই ভালো লাগছে।

আলোকচিত্র প্রদর্শনী প্রসঙ্গে তাপস বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৮৬ সালে দৈনিক আজাদীতে যোগদান করেছিলাম। জীবনের স্বর্ণালী সময়গুলোতে খবরের সন্ধানে ছুটে বেড়িয়েছি মাঠ-ঘাট, প্রান্তর। বার্তা সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত সাধন ধর। তাঁরই পরামর্শে ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিগুলো পত্রিকার পাতায় জীবন্ত হয়ে ধরা দিতো, যখন ছবির পেছনে লুকিয়ে থাকা গল্পও উঠে আসতো আমার লেখনীতে।

প্রবাসী সাংবাদিক তাপস বড়ুয়ার আলোকচিত্র প্রদর্শনী।  ছবি: সোহেল সরওয়ারতিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে তখনকার চট্টগ্রাম সম্পর্কে জানাতেই মূলত এই আয়োজন। এজন্য আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক স্যারের অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বিদেশে থাকলেও আমার মন পড়ে থাকে চট্টগ্রামে। প্রদর্শনীটি সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।