ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যে সড়কে হাঁটতে গিয়ে ছমছম করে গা

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৭
যে সড়কে হাঁটতে গিয়ে ছমছম করে গা যে সড়কে হাঁটতে গিয়ে ছমছম করে গা / ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: নগরীর বাদশা মিঞা চৌধুরী সড়ক।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বৃটিশ সৈন্যদের সমাহতি করা হয়েছে যেখানে সেই ওয়্যার সিমেট্রির অবস্থান এই সড়কে।  আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটেরও অবস্থান এখানে।  দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশাপাশি এই সড়কের আশপাশে গড়ে উঠেছে অনেক বহুতল ভবনও। 

দিনের আলোয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে বাদশা মিঞা চৌধুরী সড়কের একাংশ।   ওয়্যার সিমেট্রিতে দিনভর থাকে দর্শনার্থীর আনাগোনা।

 নগরীর গোলপাহাড় মোড় থেকে চট্টেশ্বরী রোডের সংযোগ স্থাপনকারী এই সড়কে যানবাহনেরও ভিড় লেগে থাকে।  

এটা দিনের চিত্র।

  তবে একেবারে বিপরীত চিত্র সন্ধ্যার পর।   সাধারণ মানুষ তো বটেই খোদ পুলিশের বক্তব্য, সন্ধ্যার পর এই সড়ক দিয়ে যেতে গা ছমছম করে।   দুই পাশে পাহাড় আর গাছগাছালি ঘেরা এই সড়ক সন্ধ্যার পর অন্ধকার নির্জন ভুতুড়ে এলাকা হয়ে উঠে।  

মাঝে মাঝে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলা দুয়েকটি ‍গাড়ির আলোয় যতটুকু আলোকিত হয় ঠিক ততটুকুই।   এরপর আবারও নিকষ কালো অন্ধকার।

নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে পঞ্চাশটির মতো বৈদ্যুতিক খুঁটি আর তাতে লাগানো সড়ক বাতির স্ট্যান্ড আছে।   কিন্তু সেই সড়ক বাতির মধ্যে হাতেগোণা দুয়েকটি ছাড়া কোনটিই জ্বলে না।

যে সড়কে হাঁটতে গিয়ে ছমছম করে গা / ছবি: সোহেল সরওয়ার

রাত ১২টার দিকে ওয়্যার সিমেট্রি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এই স্থাপনটির মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ দিকে তাকালে কিছুই চোখে পড়ে না।   শুধুই অন্ধকার আর অন্ধকার।   আর মূল ফটক থেকে উত্তর দিকে গোলপাহাড় মোড়ের দিকে তাকালেও কয়েকটি সড়ক বাতির ক্ষীণ আলোর দেখা মেলে।   কিন্তু সেদিকেও অধিকাংশই জ্বলে না।

স্থানীয় চকবাজার থানার ওসি একেএম নূরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, সার্সন রোড থেকে বাদশা মিঞা সড়ক বিশেষ করে ওয়্যার সিমেট্রির সামনের জায়গাটাতে সমস্যা খুব বেশি।   সেখানে কোনদিন স্ট্রিট লাইটগুলো সচল থাকে না।   এত অন্ধকার থাকে, মানুষের চলাচলের কোন উপায় নেই।

চারুকলা ইনস্টিটিউটের মোড়ে দাঁড়ানো একটি প্রাইভেট কার।   চালকের আসনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য এমবিএ পাশ করা যুবক তাওহীদুর রহমান।   চট্টেশ্বরী রোডের বাসিন্দা তাওহীদ বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যার পর কিছুক্ষণ গোলপাহাড় মোড় দিয়ে বাদশা মিঞা রোডে সাধারণ পথচারীর চলাচল থাকে।   এরপর গাড়ি ছাড়া আর কেউ থাকে না।   ওয়্যার সিমেট্রি পার হলেই সবাই ভয়ে থাকে।   যদি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে।   আর এলাকাটা এত নির্জন যে এমনিতে হাঁটতে গেলেই গায়ে কাঁটা দেয়।

ওয়্যার সিমেট্রির বিপরীত দিকের একটি বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, সড়ক বাতিগুলো মেরামত করার জন্য আবাসিক এলাকার কমিটির পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। বাগমনিরাম ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকেও কয়েকবার বলা হয়েছে।   কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাগমনিরাম ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিনকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।

যে সড়কে হাঁটতে গিয়ে ছমছম করে গা / ছবি: সোহেল সরওয়ার

এদিকে বাদশা মিয়া সড়কের দক্ষিণে সার্সন রোডে আছে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বাসভবন।   জেলা পরিষদ ও  বিপিসির কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও আছে এই সার্সন রোডে।   সেই সড়কের বাতি মোটামুটি জ্বলতে দেখা গেছে।   শুধুমাত্র সার্সন রোডের প্রবেশমুখে দুইদিকে চারটি বাতি নষ্ট দেখা গেছে।  

তবে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতে, সার্সন রোডে মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে আরও বাতি প্রয়োজন।

‘সার্সন রোডে মন্ত্রী মহোদয়ের বাসা।   অথচ সেখানে গেলে মনে হয় অজ পাড়া গাঁয়ের মধ্যে ঢুকেছি।   এত অন্ধকার বোধহয় এখন গ্রামেও থাকে না।   পত্রিকায় পড়েছি গ্রামের লোকজন সমবায় করে পুরো গ্রাম আলোকায়ন করছে।   আর শহরের এত গুরুত্বপূর্ণ একটা এলাকা অন্ধকারে। ’ বলেন ওসি

ওসি জানালেন, মাঝখানে বাদশা মিঞা সড়ক ও সার্সন রোডে ছিনতাই বেড়ে গিয়েছিল।   নিয়মিত চেকপোস্ট করা হচ্ছে এই দুটি সড়কে।   এজন্য এখন ছিনতাই কিছুটা কম।

বাংলাদেশ সময়: ০১০২ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৭
আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।