শনিবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের পাশাপাশি হট্টগোলের ঘটনাও ঘটে। সভায় উত্তর চট্টগ্রামের সাত উপজেলার ২৫ জন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।
রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন খান বক্তব্য দিতে উঠলে সাংসদের অনুসারীরা হট্টগোল করেন।
মোসলেম বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এবং নৌকা ছাড়া কিছু বুঝি না। রাউজানে আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় নেতারা বসে এটা ঠিক করেন। রাউজানে ফজলে করিম নমিনেশন পেলে আমি কাজ করব। অন্য কেউ পেলেও আমি কাজ করব।
সাংসদের বিরোধী হিসেবে পরিচিত রাউজানের পৌর মেয়র দেবাশীষ পালিত বলেন, আমি কারও নাম উচ্চারণ করতে চাই না। তবে সংগঠনকে সংগঠনের নিয়মে চলতে দিতে হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
সাংসদের অনুসারী রাউজান উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, কিছু কিছু কুচক্রী বাইরে বসে চক্রান্ত করে। এতে আমাদের হতাশ হতে হয়।
সাংসদের অনুসারী রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতীতে ঈদের দিন ঘরে ঈদ করতে পারি নাই। ফজলে করিম এমপি হওয়ার পর রাউজান একটিমাত্র উপজেলা যেখানে হরতাল হয় না।
সীতাকুণ্ডের সাংসদ দিদারুল আলমের অনুসারী বারইয়ারঢালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন বলেন, অনেকে মনে করেন, আমি বড় নেতা, আমি যুবলীগের অমুক পদে আছি, আমি থানা আওয়ামী লীগকে মানি না। তারাই দলের জন্য সমস্যা। কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছেন, আপনারা প্রটৌকল ঠিক করে দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আগে নাকি এমপি আগে নাকি উপজেলা চেয়ারম্যান-যুবলীগ নেতা আগে।
এরপর রেহান উদ্দিন সাংসদের উন্নয়নের কথা শুরু করলে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারীরা ‘ভূয়া ভূয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন সাংসদের বিরোধী হিসেবে পরিচিত এবং তিনি উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া বক্তব্য দিতে উঠলে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারীরা হইচই শুরু করেন। এসময় বাকের ভূঁইয়া তাদের শাসান, ‘আপনাদের পেছনে আমার লোক আছে। ’ এরপর তারা ‘সম্মেলন, সম্মেলন’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
চিৎকারের মধ্যে বাকের ভূঁইয়া বলেন, সম্মেলন কেন্দ্র এবং জেলা নির্দেশে অবশ্যই হবে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের যে কমিটি আছে, সেটা মানতে হবে। রাজনীতি করতে হবে সাংগঠনিক নিয়ম মেনে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সুযোগ দিলে দলে অনৈক্য হবে।
সীতাকুণ্ডের সাংসদ দিদারুল আলম বলেন, সীতাকুণ্ডে সবাই ‘আমার লীগ’ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আমি সীতাকুণ্ডে বঙ্গবন্ধুর লীগ প্রতিষ্ঠা করেছি। যারা আমার লীগ করে, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি করে, সেই চাঁদাবাজদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ করতে পারি না।
এসময় ব্যাপক হইচইয়ের মধ্যে সাংসদ বক্তব্য শেষ করেন।
সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী খসরু বলেন, সন্দ্বীপে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতির যোগ আছে। দুর্নীতি হলে সেই উন্নয়ন টেকসই হয় না। সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগে কোন দ্বিধাবিভক্তি নাই। সমন্বয়ের অভাব আছে।
সাংসদের অনুসারী মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের অবস্থা এত খারাপ যে গত ২৬ মার্চ মাত্র চারজন দিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে হয়েছে।
দুইভাগে বিভক্ত সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নিয়ন্ত্রণে আছেন সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া। আরেক অংশে আছেন সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা।
প্রবীণ নেতা শাহজাহান মিয়া বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ চিরস্থায়ী। আমিত্ব পরিহার করতে হবে। দলকে শক্তিশালী করতে হবে। সন্দ্বীপে সমন্বয়ের বড় অভাব।
তবে সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা দলের মধ্যে বিভক্তি নিয়ে কোন কথা না বলে শুধুমাত্র উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনা দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
তবে মিরসরাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্যে বিভক্তির কোন তথ্য ছিল না। হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির তৃণমূল নেতারা আগামীতে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেয়ার দাবি জানান। হাটহাজারীর বর্তমান সাংসদ মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ফটিকছড়ির সাংসদ আরেক শরিক দল তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
আরডিজি/টিসি
‘কওমি সনদের স্বীকৃতি দেয়ায় বিএনপির গায়ে জ্বালা ধরেছে’
‘যে নেতারা বিদ্রোহীদের মাঠে নামান তারা বিশ্বাসঘাতক’