একুশের রাতে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতকের নাম রেখেছেন উদ্ধারকারী পুলিশ কর্মকর্তা আকবর শাহ থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ। নবজাতকের নাম ‘একুশ’।
জানতে চাইলে ওসি আলমগীর মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, একুশের প্রথম প্রহরে আমরা যখন সবাই একুশ উদযাপনে ব্যস্ত ছিলাম, তখনই নবজাতকটির কান্নার শব্দ শুনতে পান পথচারীরা।
গত সোমবার রাত ১২টার দিকে নগরীর কর্ণেলহাট এলাকার লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংলগ্ন ড্রেনে নবজাতকটিকে পড়ে থাকতে দেখেন কয়েকজন যুবক। তাদের মধ্যে নগর ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন টিটু ও এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী মোমিন শাহসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন। তারা আকবর শাহ থানার সেকেন্ড অফিসারকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মী মোমিন শাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা লাইফ কেয়ার হসপিটালের পাশে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মনোয়ারুল আলম রুবেল ভাইয়ের অফিসে বসে আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম। ডাস্টবিনে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেয়ে আমরা নিচে নেমে আসি। রুবেল ভাইও আমাদের সঙ্গে আসেন। তখন আমরা সেকেন্ড অফিসারকে বিষয়টি জানায়। দ্রুত পুলিশ আসে এবং আমরা শিশুটিকে আল আমিন হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে আকবর শাহ থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষনিকভাবে টহলরত পুলিশকে নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন। পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ওই নবজাতককে প্রথমে নগরীর এ কে খান এলাকার আল আমিন হাসপাতাল এবং এরপর নগরীর আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওই নবজাতককে। সেখানে ইনকিউবেটর খালি না থাকায় শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নাম্বার ওয়ার্ডে। শিশুটিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (ইনকিউবেটর) রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পুলিশ। সঙ্গে থেকে পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারক করেন ওসি আলমগীর মাহমুদ।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নবজাতককে উদ্ধার করা নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন আকবর শাহ থানার ওসি।
চট্টগ্রামের প্রথম মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ পারভেজ নবজাতকের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চমেক হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন। আর নবজাতককে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আকবর শাহ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
ওসি আলমগীর মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, নবজাতকের নিরাপত্তা এবং সার্বিক পরিচর্যার বিষয় সমন্বয়ের জন্য আকবর শাহ থানার এস আই নূরুল আলমের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম সার্বক্ষণিকভাবে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
এস আই নূরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার কমপক্ষে ২০ জন মা শিশুটিকে বুকের দুধ দেয়ার ইচ্ছার কথা পুলিশকে জানান। তাদের নবজাতক সন্তানও একই কেন্দ্রে আছেন। এর মধ্যে চিকিৎসকদের নির্ধারিত সুচিতা বড়ুয়া ও শিউলি দত্ত নামে দুজন মা নিয়মিত নবজাতকটিকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন।
শিউলি দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, একজন মা হিসেবে এটা তো আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয়। আমার সামান্য অবদানে যদি একটি শিশু জীবন পায়, পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখে এর চেয়ে বড় কিছু আমার জন্য আর হতে পারে না।
ওসি আলমগীর মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধারের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দুজন অভিভাবক তাকে লালনপালনের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া এবং লন্ডন থেকেও দুজন অভিভাবক তার সঙ্গে বাচ্চাটিকে নেয়ার জন্য যোগাযোগ করেছেন।
তবে শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যে কোন একজন অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান ওসি।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতকের চিকিৎসাসহ যাবতীয় সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
আরডিজি/টিসি