ঢাকা, শনিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ মে ২০২৪, ১৬ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চুপকথা আর লেখা হল না, আক্ষেপ সিদ্দিক আহমেদের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
চুপকথা আর লেখা হল না, আক্ষেপ সিদ্দিক আহমেদের বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নীরবতা নিয়ে একটি বই লেখার কথা ছিল সিদ্দিক আহমেদের।   নামও ঠিক করেছেন ‘চুপকথা’।

  কিন্তু ক্যান্সারের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করে চলা এই লেখক বলেছেন, এই জীবনে চুপকথা আর লেখা হবে না।   কারণ তিনি এখন জন্ম আর মৃত্যুর মাঝখানে নয়, মৃত্যুর খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছেন বলেই মনে করেন।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর সিনিয়রস ক্লাবে নিজের লেখা ‘প্রভৃতি’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এই আক্ষেপের কথা বলেছেন সিদ্দিক আহমেদ।

তিনি বলেন, ইচ্ছা ছিল সাইলেন্স নিয়ে একটা বই লেখার।   নামও ঠিক করেছিলাম ‘চুপকথা’।   কিন্তু সেটা আর লেখা হল না।   এই জীবনে সাইলেন্স নিয়ে বইটা আর বোধহয় লেখা হল না।  

‘কারণ আমি এখন নিজেই মাঝে মাঝে সাইলেন্ট হই, সবকিছু থেকে দূরে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি।   চোখ বন্ধ করে দেখি আমি উদভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছি।   কারণ আমি বোধহয় জন্ম আর মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে নেই। ’

সিদ্দিক আহমেদ বলেন, একসময় আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মেরেছি।   অফিস থেকে বের হয়েছি, পেটে ক্ষুধা কিন্তু একজন ইয়ং বন্ধু যদি দেখে বলত দাঁড়ান, আমি দাঁড়িয়ে গেছি।   আড্ডা দিয়েছি, কতদিন আহা কতদিন।   হায়রে আড্ডা।   অথচ এখন দুই মিনিটও দাঁড়াতে পারি না।   হাঁটুর ব্যাথা তো আছে।   হাঁটুতে আর আগের মতো শক্তি নেই।   মনের জোরে কতটুকু আর নদী বাওয়া যায়।   মনের জোরে কতটুকু আর জীবনকে এগিয়ে নেয়া ‍যায়।

‘আমি জানতাম না এভাবে আমি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ব।   আমি বসতে পারি না, পিঠে ব্যাথা হয়ে যায়।   চোখে দেখিনা, এক চোখ অন্ধ।   সব মিলিয়ে জীবনের যন্ত্রণা...।  না, এটাও এক ধরনের আনন্দ। ’

‘মানুষ থেমে যায়, মানুষের পথচলা হয়ত থামে কিন্তু সৃষ্টিশীলতা কখনও থামে না।   জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি আলোর ঠিকানা পেতে চাই।   জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি জীবনের স্বাদ পেতে চাই। ’ বলেন সিদ্দিক আহমেদ।

তিনি বলেন, জন্ম আর মৃত্যুর মাঝখানে মানুষের জীবন।   আমি চেষ্টা করেছি এই দুইয়ের মাঝখানে সফল একটা জীবন কাটানোর।   আমি আমার ছেলেমেয়েদের বলেছি, তোমরা আমাকে কখনও ফাঁকি দিতে পার, হয়তো বলেছ কলেজে যাবে, কিন্তু যাচ্ছ নিউমার্কেটে।  আমাকে ফাঁকি দাও, কিন্তু নিজেকে কখনও ফাঁকি দেবে না।   আমিও কখনো নিজেকে ফাঁকি দিইনি।  

‘আমি সবসময় নিজেকে নির্মাণের চেষ্টা করেছি।   আমি গর্ব করে বলতাম, চট্টগ্রামের লোকজন কেন আমাকে নতুন কথা শোনাবে।   আমি শোনাব সবাইকে।   এটা আমার অহংকার নয়, এটা আমার চেষ্টা ছিল। ’

নীরবতা নিয়ে বই লেখার অভিপ্রায় শোনাতে গিয়ে সিদ্দিক আহমেদ শুনিয়েছেন কথার শক্তির কথা।  

তিনি বলেন, জীবনে কত কথা বলেছি।   যখন মাতৃক্রোড়ে বসে মা, মা বলে কথা শুরু করেছি, এরপর থেকে জীবনের এই সময় পর্যন্ত কখনও ভালবাসার কথা, কখনও রাগের কথা, কখনও সংস্কৃতির কথা, কখনও মানুষকে ভালবাসার কথা বলে গেছি।   মানুষের জীবনের সব কথা যদি যদি জমিয়ে রাখা যেত তাহলে দেখা যেত প্রত্যেকের জীবন একেকটা বই হয়ে যেত।  

‘জীবনে আমাদের কত কথা, মায়ের সঙ্গে, বাবার সঙ্গে, স্ত্রীর সঙ্গে, সন্তানের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে।   আবার অনেক সময় আমরা কথা বলি না, কিন্তু কথা বলি।   যেমন মূকাভিনয়।   চুপ থেকেও কিন্তু অনেক কথা বলা যায়।   বোবা মানুষ কি কোন কথা বলতে পারে ? অঙ্গভঙ্গি করে।   এটাও একটা ল্যাঙ্গুয়েজ। ’

‘আমার বইতে অনেক কথা আছে।   কখনও নিজের সঙ্গে, কখনও সমাজের সঙ্গে, কখনও রাষ্ট্রের সঙ্গে, কখনও অন্যের সঙ্গে।   কখনও অন্যকে শোনানোর জন্য কথা, কখনও নিজেকে শোনানোর জন্য কথা।   কথার শক্তি অনেক।  আমরা প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে কথা বলি, অভিনয় করি, সত্য-মিথ্যা সব।   বইয়ের মধ্যে কথা, নাটকের মধ্যে কথা।   এই কথার মধ্যেই কিন্তু জীবন। ’ বলেন সিদ্দিক আহমেদ।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রভৃতি গ্রন্থ প্রকাশে সহযোগিতার জন্য জেষ্ঠ্য সাংবাদিক ও বৈশাখী টেলিভিশনের হেড অব নিউজ অশোক চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সিদ্দিক আহমেদ।  

কবি অরুণ দাশগুপ্তের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.অনুপম সেন।

এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস, লেখিকা ফেরদৌস আরা আলীম, অধ্যক্ষ ড.আনোয়ারা আলম, অধ্যাপক মুজিবুর রাহমান, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে সিদ্দিক আহমেদের পছন্দের গান গেয়ে শোনান শিল্পী শাহরিয়ার খালেদ।

এছাড়া প্রকাশনা পরিষদের পক্ষে সাংবাদিক কামাল পারভেজ, মহসিন কাজী এবং হোসাইন তৌফিক ইফতেখার অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।

আবির প্রকাশন থেকে বইটি প্রকাশ করেছেন লেখক মুহাম্মদ নূরুল আবসার।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬ 

আরডিজি/টিসি

‘জীবনের গান গাওয়া বোধহয় শেষ...’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।