চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আদালত পাড়ায় প্রায় ৫৮ লাখ টাকাসহ এক ব্যক্তি আটকের পর এবার চলছে বদলি ঠেকানোর দৌড়ঝাঁপ।
জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ঘুষ দিতে টাকাগুলো নেয়া হচ্ছিল এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ৬ জনসহ ১২ সার্ভেয়ার-কানুনগোকে বদলি আদেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার।
বদলি হওয়া সার্ভেয়ার কানুনগোদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভূমি অধিগ্রহণের কাজে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা নিয়ে লাখ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এলএ শাখায় যাদের পরিচিতি ‘দুর্নীতির বরপুত্র’ হিসেবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বদলি আদেশের কারণে ঘুষ বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়ায় এ আদেশ ঠেকাতে তারা তৎপর হয়ে উঠেছেন। শিগগিরই এ ব্যাপারে তারা আদালতের দ্বারস্ত হতে পারেন।
রোববার সদ্য বদলি হওয়া এক সার্ভেয়ারও বাংলানিউজকে বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমাদেরকে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সুবিচার চেয়ে আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে, এলএ শাখার দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার-কানুনগো ও দালাল চক্রের সিন্ডিকেট ভাঙতে জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
এরই অংশ হিসেবে রোববার সকাল থেকে এলএ শাখা কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য চালু হয়েছে হয়েছে ছয়টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।
এর আগে, গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার অদূরে প্রায় ৫৮ লাখ টাকাসহ এক ব্যক্তি গ্রেপ্তারের পর টাকাগুলো এলএ শাখায় ঘুষের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিযোগ উঠলে জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিকভাবে সিসি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ দেন।
জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা (ইউনিট-২) মো. তোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এলএ শাখায় দালালদের উৎপাত ঠেকাতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সিসি ক্যামেরাগুলো চালু হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজেই এ শাখার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করছেন।
জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, সার্ভেয়ার-কানুনগোকে বদলি করা হয়েছে ঠিক, কিন্তু তাদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটটি ভাঙতে না পারলে দুর্নীতি রোধ করা যাবে না। জেলা প্রশাসক মহোদয়ও এ সিন্ডিকেটটি ভাঙতে চান। এ লক্ষেই মূলত নতুন করে ছয়টি সিসি ক্যামেরা বসানো। বহিরাগতদের সন্দেহজনক ঘোরাফেরা দেখলেই আটকের নির্দেশ দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সম্প্রতি বদলি আদেশ পাওয়া ১২ সার্ভেয়ার-কানুনগোর বেশীরভাগই এলএ শাখার দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে জড়িত। উৎকোচ বাণিজ্য চালানোর লক্ষ্যেই বিভিন্ন তদবিরের মাধ্যমে এরা চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দায়িত্ব পেয়েছেন। বদলি আদেশের কারণে ভূমি অধিগ্রহণের বরাদ্দ নিয়ে সংঘবদ্ধ এই চক্রটির বাণিজ্যে ভাটা পড়বে। তাই বদলি আদেশ ঠেকাতে তারা তৎপর হয়ে উঠেছেন।
এ লক্ষ্যেই বদলি হওয়া সার্ভেয়ার কানুনগোরা তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি।
এলএ শাখার কর্মচারীরা জানান, বদলি হওয়া সার্ভেয়ার-কানুনগোদের মধ্যে নুর চৌধুরী ও শহীদুল ইসলাম মুরাদের এ ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে নগরীর চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি ও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সখ্যতা রয়েছে। তারাই মূলত চক্রটিকে বদলি আদেশ ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন।
সদ্য বদলি হওয়া সার্ভেয়ার-কানুনগোদের মধ্যে রয়েছেন নুর চৌধুরী, মজিবুর রহমান, শহীদুল ইসলাম মুরাদ, মো. আনোয়ার হোসেন, সুনীল কান্তি মহাজন, এস এম নাদিম, সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী, আশীষ চৌধুরী, ফেরদৌস খাঁন, আব্দুর রউফ চৌধুরী, আব্দুল কুদ্দুস ও সুশীল বিকাশ চাকমা।
এদের মধ্যে প্রথম নুর চৌধুরী ও শহীদুল ইসলাম মুরাদ এলএ শাখার দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় পরির্দশনে দেখা যায়, রোববার সকাল থেকেই কার্যালয়ে ছিল অনেকটাই সুনসান নিরবতা।
সার্ভেয়ার-কানুনগোদের মধ্যেও অনেকটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
সিসিটিভিগুলো লাগানো হয়েছে, এলএ শাখার প্রবেশমুখ, সার্ভেয়ার কক্ষ, কানুনগোদের কক্ষ ও বারান্দায়।
এর আগে, জেলা প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, বহিরাগতদের আনাগোনাসহ নানা অনিয়ম ঠেকাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে নয়টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। এলএ শাখার নতুন ক্যামেরাগুলো যুক্ত হওয়ায় এ সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫টিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৪
** চট্টগ্রামে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতির মহোৎসব