ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘কাজেম আলী মাস্টারের কথিত পরিবার স্কুল দখলের পাঁয়তারা করছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৪
‘কাজেম আলী মাস্টারের কথিত পরিবার স্কুল দখলের পাঁয়তারা করছে’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কাজেম আলী মাস্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠাতার বংশধররা দখলের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন কলেজটির পরিচালনা কমিটি।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা।



এর আগে শনিবার কাজেম আলী মাষ্টারের বংশধররা সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বাণিজ্যিকীকরণের অভিযোগ তুলেছিল। এর একদিনের মাথায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করল স্কুল পরিচালনা কমিটি।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও কলেজের অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ উমর ফারুক ।

স্কুলের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন,‘এই প্রতিষ্ঠান যখন উন্নয়নের স্বর্ণ শিখরে, যখন চারিদিকে সুখ্যাতি, সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে, সম্পদ ও অবকাঠামো বেড়েছে তখনই কাজেম আলী মাস্টারের কথিত পরিবার আবারও নতুন কাহিনী বানিয়ে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে এবং স্কুল দখলের পাঁয়তারা করছে। ’

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,‘এই স্কুলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও সরকারিকরণ বাধাগ্রস্থ করার জন্য কাজেম আলী পরিবারের গুটিকয়েক সদস্য বর্তমানে নানা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কাজেম আলীর বংশধররা কুখ্যাত সন্ত্রাসী বহু মামলার পলাতক আসামী এবং সম্প্রতি কিশোর ইমন হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী দিদারুল হক কাজেমীর নেতৃত্বে শাহরিয়ার খালেদ গং এ প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টায় রত আছে। স্কুলের বিরুদ্ধে কাজেমীর অনেক মিথ্যা মামলার স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতি মাসে অনেক টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ’

কাজেম আলী মাস্টার এ স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা নন দাবি করে পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বলেন,‘কাজেম আলী মাস্টার ১৮৮৫ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না। প্রধান শিক্ষক থাকার সুবাদে তিনি কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন।   ফলে এই স্কুলে তার সম্পত্তি হতে পারে না। ’

গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘কাজেম আলী মাস্টার অনগ্রসর মুসলিম সমাজকে ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কেনা জমিতে তিনি একটি হাইস্কুল চালু করেন। ইংরেজ বিদ্বেষী স্থানীয়রা তিনবার এই স্কুলটি পুড়িয়ে দেয়। এসময় তিনি বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় তা পুনর্গঠন করেন। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা ভুল তথ্য দিয়ে ঘর-বাড়ি বন্ধক রেখে স্কুল প্রতিষ্ঠার যে তথ্য দিয়েছিল তা সম্পূর্ণ ভুল ও বিভ্রান্তিকর। ’
 
গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘১৯৯১ সালে এই স্কুলটিকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় কাজেম আলী মাস্টারের পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত দিদারুল হক কাজেমী ওরফে কিরিচ বাবুল। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মুহিব্বুর রহমানকে জিম্মি করে সকল নিয়মকানুন ভঙ্গ করে পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন এবং তারপরই শুরু হয় নানা অপকর্ম। সে কমিটির সদস্য হয়ে নিজের ইচ্ছেমতো স্কুল চালাতে উদ্যোগী হয়। এছাড়া কিরিচ বাবুল স্কুলের উত্তর-পশ্চিম কর্নার দখল করে রেখেছে। যা আজো স্কুলের অধীনে আনা যায়নি। ’

কলেজ ক্যাম্পাসে কোন কমিউনিটি সেন্টার এবং ভবিষ্যতেও হবে না দাবি করে তিনি বলেন,‘সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সহযোগিতায় নালার পাশে কিছু অংশ উদ্ধার করে তাতে ছোট পরিসরে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছি। যা স্কুল ক্যাম্পাস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ ভবনের নির্মাণের পূর্ব জায়গাটি ঘোর অন্ধকার থাকায় এখানে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য ছিল। সন্ধ্যা নেমে এলেই রিক্সারোহীদের ব্যাগ ছিনতাই ও ছুরি মেরে পালিয়ে এখানেই আশ্রয় নিত। এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের অনুরোধে এই অংশটি আলোকিত ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে একটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এইসব দোকান থেকে অর্জিত টাকায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। ’

গিয়াস উদ্দিন বলেন,‘আমরা শিক্ষক, সমাজে আলো বিতরণ করি অথচ আমাদের প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে কাজেম আলী মাস্টারের পরিবারের কতিপয় সদস্য যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে তাতে প্রতিষ্ঠান যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে তেমনি আমরাও সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হব। ’

তিনি সকল প্রকার অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করার আহবান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিচালনা কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন, মো. মুজিব, আবদুল হান্নান, মনোয়ারা বেগম, শিক্ষক মোবারক আহমদ শরীফ চৌধুরী, মোকাম্মেল হোসেন, সুকুমার রঞ্জন, সামিয়া সুলতানা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।