ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আদালত

‘লালসালু ঘেরা আদালতে শিশুর বিচার নয়’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
‘লালসালু ঘেরা আদালতে শিশুর বিচার নয়’

ঢাকা: শিশু আইনের বাইরে গিয়ে প্রচলিত আদালতের কাঠগড়া ও লালসালু ঘেরা আদালতে শিশু আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলছেন, ‘এটি শিশু ‌আইনের লঙ্ঘন’।

‘শিশুদের জন্য আদালত কক্ষের বাইরে আলাদা ওয়েটিং রুমের ব্যবস্থা, শিশু কল্যাণের কথা বিবেচনা করে শিশুকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে’।

‘যেসব আদালতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সুবিধা আছে সেসব আদালতে ভিডিও লিংক ব্যবহার করে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে শিশুর কার্যত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে’।


 
এ অবস্থায় ‘শিশু আইনের বিধান প্রতিপালন ও শিশু আদালতের অবস্থান এবং শিশুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে’ নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করেছেন। যার অনুলিপি আইন সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজসহ সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ‘শিশু আইন, ২০১৩ এর ১৬ ধারা অনুসারে প্রত্যেক জেলা এবং মেট্টোপলিটন এলাকার এক বা একাধিক অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতকে শিশু আদালত হিসাবে নির্ধারণের বিধান রয়েছে’।

‘সম্প্রতি অত্র কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটসের গোচরীভূত হয়েছে যে, শিশু আইন, ২০১৩ বলবৎ থাকা সত্ত্বেও প্রচলিত আদালতের কাঠগড়া ও লালসালু ঘেরা আদালত কক্ষে শিশু আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যা শিশুর জন্য উপযুক্ত নয় এবং শিশু আইনের লঙ্ঘন’।
 
আইনের ১৭ (৪) ধারার বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সাধারণত যে সকল দালান বা কামরায় এবং যে সকল দিবস ও সময়ে প্রচলিত আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, তা ছাড়া যতোদূর সম্ভব অন্য কোনো দালান বা কামরায়, প্রচলিত আদালতের মতো কাঠগড়া ও লাল সালু ঘেরা আদালত কক্ষের পরিরবর্তে একটি সাধারণ কক্ষে এবং অন্য কোনো দিবস ও সময়ে প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তি ছাড়া শুধুমাত্র শিশুর ক্ষেত্রে শিশু আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠানের বিধান থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে তা প্রতিপালিত হচ্ছে না’।
 
‘শিশু আদালতের অধিবেশনের জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা না গেলে পর্দা দিয়ে এজলাসকক্ষ, ডক, কাঠগড়া ঢেকে শিশুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা সম্ভব না হলে আদালতের বিচারক তার খাস কামরায় শিশু আদালতের বিচার কার্য পরিচালনা করবেন। এছাড়া শিশু আদালতের পাশে শিশুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সম্মত একটি অপেক্ষা কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন মামলার শুনানির আগে-পরে শিশুরা সেখানে অবস্থান করতে পারে’।
 
১৯ ধারার বিষয়ে বলা হয়, ‘শিশু আদালতের কক্ষের বিন্যাস, সাজসজ্জা ও আসন ব্যবস্থা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, বিচার চলাকালে শিশুর মা বাবা এবং তাদের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বৈধ অভিভাবক বা ক্ষেত্রমতে বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা এবং প্রবেশন কর্মকর্তা ও তার আইনজীবীরা যতোদূর সম্ভব কাছাকাছি বসতে পারবেন’।
 
‘আদালতে শিশুর জন্য উপযুক্ত আসন এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ক্ষেত্রমতো, বিশেষ ধরনের আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুর বিচার চলাকালে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ বা আদালতের কোনো কর্মচারী আদালত কক্ষে পেশাগত বা দাফতরিক ইউনিফরম পরবেন না’।

সার্কুলারে আরও বলা হয়, ‘২২ (২) ধারা মতে, আদালত শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের জন্য তাদের উপস্থিতি প্রয়োজন না হলে শিশুর সম্মতি সাপেক্ষে বিচার চলাকালে যেকোনো সময় তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। তবে শিশুর অভিভাবক, প্রবেশন কর্মকর্তা ও আইনজীবীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। বর্ণিত অবস্থার প্রেক্ষিতে শিশুর কল্যাণের বিষয় বিবেচনায় শিশুকে ব্যক্তিগত হাজিরা হতে অব্যাহতি প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।